ভোলা আ.লীগে উদ্দীপনা, বিএনপিতে ‘ভয়’

প্রকাশ | ২৯ ডিসেম্বর ২০১৮, ০৮:৫৫

ইকরামুল আলম, ভোলা

ভোলার চারটি আসনের দুটিতে বিএনপির প্রার্থীরা ব্যাপকভাবে বাধার অভিযোগ করেছেন। বাকি দুটি আসনে তাদের বেশ ভালো প্রচার ছিল। তবে অভিযোগের কমতি ছিল না সেখানেও।

জেলাটিতে ১৯৯১ সালে তিনটি আসনে আওয়ামী লীগ এবং একটিতে জেতেন স্বতন্ত্র প্রার্থী। তবে পরের নির্বাচনে দুই দল জেতে দুটি করে। ২০০১ সালে বিএনপি চারটি এবং ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগ জেতে তিনটি আসনে।

এবার ভোটের প্রচার শেষে বিএনপির প্রার্থী এবং নেতা-কর্মীরা চিন্তিত সুষ্ঠু ভোট নিয়ে। অন্যদিকে তুমুল উৎসাহে প্রচার চালানো আওয়ামী লীগ চারটিতেই জয়ের বিষয়ে আশাবাদী। প্রচার চলাকালে জেলার চারটি আসনেই ইসলামী আন্দোলনের ব্যাপক তৎপরতা অবাক করেছে স্থানীয়দের।

ভোলা-১

সদর আসনে দৃশ্যত তোফায়েল আহমেদের জোয়ার। তিনি প্রচারে নামার পর থেকে দলের হাজার হাজার নেতা-কর্মী ও সমর্থক নৌকার পক্ষে নামেন। প্রতিদ্বন্দ্বী গোলাম নবী আলমগীরের বাসায়ও গেছেন আওয়ামী লীগের নেতা।

ইতোমধ্যে ১৩টি ইউনিয়নের বিভিন্ন ওয়ার্ডে গিয়ে উঠান বৈঠক, গণসংযোগ ও পথসভা করেছেন। প্রতিটি জমায়েতেই ব্যাপক লোকসমাগম হয়েছে। বিএনপি ও বিজেপি থেকে এক হাজার তিন শরও বেশি নেতা-কর্মী আনুষ্ঠানিকভাবে যোগ দিয়েছেন আওয়ামী লীগে।

অন্যদিকে প্রচারে অনেকটা পিছিয়ে বিএনপি। বিভিন্ন ইউনিয়নে তাদের প্রার্থী যাননি। এ জন্য তিনি হামলা-গ্রেপ্তারকেই কারণ বলেছেন। তার দাবি, ভোটারদের ভোটকেন্দ্রে না যেতে হুমকি দিচ্ছে প্রতিপক্ষের লোকজন।

এই অভিযোগের মধ্যে তোফায়েল নিজে ছুটে গেছেন নবীর বাসায়। বলেছেন তাকে প্রচার চালাতে। জানিয়েছেন, তিনি কোনো নেতিবাচক কাজে কখনো জড়াননি, এবারও নেই।

এই আসনে ২০০১ ও ২০০৮ সালে বিএনপি জোটের জয় বলছে, তোফায়েলের জয় ছিনিয়ে আনা এত সহজ হবে না। তিনি ২০০৮ সালে জেতেন ভোলা-২ আসনে। কিন্তু সেখানে ভাতিজা আলী আজম মুকুল মনোনয়ন পাওয়ার পর তোফায়েল এসেছেন সদর আসনে। বিএনপি জোটের নেতা আন্দালিভ রহমান পার্থ দুটি নির্বাচনে লড়েছেন এখান থেকে। তবে এবার তিনি সেই আসন ছেড়ে এসেছেন ঢাকা-১৭-তে। বিএনপি প্রার্থী করেছে গোলাম নবী আলমগীরকে।

তোফায়েলের দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনের তুলনায় নবী অনেকটাই নবীন। জোটের শক্তিতে তিনি বাজিমাত করছেন। আসনটিতে বিএনপির পাশাপাশি তাদের শরিক বিজেপিরও বেশ ভালো শক্তি আছে। জাতীয় পার্টি থেকে বের হয়ে দলটি গঠন করা নাজিউর রহমান মঞ্জুর বাড়ি এই এলাকায়। তার ছেলে পার্থই দুবার জেতেন সেখান থেকে। ফলে দুই দলের সম্মিলিত ভোটের সঙ্গে লড়াই করতে হবে তোফায়েলকে।

এই আসনে জাতীয় পার্টির কেফায়েত উল্লাহ নজিব ও ইসলামী আন্দোলনের ইয়াছিন নবীপুরী এবং সিপিবির সোহেল মাহমুদ প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। তাদের মধ্যে নবীপুরী একটি বড় সমাবেশ করেছেন। বাকি দুজনের তেমন তৎপরতা নেই।

ভোলা-২

এটি তোফায়েলের নিজের আসন বলা যায়। বারবার জিতেছেন এখান থেকে। ২০০১ সালেই কেবল একবার হারেন। নৌকার ঘাঁটি হিসেবেই বিবেচিত এলাকায় লড়ছেন তোফায়েলের ভাতিজা আলী আজম মুকুল। বিএনপির প্রার্থী তোফায়েলকে একবার হারিয়ে চমক দেখান হাফিজ ইব্রাহিম।

এখানেও বিএনপির পক্ষে তেমন কোনো প্রচার দেখা যায়নি। ইব্রাহিমের অভিযোগ, তাকে বাসায় অবরুদ্ধ করে রাখা হয়েছে। তবে এই আসনে যে সহিংসতা হয়েছে, তাতে আক্রান্ত হয়েছে আওয়ামী লীগই। মুকুলের সমর্থকদের ওপর হামলা করে বেশ কিছু মোটরসাইকেলে দেওয়া হয়েছে আগুন।

মুকুল ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘কেউ তার (ইব্রাহিম) প্রচারে বাধা দিচ্ছে না। তিনি ২০০১ সালে বোরহানউদ্দিন-দৌলতখানের মানুষের ওপর যে অত্যাচার করেছেন, তার জন্য মানুষ ক্ষিপ্ত হয়ে আছে। তিনি নামলে মানুষ তাকে প্রশ্ন করে বলে তিনি নিজেই দূরে থাকছেন।’

ইসলামী আন্দোলনের ওবায়দুর রহমানও এখানে ভালোভাবেই প্রচার চালিয়েছেন। বিভিন্ন বাজার ও ইউনিয়নে গিয়ে পথসভা, উঠান বৈঠক করে ভোট চেয়েছেন।

ভোলা-৩

লালমোহন ও তজুমদ্দিন উপজেলা নিয়ে গঠিত আসনটিতে বিএনপির প্রার্থী হাফিজ উদ্দিন আহমেদ জিতেছেন তিনবার। ১৯৯১ সালে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে এবং পরের দুবার ধানের শীষ নিয়ে। তবে হারেন ২০০৮ সালে।

সেবার হাফিজ হেরেছিলেন অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তা জসিম উদ্দিনের কাছে। তবে পরে তার প্রার্থিতা বাতিল হলে উপনির্বাচন হয়। সেখানে হাফিজ হারেন নৌকার প্রার্থী নুরুন্নবী চৌধুরী শাওনের কাছে। তিনিই নৌকার মাঝি।

২০০১ সালে হাফিজের জয়ের পর তার এলাকায় ব্যাপকভাবে হিন্দুদের ওপর আক্রমণ হয়েছিল। সেই স্মৃতি এখনো তাজা। বিএনপির প্রার্থী হাফিজ ভোটের প্রচারের শেষ দিকে গেছেন এলাকায়। সেটিও বহু বছর পর। তার দাবি, নিরাপত্তাহীনতায় তিনি যেতে পারছিলেন না।

এলাকায় গেলেও হাফিজ প্রচারে নামেননি। আর শাওন ঘরে থেকেছেন কম। ভোটারদের সঙ্গেই কাটিয়েছেন বেশির ভাগ সময়। সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত দুটি উপজেলার ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে গিয়ে পথসভা, উঠান বৈঠক ও গণসংযোগ করেছেন। তুলে ধরেছেন তার সরকারের উন্নয়নচিত্র।

হাফিজের অভিযোগ, তিনি বাসায় অবরুদ্ধ। তাকে বাসা থেকে বের হতে দেওয়া হয়নি। নেতাকর্মীদের মারধর করা হয়েছে। সে জন্যই তিনি নামতে পারেননি।

শাওন বলেন, ‘তাকে কেউ বাধা দেয়নি। তিনি লালমোহনে এসে আমার নেতাকর্মীদের ওপর হামলা চালিয়ে ২৫-৩০ জনকে আহত করেছেন। ২০০১ সালের পর এই এলাকার মানুষের ওপর বিএনপি যে অত্যাচার-অবিচার করেছে, তার জন্য লোকলজ্জায় তিনি ঘর থেকে বের হতে পারেন না।’

এ আসনেও সাড়া ফেলেছেন ইসলামী আন্দোলনের মোসলেহ উদ্দিন। সকাল থেকে শুরু করে রাত পর্যন্ত তিনি হাতপাখায় ভোট চান।

ভোলা-৪

চরফ্যাশন ও মনপুরা উপজেলা নিয়ে গঠিত আসনে লড়াই হবে আওয়ামী লীগের আব্দুল্লাহ আল ইসলাম জ্যাকব ও বিএনপির নাজিম উদ্দিন আলমের মধ্যে। ২০০৮ সালে নাজিমকে হারিয়ে জেতেন জ্যাকব।

জ্যাকবের বাবা এম এম নজরুল ইসলাম জনপ্রিয় নেতা ছিলেন। তিনি ১৯৯১ সালে এখান থেকে সংসদ সদস্য হন। তবে পরের দুই নির্বাচনে জেতেন বিএনপির নাজিম।

জ্যাকব সংসদ সদস্য হওয়ার পর আসনটিতে নানা উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নের পাশাপাশি পর্যটনশিল্পের বিকাশে নেওয়া হয়েছে নানা উদ্যোগ। এতে তার অবস্থান পোক্ত হয়েছে।

জ্যাকব প্রতিটি ইউনিয়নে গণসংযোগ করেছেন। নাজিমও প্রচার চালিয়েছেন নানাভাবে। তবে তিনি বাধা ও গ্রেপ্তারের অভিযোগও করেছেন।

এই আসনেও ইসলামী আন্দোলনের মো. মহিবুল্যাহর পক্ষে জনসংযোগ ছিল চোখে পড়ার মতো।