যশোরে শরিকদের সঙ্গে বিএনপির ‘দূরত্ব’

প্রকাশ | ২৪ ডিসেম্বর ২০১৮, ১৯:২১

আবদার রহমান

যশোরের ছয়টি আসনের মধ্যে দুটি শরিকদেরকে ছেড়ে দেওয়ার বিষয়টি ভালোভাবে নেয়নি বিএনপির স্থানীয় নেতা-কর্মীরা। এর মধ্যে একটিতে প্রকাশ্যেই প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছেন তারা। অন্যটিতেও রয়েছে অভিমান।

যশোর-২ আসনে বিএনপি মার্কা দিয়েছে জামায়াতকে, যশোর-৫ আসনে ধানের শীষ দিয়েছে জমিয়তে ওলামায়ে ইসলামকে। 

এদের মধ্যে জামায়াত নেতা আবু সাইদ মুহাম্মাদ শাহাদৎ হুসাইন নাশকতার মামলায় কারাগারে, আর জমিয়ত নেতা মোহাম্মদ ওয়াক্কাসের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা থাকায় তিনি আত্মগোপনে। তাকে মার্কা দেওয়ায় বিএনপির ১০ হাজার নেতা-কর্মী পদত্যাগ করেছেন।

বাকি চারটি আসনে বিএনপির প্রার্থীদের মধ্যে পুরোদমে প্রচারে আছেন যশোর-৩ আসনের অনিন্দ্য ইসলাম অমিত, যশোর-৪ আসনের টি এস আইয়ুব পুরোদমে প্রচারে। আর যশোর-১ আসনের মফিকুল ইসলাম তৃপ্তি এবং যশোর-৬ আসনের আমজাদ হোসেনের পক্ষে প্রচার তুলনামূলক কম।

অন্যদিকে প্রতীক বরাদ্দের পর থেকেই যশোরের ছয়টি আসনই চষে বেড়াচ্ছেন আওয়ামী লীগ তথা নৌকার প্রার্থীরা। জেলার কোথাও শরিক দলকে ছাড় দেয়নি তারা। সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত সভা সমাবেশে সরব তারা। যাচ্ছেন ভোটারদের দুয়ারেও।

জেলার ছয়টি আসনে লড়ছেন মোট ৩৭ জন প্রার্থী। নৌকা আর ধানের শীষ ছাড়া অন্য প্রতীকের প্রার্থীরা আলোচনায় নেই সেভাবে।

যশোর-১

শার্শা উপজেলা নিয়ে গঠিত আসনে ১৯৯১ সাল থেকে একবারই হেরেছে আওয়ামী লীগ। তবে ২০০৮ সালে জিতে আবার দুর্গের দখল নেয় ক্ষমতায়ন দল। দলটির প্রার্থী বর্তমান সংসদ সদস্য ধনকুবের শেখ আফিল উদ্দিন। প্রতিদিনই তিনি গণসংযোগ করছেন। চলছে পথসভা, জনসভা, লিফলেট বিতরণ ও মাইকিং।

আফিল উদ্দিন ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘উপজেলা আওয়ামী লীগ ও সকল সহযোগী সংংগঠন নৌকার পক্ষে কাজ করে যাচ্ছে৷ আমি এবারও বিপুল ভোটে বিজয়ী হবো ইনশাল্লাহ।’

বিএনপি এখানে প্রার্থী করেছে সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলের সময় সংস্কারপন্থী হিসেবে পরিচিত হয়ে উঠা মফিকুল হাসান তৃপ্তিকে। প্রচার কম থাকার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমাকে বাধা দেওয়া হচ্ছে। পোস্টার ছিঁড়ে ফেলা হচ্ছে, মাইক ভাঙচুর, কর্মীদের মারপিট করা হচ্ছে।’

তবে তৃপ্তির অভিযোগ নাকচ করে উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি সিরাজুল হক বলেন, ‘আমরা প্রতিদিন সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত পথসভা, জনসভা, মাইকিং, লিফলেট বিতরণ করছি। বিএনপির অভিযোগ অমূলক। তাদের কোনো রকম বাধা দেওয়া হচ্ছে না।’

যশোর-২

ঝিকরগাছা ও চৌগাছা উপজেলা নিয়ে গঠিত সংসদীয় আসনে নিজের প্রার্থী না দিয়ে বিএনপি ছাড় দিয়েছে জামায়াতকে। তবে ধানের শীষের প্রার্থী আবু সাইদ মুহাম্মাদ শাহাদৎ হোসাইন নাশকতার মামলায় গ্রেপ্তার হয়েছেন। এর আগে আসনটিতে বেশ ভালো প্রচার চলছিল দলটির। কিন্তু এখন আর সেটি নেই।

এই আসনে আওয়ামী লীগ দিয়েছে নতুন মুখ। অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তা নাসির উদ্দিন প্রথমবারের মতো প্রার্থী হয়ে চষে বেড়াচ্ছেন গোটা এলাকা। ঢাকা টাইমসকে তিনি বলেন, ‘বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোট চাচ্ছি। প্রতিদিন বেশ কয়েকটি পথসভা ও জনসভায় যোগ দিচ্ছি। সর্বত্রই অভূতপূর্ব সাড়া পাচ্ছি।’

যশোর-৩

সদর আসনে দুই প্রার্থীই বেশ আলোচিত। আওয়ামী লীগের প্রার্থী বর্তমান সংসদ সদস্য কাজী নাবিল আহমেদ কাজী গ্রুপের পরিচালক। বিএনপির প্রার্থী অনিন্দ্য ইসলাম অমিত আলোচিত তার বাবা প্রয়াত নেতা তরিকুল ইসলামের কারণে। ডাকসাইটে প্রয়াত নেতার অনুসারীরা অমিতকে জেতাতে আঁটঘাঁট বেঁধে নেমেছেন।

দুই পক্ষই প্রতিদিন একাধিক পথসভা-জনসভা করছে, সমর্থকরা বিতরণ করছে লিফলেট, বাড়ি বাড়ি গিয়ে চাইছে ভোট। বেশ কিছু এলাকায় হাঙ্গামাও হয়েছে।

কাজী নাবিল আহমেদ বলেন, ‘মানুষের বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোট চাচ্ছি।  মানুষের স্বতঃস্ফূর্ত সাড়াও পাচ্ছি।’

অমিত বলেন, ‘নানা প্রতিবন্ধকতা রয়েছে। পোস্টার ছিঁড়ে ফেলা হচ্ছে। নির্বাচনী কার্যালয় ভাঙচুর করা হচ্ছে। সভায় বোমা হামলা করা হয়েছে। কর্মীদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে।’

তবে অভিযোগ অস্বীকার করে নৌকার প্রার্থী নাবিল বলেন, ‘বিএনপির অভিযোগ নতুন নয়, পুরনো। তাদের কোনো রকম বাধা দেওয়া হচ্ছে না বরং তারা নাশকতা করছে।’

যশোর-৪

অভয়নগর-বাঘারপাড়া উপজেলা ও সদর উপজেলার বসুন্দিয়া ইউনিয়ন নিয়ে আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী রণজিত কুমার রায় ও বিএনপির টি এস আইয়ুব। দুই পক্ষই জোরেশোরে প্রচার চালিয়ে যাচ্ছে।

আইয়ুবের অভিযোগ, তাঁর ৩১টি নির্বাচনী কার্যালয় ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে। ৩৮ জন কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। মাইক ভাঙচুর করা হচ্ছে, রাতে পোস্টার পুড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে।

তবে রণজিত কুমার রায়ের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক ইব্রাহিম হোসেন বিশ্বাস বলেন, ‘বিএনপির প্রার্থীর অভিযোগ ঠিক নয়। কোনো পোস্টার পোড়ানো এবং নির্বাচনী কার্যালয় ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের খবর আমি শুনিনি।’

যশোর-৫

মনিরামপুর আসনে ২০ দলের প্রার্থী জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের একাংশের নেতা মুহাম্মদ ওয়াক্কাস বিএনপির বিদ্রোহের মুখে পড়েছেন। তাকে মার্কা দেওয়ায় পদত্যাগপত্র দিয়েছেন ১০ হাজার নেতা-কর্মী। বিএনপি ও জামায়াতের নেতা-কর্মীরাও তাঁর পক্ষে প্রচারে নেই।

ওয়াক্কাসের ছেলে রশিদ আহমেদ বলেন, ‘শঙ্কা থেকে আমরা প্রচার-প্রচারণায় যাচ্ছি না। পোস্টার টাঙানো হয়নি। মাইকিংও করা হচ্ছে না। তবে ধানের শীষে ভোট দেওয়ার জন্য ভোটারদের বিভিন্ন মাধ্যমে বার্তা পাঠানো হচ্ছে।’

২০০১ সালে জেতা ওয়াক্কাস ২০০৮ সালে হারেন বেশ বড় ব্যবধানে। আর আত্মগোপনে থাকা জমিয়তের এই নেতা ভোটের মাঠে কতটা ভালো করতে পারবেন, এ নিয়ে কথা হচ্ছে এলাকায়।

আওয়ামী লীগের প্রার্থী বর্তমান সাংসদ স্বপন ভট্টাচার্য প্রতিদিন গণসংযোগ, জনসভা-পথসভায় ব্যস্ত।

২০১৪ সালের নির্বাচনের পর মনিরামপুরে সংখ্যালঘু নির্যাতনের ঘটনা ব্যাপক আলোচিত ছিল। এবার প্রশাসন এই বিষয়টি নিয়ে বেশ সতর্ক।

যশোর-৬

কেশবপুর উপজেলা নিয়ে গঠিত সংসদীয় আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ইসমত আরা সাদেক আর বিএনপির আবুল হোসেন আজাদ। তার স্বামী এইচ কে সাদেকও এই আসনের সংসদ সদস্য ছিলেন।

বিএনপির প্রার্থী আজাদের অভিযোগ, তারা নির্বাচনের সুষ্ঠু পরিবেশ পাচ্ছেন না। পুলিশ দিয়ে কর্মীদের ভয়ভীতি দেখানো হচ্ছে। অন্তত ৫০ জন কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এক রকম অবরুদ্ধ হয়ে আছি।’

তবে কেশবপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি তপন কুমার ঘোষ বলেন, ‘আপনি কেশবপুরে এসে দেখেন ধানের শীষের কয়টি পোস্টার আর নৌকার কয়টি পোস্টার টাঙানো আছে। বিএনপির অভিযোগ ঠিক নয়।’