বেড়েই চলেছে আ.লীগের ভোট

তানিম আহমেদ
 | প্রকাশিত : ২৯ ডিসেম্বর ২০১৮, ০৯:১২

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যার পর ১৯৭৯ সালে আওয়ামী লীগ যত ভোট পেয়েছে, তার পর প্রতিটি জাতীয় নির্বাচনেই আগেরবারের চেয়ে বেশি ভোট পেয়েছে। অর্থাৎ অংশগ্রহণমূলক টানা পাঁচটি নির্বাচনেই আওয়ামী লীগের ভোট বেড়েছে। এই ঘটনাটি আর কোনো দলের ক্ষেত্রে ঘটেনি।

এই তথ্য বিবেচনায় নিয়ে ক্ষমতাসীন দল বলছে, আগামী রবিবারের ভোটেও তারা জিতে টানা তৃতীয়বারের মতো সরকার গঠন করবে।

এই নির্বাচনগুলোর মধ্যে ১৯৮৬ সালে বিএনপি এবং ২০১৪ সালে বিএনপি-জামায়াত জোট ও সমমনারা অংশ নেয়নি।

পরিসংখ্যান ঘেঁটে দেখা গেছে, অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনে কোনো একটি আসনেও একবার নির্দিষ্ট সংখ্যক ভোট পেলে পরে ভোট কমে যাওয়ার ঘটনাও বিরল।

বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে সুশাসনের জন্য নাগরিক-সুজন সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘আওয়ামী লীগ আকর্ষণীয় ছিল জনগণের কাছে। এ কারণে তাদের ভোট বেড়েছে। তাদের গায়ে কোনো কাদা ছিল না।’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক গোবিন্দ চক্রবর্তী বলছেন, নির্বাচনে জয়-পরাজয় আছে কিন্তু স্বাধীনতা সংগ্রামে নেতৃত্বদানকারী আওয়ামী লীগের অবস্থান জনগণের কাছে সবসময় থাকে। ১৯৭৫ সালের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পরে বিরূপ পরিস্থিতিতে হয়তো তাদের ভোট কমেছে। কিন্তু দলটি তখন থেকে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা শুরু করে আর সেনাশাসনের অবসান হওয়ার পর দলটি তার বক্তব্য নিয়ে মানুষের কাছে গেছে আর মানুষও সাড়া দিয়েছে।

জিয়াউর রহমান এবং হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের সেনাশাসনের সময় নানা অপপ্রচারের কারণে আওয়ামী লীগকে যেসব প্রশ্নের মুখে পড়তে হয়েছে দুবার ক্ষমতায় আসার পর সেসব প্রশ্ন উঠছে না। আবার এখন আওয়ামী লীগ সরকারের সঙ্গে অন্য শাসনের তুলনাও হচ্ছে এবং এটিও আওয়ামী লীগের পক্ষে যাচ্ছে বলে মনে করেন এই শিক্ষক।

পরিসংখ্যান বলছে, বিভিন্ন আসনে আওয়ামী লীগের ভোট বৃদ্ধির হার ভোটার বৃদ্ধির হারকেও ছাপিয়ে গেছে। আর যে নির্বাচনে দলটি হেরেছে সেবারও বেশ ভালো সংখ্যায় ভোট বেড়েছে দলটির।

অন্যদিকে আওয়ামী লীগের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপির ভোট আগেরবারের তুলনায় দুইবার কমেছে। আর দুটি নির্বাচনে আগেরবারের চেয়ে ভোট বেড়েছে।

বিএনপি ১৯৭৯ সাল প্রথমবার অংশ নিয়েই ৪১.২ শতাংশ ভোট পেয়েছিল। আর ২০০৮ সালে সবশেষ অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনে তার চাইতে দলটি ভোট কম পেয়েছে আট শতাংশ, অর্থাৎ ৩৩.২ শতাংশ ভোটারের পছন্দ ছিল ধানের শীষ।

দুই প্রধান দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপির বাইরে তৃতীয় শক্তির আলোচনা গণমাধ্যমে যত উঠে আসে, জনগণের মনে তা তত দাগ কাটে না। জাতীয় নির্বাচনগুলোর ফলাফল পর্যালোচনা করে এমন তথ্যই মিলেছে।

ভোটের ফলগুলো বলছে, নতুন কোনো রাজনৈতিক শক্তি উঠেই আসতে পারেনি। আবার আওয়ামী লীগ সব সময় দুই প্রধান শক্তির একটি থেকেছে। আর তার প্রতিদ্বন্দ্বী ক্ষণে ক্ষণে পাল্টেছে। বর্তমানে বিএনপির সঙ্গে লড়াই হলেও এক সময় জাতীয় পার্টি ছিল সেই জায়গায়।

১৯৭৩ সালের প্রথম সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ৭৩ শতাংশ ভোট পেয়ে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায়। তবে ১৯৭৫ সালে দলের প্রধান বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও দলের শীর্ষ চার নেতাকে কারাগারে হত্যার পর বিরূপ পরিস্থিতিতে দলটি ভালো করতে পারেনি।

জিয়াউর রহমানের সেনা শাসনের সময় ১৯৭৯ সালে দ্বিতীয় সংসদ নির্বাচনে অনায়াসে জিতে যায় তার গঠন করা দল বিএনপি। তখন তারা ভোট পায় ৪১.২ শতাংশ। আর বিপর্যয়ে পড়া আওয়ামী লীগের বাক্সে পড়ে ২৪.৫ শতাংশ। আসন পায় ৩৯টি। এই নির্বাচনের পর থেকেই আওয়ামী লীগের ভোট বাড়ছে নিয়মিত। আর বিএনপির ভোট উঠানামা করছে।

কোন নির্বাচনে কত ভোট

১৯৭৯ সালে ২৪.৫৫ শতাংশ ভোট পাওয়া আওয়ামী লীগ আসন পায় ৩৯টি। হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের সেনা শাসনামলে ১৯৮৬ সালের তৃতীয় সংসদ নির্বাচনে ২৬.১৫ শতাংশ ভোট পায়। আসন পায় ৭৬টি। ১৯৮৮ সালে চতুর্থ সংসদ নির্বাচন বর্জন করা দল ১৯৯১ সালের পঞ্চম সংসদ নির্বাচনে পায় ৩০.০৮ শতাংশ ভোট। আসন পায় ৮৮টি। অর্থাৎ ১৯৮৬ সালের তুলনায় এই নির্বাচনে আওয়ামী লীগের ভোট বাড়ে ৩.৯৩ শতাংশ।

১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারির জাতীয় নির্বাচন বর্জন করে আওয়ামী লীগ। আর ওই বছরের জুনের সপ্তম সংসদ নির্বাচনে ৩৭.৪৪ শতাংশ ভোট পেয়ে জেতে তারা। ২১ বছর পর ক্ষমতায় আসা দলটির ভোট এক লাফেই বাড়ে ৭.৩৬ শতাংশ।

২০০১ সালের অষ্টম সংসদ নির্বাচনে হেরে গেলেও আওয়ামী লীগের ভোট বাড়ে ২.৭৭ শতাংশ। তখন নৌকা প্রতীকে ভোট পড়ে ৪০.২১ শতাংশ আর দলটি আসন পায় ৬২টি।

২০০৮ সালের নবম সংসদ নির্বাচনে ভোটের ৪৯ শতাংশ পায় আওয়ামী লীগ যা আগেরবারের চেয়ে প্রায় ৯ শতাংশ বেশি। এর বাইরে নৌকা নিয়ে লড়া জাসদ ০.৬ এবং ওয়ার্কার্স পার্টি ০.৩ শতাংশ ভোট পায়। ওই নির্বাচনে আওয়ামী লীগ পায় ২৩০টি আসন আর তার শরিকরা পায় ৩২টি।

বিএনপি-জামায়াত জোটের বর্জনের মুখে ২০১৪ সালের দশম সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ভোট পায়

দুর্বল এলাকায় শক্তিশালী অবস্থান

আবার ক্ষমতাসীন দল তার দুর্বল এলাকাগুলোতে ক্রমেই শক্তিশালী হয়ে উঠেছে। চঞ্চম সংসদ নির্বাচনে লড়াইয়ে আসনে না পারা দলটি নবম সংসদ নির্বাচনে বড় ব্যবধানে জিতেছে।

উত্তরাঞ্চলে বগুড়া, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, রাজশাহীর বিভিন্ন আসন ঘেঁটে দেখা গেছে, ১৯৯১ সালে যেখানে দলটি কোথাও চতুর্থ, কোথাও বিপুল ব্যবধানে পিছিয়ে তৃতীয় হয়েছে, সেগুলোর বহুগুলোতে ২০০৮ সালে জিতেছে দল। আর এই ঘটনাটি একবারে হয়নি। প্রতিবার ভোট বেড়ে জয়ের পথে গেছে তারা। বগুড়া-১ আসনে ১৯৯১ সালে নৌকায় পড়ে ১৭ হাজার ২৮৯ ভোট। ২০০৮ সালে সেখানে এই প্রতীকে পড়ে এক লাখ ২৭ হাজার ১ ভোট।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ-৩ আসনে ১৯৯১ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতায় আসতে না পারলেও ২০০৮ সালে সেখানে এক লাখ ১২ হাজার ৮০২ ভোট পেয়ে জেতে আওয়ামী লীগ। নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপি কম পায় প্রায় ৩৭ হাজার।

জাতীয় পার্টির ঘাঁটি রংপুর, গাইবান্ধা, কুমিগ্রাম, নীলফামারী, রাজশাহী বিভাগের রাজশাহী, পাবনা, ঢাকা বিভাগে ঢাকা, মুন্সিগঞ্জ, মানিকগঞ্জ, চট্টগ্রাম বিভাগে কুমিল্লা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, চট্টগ্রাম, খুলনা বিভাগে কুষ্টিয়া, ঝিনাইদহ, চুয়াডাঙ্গা, সাতক্ষীরায় অবস্থান ধীরে ধীরে ভালো করেছে আওয়ামী লীগ।

সংবাদটি শেয়ার করুন

রাজনীতি বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

রাজনীতি এর সর্বশেষ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :