আওয়ামী লীগের কোনো বিকল্প দেখছি না

স্বকৃত নোমান
| আপডেট : ২৯ ডিসেম্বর ২০১৮, ০০:০৫ | প্রকাশিত : ২৮ ডিসেম্বর ২০১৮, ২৩:৫৭

লেখক নিশ্চয়ই নিরপেক্ষ হবেন, যদি তার দেশের জনগণ দেশ, জাতি ও সংস্কৃতির পক্ষে থাকে। বাংলাদেশের জনগণ কি সর্বাংশে দেশের পক্ষে, বাঙালিত্বের পক্ষে, বাঙালি সংস্কৃতির পক্ষে? মোটেই না। জনগণের একটা অংশ নিজেদেরকে বাঙালি হিসেবে স্বীকার করে না। তারা মনে করে তাদের পূর্বপুরুষরা এই ভূমির সন্তান নয়। আরব-ইরান-তুরান-আফগান-তুর্ক থেকে এই দেশে এসেছে। দুর্ভাগ্যজনকভাবে তারা এই দেশে রয়ে গেছে।

বাঙালি নয়, জাতি হিসেবে নিজেদেরকে তারা মুসলমান পরিচয় দিতেই গর্ববোধ করে। তারা মনে করে, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান নয়, জাতির পিতা নবী ইব্রাহিম। তারা বুঝতে চায় না জাতি আর সম্প্রদায় যে দুটি সম্পূর্ণ আলাদা বিষয়। লাল-সবুজের জাতীয় পতাকা তাদের অপছন্দ। নিজেদের প্রতিষ্ঠানে তারা জাতীয় পতাকা উত্তোলন করে না। জাতীয় সংগীতও তাদের অপছন্দ। নিজেদের প্রতিষ্ঠানে তারা জাতীয় সংগীত পরিবেশন করে না। উল্টো বরং ‘হিন্দু কবির’ লেখা বলে সংগীতের গায়েও সাম্প্রদায়িকতার সিল মেরে দেয়। এরা এদেশে বাঙালি জাতির অস্তিত্ব মুছে দিয়ে দেশকে ‘দারুল ইসলাম’ বানাতে চায়।

এদের মতো আরেকটা অংশ নিজেদের আত্মপরিচয় নিয়ে দোদুল্যমান। তারা বাঙালি, না বাঙালি মুসলমান―এ নিয়ে তাদের সংশয়ের সীমা নেই। এরা না পাকিস্তানপন্থি, না বাংলাদেশপন্থি। এরা নিজেদেরকে বাস্তুহীন, শেকড়হীন মনে করে। আরেকটা অংশ আছে যারা মুক্তিযুদ্ধের কথা শুনলে অস্বস্তিবোধ করে। গায়ে যেন আগুন ধরে যায়। মুক্তিযুদ্ধে শহীদের সংখ্যা তিরিশ লাখ না তিরিশ হাজার―এ নিয়ে তাদের অন্তহীন প্রশ্ন। তারা মনে করে পাকিস্তানই তাদের পিতৃভূমি। দুর্ভাগ্যজনকভাবে যুদ্ধে পরাজিত হয়ে তারা বাংলাদেশে পড়ে আছে। তারা বাংলাদেশকে আবার পাকিস্তানের অংশ করে তুলতে চায়। এরা কেবল দেশবিরোধীই নয়, বাঙালি সংস্কৃতিরও বিরোধী।

দেশ, জাতি ও সংস্কৃতির প্রশ্নে এই দ্বিধাবিভক্ত জনগণের দেশে লেখকের নিরপেক্ষতা হাস্যকর। আমি একজন লেখক। একজন সাহিত্যকর্মী। আমার দেশ যদি বাংলাদেশ না হয়ে অন্য কোনো দেশ হতো (যে দেশের জনগণ দেশ, জাতি ও সংস্কৃতির প্রশ্নে বিভক্ত নয়) লেখক হিসেবে আমি অবশ্যই নিরপেক্ষ থাকতাম। বাংলাদেশে আমার নিরপেক্ষতার কোনো সুযোগ নেই। আমার নিরপেক্ষতা প্রকারান্তরে দেশ, জাতি ও সংস্কৃতিবিরোধীদের পক্ষেই চলে যায়। সুতরাং ইতিহাস ও রাজনীতি সচেতন একজন নাগরিক হিসেবে আমার পক্ষে নিরপেক্ষ থাকার কোনো সুযোগ নেই।

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আর দেরি নাই। নির্বাচনকে জনগণের গণতান্ত্রিক অধিকার বলা হয়। ব্যক্তিগতভাবে আমি গণতন্ত্রে আস্থাবান নই। গ্রিসের কোনো এক দার্শনিক বলেছিলেন, ‘অশিক্ষিত জনগণের জন্য গণতন্ত্র নয়।’ বাংলাদেশের অসংখ্য মানুষ যে অশিক্ষিত এবং গণতন্ত্রের জন্য নাবালক, তার বড় প্রমাণ যুদ্ধাপরাধী সাঈদীকে চাঁদে দেখা যাওয়া। অপরাধীকে চাঁদের বুকে দেখতে পাওয়া এই মানুষেরাই পাঁচ শ/এক হাজার টাকার বিনিময়ে নিজেদের ভোট বিক্রি করে দেয়। যুদ্ধাপরাধী, খুনী, দুর্নীতিবাজ ও ধর্মব্যবসায়ীকে ভোট দিয়ে তাদের প্রতিনিধি নির্বাচন করে। এই অশিক্ষিত মানুষদের জন্য গণতন্ত্র মানে শিশুর হাতে অস্ত্র দেওয়া। কিন্তু আমি এই দেশের নাগরিক। আমার ব্যক্তিগত আস্থা-অনাস্থা বা পছন্দ-অপছন্দ দিয়ে এই রাষ্ট্র চলে না। বাংলাদেশে গণতন্ত্র একটি সাংবিধানিক প্রক্রিয়া। না চাইলেও আমাকে গণতন্ত্র মানতে হয়। আমাকে ভোট দিতে হয়। রবিবার আমিও ভোট দিতে যাব।

কোন মার্কায় ভোট দেব? নিশ্চিতভাবেই নৌকা মার্কায়। দশ বছর ধরে রাষ্ট্রক্ষমতায় ঐতিহ্যবাহী রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ। গত দশ বছরে দলটির অনেক ভুলত্রুটি আছে। কাজ করতে গেলে ভুল হবে এটাই স্বাভাবিক। যারা কাজ করে না তাদের ভুল হয় না। কিন্তু ভুলের তুলনায় দলটির প্রশংসনীয় কাজের সংখ্যা বেশি। গত দশ বছরে দেশ অগ্রগতির যে মাত্রায় পৌঁছেছে তা নিঃসন্দেহে প্রশংসনীয়। দেশ, জাতি ও সংস্কৃতির প্রশ্নে আওয়ামী লীগের চেয়ে উন্নততর কোনো রাজনৈতিক দল বাংলাদেশে নেই। হয়ত ভবিষ্যতে আসবে। গঠিত হবে একটি কাঙ্ক্ষিত রাজনৈতিক দল। এখন নেই, এটাই বাস্তবতা। সুতরাং আওয়ামী লীগের কোনো বিকল্প দেখছি না। আগামী তিরিশ তারিখের নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করুক এই প্রত্যাশা।

জয় বাংলা।

লেখক: সাংবাদিক ও কথাসাহিত্যিক

সংবাদটি শেয়ার করুন

মতামত বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :