শেরপুরের তিনটি আসনেই উত্তেজনা

সুজন সেন, শেরপুর
| আপডেট : ২৬ ডিসেম্বর ২০১৮, ১১:৪৮ | প্রকাশিত : ২৬ ডিসেম্বর ২০১৮, ০৮:৫০

ময়মনসিংহ বিভাগের শেরপুরে তিনটি সংসদীয় আসনেই ভোটের পরিবেশ উত্তপ্ত। হামলা, পাল্টা হামলা, অভিযোগ পাল্টা অভিযোগের মধ্যে চলছে প্রচার।

সবশেষ অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন ২০০৮ সালে তিনটি আসনেই বড় ব্যবধানে জয়ী আওয়ামী লীগ চাইছে আসনগুলো ধরে রাখতে। আর বিএনপি চাইছে জয় ছিনিয়ে নিতে।

তিনটি আসনের মধ্যে একটিতে বিএনপির প্রার্থী একাধিকবার হামলার শিকার হওয়ার অভিযোগ করেছেন। আরেকটি আসনে হামলার শিকার হওয়ার অভিযোগ করছে আওয়ামী লীগ। এই ঘটনায় মামলার কারণে বিএনপির নেতাকর্মীরা অনেকটাই মাঠে নেই। আরেকটি আসনে জমে উঠেছে চাচা-ভাতিজার লড়াই।

শেরপুর-১

সদর আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী গত চারটি নির্বাচনে জয়ী আতিউর রহমান আতিক। বিএনপি প্রার্থী করেছে ২৫ বছর বয়সী সানসিলা জেবরিন প্রিয়াঙ্কাকে। জাতীয় পার্টির ইলিয়াস উদ্দিন প্রার্থী হলেও পরে ভোট থেকে সরে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন।

বিগত পৌরসভা ও ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে প্রার্থী মনোনয়ন, বিভিন্ন কমিটি গঠন নিয়ে অসন্তোষ ও জেলা পরিষদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে দলের ভেতর আতিকবিরোধী একটি বলয় তৈরি হয়। ওই বলয়ের নেতাকর্মীরা ‘আতিক ছাড়া নৌকা’র দাবি তুলে মাঠ গরম করলেও শেষ পর্যন্ত আতিকই দলীয় মনোনয়ন পান।

গত ২৭ নভেম্বর আতিকের মনোনয়ন বাতিলের দাবিতে বিক্ষোভ ও মাথায় কাফনের কাপড় বেঁধে আমরণ অনশন কর্মসূচি ঘোষণা করেন সদর উপজেলা চেয়ারম্যান ছানোয়ার হোসেন ছানু ও তার সমর্থকরা। এ সময় আওয়ামী লীগের হাজারো নেতাকর্মী আতিকবিরোধী স্লোগান দেয়। তবে পরদিন কর্মিসভা করে তারাই নৌকার প্রার্থীর প্রতি সমর্থন জানায়।

১৯ ডিসেম্বর রাতে শহরের খরমপুর এলাকায় জেলা কৃষক লীগের কার্যালয়ে আয়োজিত এক সভায় ছানু আতিকের পক্ষে নামার ঘোষণা দিয়ে বলেন, ‘দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের পরামর্শে নৌকাকে বিজয়ী করতে আমরা আজ থেকে মাঠে নামলাম।’

২০০১ ও ২০০৮ সালে এই আসনটি বিএনপি ছেড়ে দেয় জোটের শরিক জামায়াতকে। প্রার্থী হন মানবতাবিরোধী অপরাধী মুহাম্মদ কামারুজ্জামান। তবে তার ফাঁসি কার্যকরের পর জামায়াত আর আসনটি দাবি করেনি।

বিএনপি নেতা হযরত আলীকে প্রথমে দেওয়া হয় মনোনয়নের চিঠি। কিন্তু খেলাপি ঋণ থাকায় তার প্রার্থিতা বাতিল হয়। পরে তার মেয়ে প্রিয়াঙ্কাকে দেওয়া হয় মার্কা।

ভোটে নেমে একাধিক দিন হামলার শিকার হওয়ার অভিযোগ করেছেন প্রিয়াঙ্কা। সোমবারও তার গাড়ির কাচ ভাঙা হয়েছে। আর ফেসবুক লাইভে এসে প্রধানমন্ত্রীর কাছে তিনি জীবনের নিরাপত্তা চেয়েছেন।

২০০৮ সালে এই আসনে আতিক জেতেন এক লাখ ৩৬ হাজার ২৩১ ভোট পেয়ে। বিএনপি-জামায়াত জোটের প্রার্থী কামারুজ্জামানের পক্ষে পড়ে এক লাখ ১০ হাজার ৭০ ভোট।

শেরপুর-২

নকলা ও নালিতাবাড়ী উপজেলা নিয়ে গঠিত আসনটি শেরপুরের সবচেয়ে আলোচিত। কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী এখানে নৌকা মার্কার প্রার্থী। তিনি চারবার জিতেছেন। ২০০১ সালে কেবল হেরে যান আড়াই হাজারেরও কম ভোটে। তবে পরের নির্বাচনে জেতেন ৮১ হাজার ৩৪৬ ভোটের ব্যবধানে।

২০০৮ সালে এক লাখ ৫৬ হাজার ৯৭৩ ভোট পান মতিয়া। আর বিএনপির জাহেদ আলী চৌধুরীর পক্ষে পড়ে ৭৫ হাজার ৬২৭ ভোট।

মতিয়ার বিরুদ্ধে ধানের শীষ নিয়ে লড়ছেন ফাহিম চৌধুরী। প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর চেয়ে আওয়ামী লীগ নেত্রী বেশি চিন্তিত দলের ঐক্য নিয়ে। এই আসনে বদিউজ্জামান বাদশার সঙ্গে কৃষিমন্ত্রীর পুরনো দ্বন্দ্ব। এটা ঘোচাতে পারলে তার জয় নিশ্চিতই বলা যায়।

মতিয়াকে এলাকার উন্নয়নের কা-ারি আখ্যা দিয়ে স্থানীয় বাসিন্দা বাদল মিয়া ও গোপাল সরকার বলেন, নালিতাবাড়ী গারো পাহাড় অধ্যুষিত এলাকা। যে কারণে সব সময় এই উপজেলাটি অবহেলিত অবস্থায় ছিল। মতিয়ার হাত ধরে নকলা-নালিতাবাড়ীতে হাজার কোটি টাকার উন্নয়ন হয়েছে।

নাকুগাঁওকে স্থলবন্দর হিসেবে প্রতিষ্ঠা, মধুটিলা ইকোপার্ক স্থাপন, ভোগাই ও চেল্লাখালীতে তিনটি রাবার ড্যাম তৈরি, নালিতাবাড়ী শহর রক্ষা বাঁধ নির্মাণ, শহীদ আব্দুর রশিদ মহিলা ডিগ্রি কলেজ প্রতিষ্ঠা, নকলা থেকে নাকুগাঁও পর্যন্ত ২৯ কিলোমিটার মহাসড়ক তৈরিসহ ৬০টি উন্নয়ন প্রকল্পের কথা তুলে ধরে ভোট চাইছেন মতিয়া অনুসারীরা।

নকলা উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডের সাবেক কামান্ডার আবুল মনসুর বলেন, ‘কৃষিমন্ত্রীর জন্যই নকলা ও নালিতাবাড়ীর উন্নয়ন ত্বরান্বিত হয়েছে। যা আগামী প্রজন্মকে কয়েক ধাপ এগিয়ে রাখবে। যে কারণে এবারও এ আসনটি আওয়ামী লীগের দখলে থাকবে। এখানে নৌকাই শেষ কথা।’

প্রচার চলাকালে নকলা ও নালিতাবাড়ীতে মতিয়ার প্রচারকেন্দ্রে হামলা ও ভাঙচুর হয়েছে। আর এই ঘটনায় মামলার আসামি হওয়ার পর বিএনপি প্রার্থী ও কর্মী-সমর্থকরা এখন অনেকটাই নিষ্ক্রিয়।

গত ১৪ ডিসেম্বর নকলা উপজেলার টালকি ইউনিয়নের মধ্যপোয়াবাগ এলাকার রামেরকান্দি মোড়ে আওয়ামী লীগের নির্বাচনী অফিসে হামলায় ছয়জন গুরুতর আহত হয়। বিএনপির কর্মীদের সঙ্গে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ায় আরও অন্তত ২০ জন আহত হয়। এ সময় পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে ১৮ রাউন্ড রাবার বুলেট নিক্ষেপ করে। এ ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে পুলিশ আটজন বিএনপির নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তর করে।

পরদিন নালিতাবাড়ী শহরের গোবিন্দনগর মহল্লায় আওয়ামী লীগের নির্বাচনী প্রচারকেন্দ্রে হামলার অভিযোগে বিএনপির অন্তত ২০ জন নেতার বিরুদ্ধে মামলা হয়।

নালিতাবাড়ী উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক নুরুল আমীন বলেন, ‘পুলিশ আমাদের নামে গায়েবি মামলা দিয়েছে। আমরা যাতে সঠিকভাবে নির্বাচনী প্রচারণা চালাতে না পারি এ জন্যই এই মিথ্যা মামলা করা হয়েছে।’

বিএনপির প্রার্থী ফাহিম চৌধুরী বলেন, ‘নকলায় আমি রীতিমতো অবরুদ্ধ অবস্থায় আছি। বিএনপির সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের দিন কাটছে একইভাবে। আমাদের নেতাকর্মীদের বাড়িতে চলছে হামলা, দোকানপাটে চলছে লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা।’

শেরপুর-৩

শ্রীবরদী ও ঝিনাইগাতী উপজেলা নিয়ে গঠিত আসনটিতে লড়াই করছেন চাচা-ভাতিজা। নৌকা পেয়েছেন চাচা ফজলুল হক চাঁন। ভাইয়ের ছেলে মাহমুদুল হক রুবেল পেয়েছেন ধানের শীষ। এ নিয়ে ভোটারদের মধ্যে রয়েছে বাড়তি উৎসাহ।

২০১৪ সালে বিএনপির বর্জনের মুখে নৌকা নিয়ে ৯৬ হাজার ২৩৪ ভোট পেয়ে জেতেন ফজলুল হক চাঁন। স্বতন্ত্র প্রার্থী হেদায়েতুল পেয়েছিল ৮ হাজার ৫৪৮ ভোট।

২০০৮ সালে এক লাখ ছয় হাজার ৬৩১ ভোট পেয়ে ভাতিজা রুবেলকে ৪০ হাজার ৮৭৮ ভোটে হারান ফজলুল। তার আগে ২০০১ সালে জিতেছিলেন রুবেল।

ঝিনাইগাতী বাজারের ব্যবসায়ী আব্দুল্লাহ বলেন, ‘স্থানীয় ভোটাররাও উদগ্রীব হয়ে আছেন চাচা-ভাতিজার লড়াই দেখার জন্য।’

বিএনপির প্রার্থী রুবেল বলেন, ২০০৮ সালের হারের পরও তিনি নেতাকর্মীদের সঙ্গে নিবিড় সম্পর্ক ও সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রয়েছে। তাই তাকে হারানো কঠিন হবে।

সংবাদটি শেয়ার করুন

রাজনীতি বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

রাজনীতি এর সর্বশেষ

উপজেলা ভোটের মাঠে বিএনপির তৃণমূল নেতারা

উপজেলা নির্বাচনে অংশগ্রহণ: বিএনপির ৬৪ নেতাকে শোকজ

ভোটের মাঠ থেকে স্বজনদের সরাতে পারেননি আ.লীগের মন্ত্রী-এমপিরা

দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে নির্বাচনে: বিএনপির আরও ৫ নেতা বহিষ্কার

সরকারকে পরাজয় বরণ করতেই হবে: মির্জা ফখরুল

এমপি-মন্ত্রীর স্বজন কারা, সংজ্ঞা নিয়ে ধোঁয়াশায় আ.লীগ

মন্ত্রী-এমপির স্বজনরা প্রার্থিতা প্রত্যাহার না করলে ব্যবস্থা: ওবায়দুল কাদের

স্থানীয় নির্বাচনে অংশ নেওয়ায় বিএনপির আরও এক নেতা বহিষ্কার 

দেশ গরমে পুড়ছে, সরকার মিথ্যা উন্নয়নের বাঁশি বাজাচ্ছে: এবি পার্টি

বিএনপি নেতাকর্মীদের জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর প্রতিবাদ সালাম-মজনুর

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :