মা ও মুক্তিযুদ্ধ

প্রবীর বড়ুয়া চৌধুরী
 | প্রকাশিত : ২৪ ডিসেম্বর ২০১৮, ১১:১৬

পৃথিবীর সব মা একই রকম। নিজের প্রয়োজনটা কখনোই বলার অভ্যেস নেই তাদের । আমাদের মা একই রকম। নিজের প্রসঙ্গ এলেই, চুপসে যান। পুরো জীবন লড়াই করেছেন আমাদের জন্য, কিন্তু দেখে বোঝার উপায় নেই। নিজেরটা লুকিয়ে রাখতে পারলেই যেন, শান্তি।

আমার মায়ের জীবনের সবচেয়ে উল্লেখ্যযোগ্য ঘটনাটি, আমরা পরিবারের সদস্যরা আর গুটিকয়েক আত্মীয় জানে।

মা-বাবার বিয়ে হয়েছিল ১৯৭১ এর ১২ মার্চ। অর্থ্যাৎ, স্বাধীনতা যুদ্ধ শুরু হবার দুই সপ্তাহ আগে। মায়ের বয়স তখন মাত্র ১৭ বছর। যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর আমাদের করল গ্রামের ছেলেরা যখন মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেয়, তখন তাদের একটি নিরাপদ স্থানের প্রয়োজন হয় অস্ত্র জমা রাখার জন্য। সবাই মিলে তখন আমাদের বাড়িটিকে নির্বাচন করে।

আর, এই অস্ত্র রাখার দায়িত্ব পড়ে আমার মায়ের ওপর। যার বিয়ে হয়েছিল যুদ্ধের মাত্র কয়েকদিন আগে। প্রায় রাতেই গ্রেনেড, রাইফেলসহ নানা অস্ত্র কাঁথায় পেঁচিয়ে বাড়ির দোতলায় রেখে দিতেন। সময়মত আবার এসে নিয়ে যেতেন মুক্তিযোদ্ধারা। বাড়ির আশে পাশে তখন পাঞ্জাবি, বিহারী আর রাজাকারের আনাগোনা। আজও ভাবি, আমার মা মাত্র ১৭ বছর বয়সে কোথায় এত সাহস পেয়েছিলেন?? আসলে আমাদের স্বাধীনতার ইতিহাস এটাই।

নিজের জীবনের কথা না ভেবে, নতুন সংসারের কথা চিন্তা না করে, স্বাধীনতার স্বপ্নে মানুষ কতটা সাহসী হয়ে উঠতে পারে তা মাকে দেখে বুঝি। আমার মায়ের মত এরকম হাজারো মা বোন ছিল যারা একাত্তরে মৃত্যুর তোয়াক্কা না করে রনাঙ্গনের মুক্তিযোদ্ধাদের সাহায্য করে ছিলেন। এসব মায়েরা কখনই কোনো স্বীকৃতি পাওয়ার আশা করেননি।

যুদ্ধের পরে মুক্তিযোদ্ধারা মাকে তার কাজের স্বীকৃতি দেয়ার কথা বললেও, উনি কোনো আগ্রহ দেখাননি। বরং, তার এই কাজের কথা কাউকে বলতেও, চাননা তিনি।

এমন মায়ের সন্তান হয়ে আসলেই, আমার গর্ব হয়। আমি মুক্তিযুদ্ধের সময় জন্ম নেইনি, তাতে কি? আমার জন্মভূমির জন্মে, আমার মায়েরও অবদান আছে। মায়ের জন্মদিনও এই বিজয়ের মাসে, ২১ ডিসেম্বর।

জননী থেকে জন্মভূমি, পুরোটাই আমার।

লেখক: সাংবাদিক

সংবাদটি শেয়ার করুন

ফেসবুক কর্নার বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :