মৌলভীবাজার

তিনটি ঘটনায় আক্রান্ত ক্ষমতাসীনরাই

প্রকাশ | ২৫ ডিসেম্বর ২০১৮, ১০:১৫ | আপডেট: ২৫ ডিসেম্বর ২০১৮, ১২:৪৫

মাহবুবুর রহমান রাহেল

ধরপাকরের অভিযোগের মধ্যে মৌলভীবাজারের চারটি আসনে বিএনপির প্রার্থীরা মৌলভীবাজারের চারটি আসনেই ব্যাপক প্রচার চালাচ্ছেন। এই জেলায় সহিংসতার ছোটখাটো যে দু-একটি ঘটনা ঘটেছে, সেখানে আক্রান্ত হয়েছে ক্ষমতাসীন দলই।

জেলার চারটি আসনের মধ্যে তিনটিতে ঘটা একটি করে ঘটনায় অবশ্য ভোটের পরিবেশ নিয়ে তেমন কোনো উদ্বেগ তৈরি হয়নি। সমর্থকরা দল বেঁধে তাদের প্রার্থীদের জেতাতে যাচ্ছেন ভোটারদের কাছে। 

প্রতিদিন সকাল থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত প্রার্থী এবং তার সমর্থকরা ছুটে যাচ্ছেন ভোটারদের কাছে। অতীতে রায় নিয়ে কী কী করেছেন, সেটা তুলে ধরছেন। পাশাপাশি ভবিষ্যতে কী করতে যাচ্ছেন, সেটাও বলছেন।

মৌলভীবাজার-১

বড়লেখা ও জুড়ী আসনের নৌকার প্রার্থী বর্তমান সংসদ সদস্য শাহাব উদ্দিন পুরনো রাজনীতিক। তিনি এই আসন থেকে জিতেছেন দুইবার। হেরেছেন একবার। তার প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপির নাছির উদ্দিন আহমদ মিঠু নতুন প্রার্থী, প্রথমবারের মতো ভোটের লড়াইয়ে।

আসনটিতে বিএনপি ১৯৯১ সালে লড়াই করতে পারেনি। ওই বছর লাঙ্গল নিয়ে জেতা এবাদুর রহমান চৌধুরীকে প্রার্থী করে ২০০১ সালে জয় পায় দলটি। তবে ২০০৮ সালে সবশেষ অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনে ৩৬ হাজার ৯৫২ ভোটে হেরে রাজনীতি থেকে ছিটকে পড়েন এবাদুর।

দুটি উপজেলাতেই চলছে নির্বাচনী সভা, গণসংযোগ ও লিফলেট বিতরণ করেন। এর মধ্যে কিছু অনাকাক্সিক্ষত ঘটনা ঘটেছে যার প্রতিটিতেই আক্রান্ত হয়েছে ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীরা।

এই আসনে একটি সহিংসতার ঘটনা উত্তেজনা তৈরি করলেও পরে তা স্থিমিত হয়ে আসে। ১৯ ডিসেম্বর শাহাব উদ্দিনের নির্বাচনী প্রচার থেকে ফেরার পথে জুড়ী উপজেলা যুবলীগ নেতা আহমেদ কামাল অহিদের ওপর ককটেল হামলা ও মোটরসাইকেল পুড়িয়ে দেওয়া হয়।

এই ঘটনায় বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের ৫২ নেতাকর্মীর নাম উল্লেখ করে এবং শতাধিক অজ্ঞাত নেতাকর্মীকে আসামি করে তিনটি মামলা হয়। উপজেলা বিএনপির সভাপতিসহ ১২ নেতাকর্মীকে এসব মামলায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

মৌলভীবাজার-২

কুলাউড়া উপজেলা নিয়ে গঠিত আসনটি এবার বিশেষভাবে আলোচিত এই কারণে যে, নৌকা ও ধানের শীষ নিয়ে লড়া দুই নেতাই পক্ষ বদল করেছেন। মহাজোটের শরিক হিসেবে নৌকা পেয়েছেন বিকল্পধারার এম এম শাহীন। তিনি এই আসনে এর আগে লড়েছেন ধানের শীষ নিয়ে। আর ধানের শীষ নিয়ে লড়ছেন আওয়ামী লীগের সাবেক নেতা সুলতান মোহাম্মদ মনসুর আহমদ। তিনি নৌকা নিয়ে লড়েছেন তিনটি নির্বাচনে। সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে শেখ হাসিনার নেতৃত্বের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে দলে নিজের অবস্থানই হারান।

এম এম শাহীন ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘৩৬০ আউলিয়ার এই পবিত্র মাটির মানুষ নৌকা প্রতীকে ভোট দিয়ে আমাকে বিপুল ভোটের ব্যবধানে বিজয়ী করবে।’

মনসুর বলেন, ‘দেশের মানুষ পরিবর্তন চায়। মুক্তিযুদ্ধের মতোই মানুষ সংগঠিত হয়েছে। তারা ধানের শীষে ভোট দিয়ে আমাকে জয়ী করবে।’

মৌলভীবাজার-৩

সদর ও রাজনগর উপজেলা নিয়ে গঠিত আসনটিতেও একটি ঘটনায় আক্রান্ত হয়েছে ক্ষমতাসীনরা। গত ২০ ডিসেম্বর কমলগঞ্জ পৌরসভার সামনে নৌকার পক্ষে প্রচার চালানো একটি রিকশা ভাঙচুর করে আগুন দেওয়া হয়।

এখান থেকে ভোটে লড়তেন বিএনপির প্রয়াত অর্থমন্ত্রী এম সাইফুর রহমান। জিতেছেন দুইবার, হেরেছেনও সমসংখ্যক নির্বাচনে। ফলে কোনো দলের একক অবস্থানের কথার সুযোগ নেই। এই আসন থেকে এবার বিএনপির প্রতীক পেয়েছেন সাইফুরপুত্র এম নাসের রহমানকে।

সবশেষ ২০০৮ সালের নির্বাচনে সাইফুর এই আসন থেকে ৩১ হাজার ৬০৪ ভোটে হারেন। এই বড় ব্যবধান ঘুচিয়ে নাসের কতটা ভালো করতে পারেন, এ নিয়ে আছে আলোচনা।

সাইফুর রহমানকে ১০ বছর আগে হারানো সৈয়দ মহসিন আলী আর বেঁচে নেই। তার অবর্তমানে সেখানে নৌকা পেয়েছেন জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি নেছার আহমদ। গণসংযোগে তিনি বলছেন, ‘নৌকায় ভোট দিলে দেশ ও জনগণের ভাগ্যের উন্নয়ন হয়। বর্তমানে দেশে উন্নয়নের জোয়ার বইছে। এই ধারা অব্যাহত রাখতে হবে।’

নাসের রহমান বলছেন, সুষ্ঠু নির্বাচন হলে তার বাবার স্মৃতির সম্মান রক্ষায় তাকেই ভোট দেবে জনগণ। তবে নির্বাচনী প্রচারে নেমে বাধার মুখে পড়েছেন বলে অভিযোগ তার। ব্যাপারে ১৮ ডিসেম্বর রিটার্নিং কর্মকর্তাকে চিঠিও দিয়েছেন তিনি।

তবে নাসেরের জন্য বিপত্তি নিয়ে এসেছে আরেকটি ঘটনা। রাজনগরের কামারচাক ইউনিয়নের দুইবারের চেয়ারম্যান নাজমুল হক কয়েকশ নেতাকর্মী নিয়ে আওয়ামী লীগে চলে গেছেন।

মৌলভীবাজার-৪

এই আসনেও ঘটেছে একটি সহিংসতা। গত ২০ ডিসেম্বর কমলগঞ্জ পৌরসভার সামনে নৌকার পক্ষে প্রচার চালানো রিকশা ভাঙচুর করে আগুন দেওয়া হয়।

শ্রীমঙ্গল ও কমলগঞ্জ উপজেলা নিয়ে গঠিত আসনটিতে ভালো করার বিষয়ে বিএনপিতেই আছে সংশয়। আওয়ামী লীগের আব্দুস শহীদ এই আসন থেকে পাঁচবার ভোটে দাঁড়িয়ে জিতেছেন প্রতিবার। এবার ষষ্ঠ জয়ের আশায় তিনি। ২০০৮ সালে ভোটের ব্যবধান ছিল ৫৫ হাজার ১৪১ ভোট।

এই নির্বাচনী আসনে দুই পক্ষই চালাচ্ছে নির্বিঘœ প্রচার। ব্যানার, পোস্টার সাঁটানো হয়েছে ব্যাপকভাবে। ব্যবহার হচ্ছে মাইকিং, লিফলেট ও ব্যানার।

আবদুস শহীদ তার গত দুই মেয়াদে প্রত্যন্ত এলাকাতেও বিদ্যুতায়ন করেছেন। চা শ্রমিকদের বেতন বৃদ্ধিসহ নানা সুযোগ-সুবিধা বাড়িয়েছেন। সড়ক যোগাযোগ বেশ উন্নত হয়েছে এই সময়। কমলগঞ্জ হয়েছে পৌরসভা। এসব কাজের সুফল ভোটে পড়ার আশায় তিনি। বলছেন, ২০০৮ সালের চেয়ে বেশি ভোটে জিতবেন।

বিএনপির প্রার্থী মুজিবুর রহমান চৌধুরীর অভিযোগ, পুলিশ তার নেতাকর্মীদের গণহারে গ্রেপ্তার করছে। আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের বাধায় তার তিনটি উঠান বৈঠক প- হয়েছে। ভয়ে জনসংযোগেও যেতে চাইছেন না তারা।