তফসিলের পর গ্রেপ্তার ‘১১ হাজারের বেশি’

এম গোলাম মোস্তফা, সাখাওয়াত প্রিন্স ও দীপান্বিতা রায়
 | প্রকাশিত : ২৯ ডিসেম্বর ২০১৮, ০৯:৪৯

তফসিল ঘোষণার পর প্রচার চলাকালে সারা দেশের ৩০০টি নির্বাচনী এলাকায় পুলিশের অভিযানে বিএনপি ও তার জোটের ১১ হাজারের বেশি নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তারের তথ্য মিলেছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি গ্রেপ্তার হয়েছে চট্টগ্রাম জেলা ও বিভাগে। এই বিভাগেই পাঁচ হাজারের বেশি গ্রেপ্তারের তথ্য আছে।

সারা দেশে প্রতিটি আসনে গড়ে ৪০ জনের মতো নেতাকর্মী গ্রেপ্তার হলেও চট্টগ্রামের ১৬টি আসনে এই হার পৌনে ২০০ জনের মতো। ঢাকা টাইমসের জেলা প্রতিবেদকদের পাঠানো তথ্য থেকে অনুযায়ী এই বিষয়টি জানা গেছে।

এই গ্রেপ্তারের বিষয়টিই মূলত ভাবাচ্ছে বিএনপি ও তার জোটকে। তারা বারবার বিষয়টি তুলে ধরছে। ঢাকা টাইমসের প্রতিবেদকরা জানান, ২০১৪ সালের দশম সংসদ নির্বাচন ঠেকাতে এবং ২০১৫ সালে সরকার পতন আন্দোলনের সময় ব্যাপক সহিংসতার ঘটনায় শত শত মামলায় বিএনপি-জামায়াতের হাজার হাজার নেতাকর্মী আসামি আছেন। এদের বহুজনের বিরুদ্ধে আছে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা। এত দিন পলাতক থাকলেও ভোট সামনে রেখে তারা এলাকায় সক্রিয় হওয়ার চেষ্টা করেছেন। এ ছাড়া সাম্প্রতিক সময়ে ‘গায়েবি মামলা’য় নতুন করে অনেককে আসামি করা হয়।

বিএনপি বলছে, সুনির্দিষ্ট অভিযোগ ছাড়াই তাদের নেতাকর্মীদের আটক করা হয়েছে। ভোট নিয়ে আতঙ্ক তৈরিই এর কারণ। বিএনপির মুখপাত্র সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী জানান, তাদের নেতাকর্মী গ্রেপ্তারের সংখ্যা ১০ হাজারের বেশি।

রংপুর বিভাগ

পঞ্চগড় প্রতিবেদক জানান, তফসিল ঘোষণার পর থেকে গতকাল পর্যন্ত দুটি আসনে মোট ৫২ জন গ্রেপ্তার হয়েছেন। তাদের বেশির ভাগই বিএনপির নেতাকর্মী।

ঠাকুরগাঁওয়ের তিনটি আসনে গ্রেপ্তার আছেন দুই শর মতো, রংপুরের ছয়টি আসনে অন্তত ২০ জন।

দিনাজপুরে কতজন আটক হয়েছেন, সে বিষয়ে সুনির্দিষ্ট তথ্য না থাকলেও আটকদের মধ্যে আছেন বিরল উপজেলার চেয়ারম্যান জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক বজলুর রশিদ কালু, শাহীনুর ইসলাম শাহীন, বিরামপুর জামায়াতের আমির এনামুল হক।

লালমনিরহাটের তিনটি আসনে ২০০ জন এবং কুড়িগ্রামের চারটি আসনে ১৫০ জন গ্রেপ্তারের তথ্য আছে।

গাইবান্ধা প্রতিবেদক জাভেদ হোসেন জানান, এই জেলার পাঁচটি আসনে অন্তত ৩০০ জন গ্রেপ্তার হয়েছেন। তাদের মধ্যে জেলা বিএনপি সাংগঠনিক সম্পাদক মোশারফ হোসেন বাবু, গাইবান্ধা সদর থানা বিএনপির সাবেক সভাপতি আবু বকর সিদ্দিক, জেলা যুবদলের সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান স্বপন আছেন।

রাজশাহী বিভাগ

বগুড়া প্রতিবেদক প্রতীক ওমর জানিয়েছেন, বগুড়ায় তফশিল ঘোষণার পরে এ পর্যন্ত বিএনপি-জামায়াতের ৪০০ নেতাকর্মী গ্রেপ্তার হয়েছেন। চাঁপাইনবাবগঞ্জের তিনটি আসনে এই সংখ্যাটি ৪৫ জন।

নওগাঁ প্রতিবেদক সাজেদুর রহমান সাজু জানান, তার জেলায় ছয়টি আসনে গ্রেপ্তার হয়েছেন অন্তত ৭০ জন। তাদের মধ্যে আছে জেলা যুবদলের সভাপতি বায়েজিদ হোসেন পলাশ।

নাটোর প্রতিবেদক সাইফুল ইসলামের তথ্য অনুযায়ী জেলা বিএনপির সভাপতি রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু, সহ-সভাপতি শহিদুল ইসলাম বাবুসহ চারটি আসনে গ্রেপ্তার আছেন শতাধিক।

সিরাজগঞ্জের ছয়টি আসনে গ্রেপ্তার ৩৪ জন। এদের মধ্যে সদর থানা সভাপতি মতিউর রহমানও আছেন। পাবনা গ্রেপ্তারের সংখ্যা অন্তত ২৫০।

খুলনা বিভাগ

এই জেলার দুটি আসনে গ্রেপ্তার আছেন অন্তত ৭২ জন। কুষ্টিয়ার চারটি আসনের মধ্যে বিএনপির প্রার্থীসহ আটকের সংখ্যা ৭৩। চুয়াডাঙ্গার দুটি আসনে আটক ১৪ জন ।

ঝিনাইদহ প্রতিবেদক জানান, এই জেলার চারটি আসনে গ্রেপ্তার আছেন ৩৪২ নেতাকর্মী। এদের মধ্যে ঝিনাইদহ-৩ আসনে জামায়াতের প্রার্থী মতিয়ার রহমানও আছেন।

যশোরের ছয়টি আসনে গ্রেপ্তারের সংখ্যা অন্তত ৫৩। তাদের মধ্যে জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ সাবেরুল হক সাবু ও যুগ্ম সম্পাদক মিজানুর রহমান খানও আছেন। মাগুরার দুটি আসনে গ্রেপ্তারের সংখ্যা ৫০।

নড়াইলের দুই আসনে গ্রেপ্তার ১৭। তাদের মধ্যে কালিয়া উপজেলা বিএনপির সভাপতি আনোয়ার হোসেনও রয়েছেন। বাগেরহাটের চারটি আসনে আটক ১০৭ জন ছাড়িয়েছে।

খুলনা ব্যুরো প্রধান আবুল হাসান জানান, তার জেলার ছয়টি আসনে গ্রেপ্তারের সংখ্যা ৩৫। সাতক্ষীরার চারটি আসনে এই সংখ্যা ১০৭। এদের মধ্যে সাতক্ষীরা-৪ আসনে জামায়াতের প্রার্থী গাজী নজরুল ইসলামও আছেন।

বরিশাল বিভাগ

বরগুনা প্রতিনিধি নাঈমুল হাসান রাসেল জানান, তার জেলার দুটি আসনে গ্রেপ্তারের সংখ্যা ৭০ জন। পটুয়াখালীর চারটি আসনে ২৫৫ জন।

ভোলা প্রতিনিধি ইকরামুল আলম জানান, এই জেলার চারটি আসনে গ্রেপ্তারের সংখ্যা ৮০ জন। এর মধ্যে ভোলা সদরে ১৬ জন, চরফ্যশন ও মনপুরা উপজেলায় ৩৫, লালমোহনে ৪২ জন।

বরিশালের ছয় আসনে গ্রেপ্তারের সংখ্যা অন্তত ৫০০ জন। এদের মধ্যে আছেন জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক মহসিন মন্টু। বরিশাল-১ আসনের বিএনপির প্রার্থী জহির উদ্দিন স্বপনের বাসা থেকেও ধরা হয়েছে ১৯ জনকে।

ঝালকাঠির দুটি আসনে আটকের সংখ্যা ৫০ ছাড়িয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন পুলিশের বিশেষ শাখার ইন্সপেক্টর আব্দুল হান্নান শেখ।

ময়মনসিংহ বিভাগ

শেরপুর প্রতিনিধি সুজন সেন জানান, জেলার তিনটি আসনে বিএনপি জামায়াতের ৫০ জন নেতাকর্মী গ্রেপ্তার হয়েছেন। ময়মনসিংহের ১১টি আসনে এই সংখ্যা শতাধিক।

নেত্রকোনার পাঁচটি আসনে ধরা হয়েছে ২৫৫ জনকে। এদের মধ্যে পূর্বধলা উপজেলা বিএনপির সভাপতি বাবুল আলম তালুকদার, সাধারণ সম্পাদক ফকির সাহেদ আল মামুন, দুর্গাপুর উপজেলা বিএনপির সভাপতি জহিরুল আলম আছেন।

ঢাকা বিভাগ

টাঙ্গাইল প্রতিনিধি রেজাউল কমির জাানন টাঙ্গাইলে আটটি আসনে এক হাজার নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তারের অভিযোগ করেছেন জেলা বিএনপির সভাপতি শামছুল আলম তোফা। এর মধ্যে কেন্দ্রীয় যুবদলের সভাপতি সুলতান সালাউদ্দিন টুকুর এলাকায়ই গ্রেপ্তার হয়েছে ৩০০ জন। তবে নিরপেক্ষ সূত্র থেকে তা যাচাই করা যায়নি।

পুলিশ সুপার সালেহ মোহাম্মদ তানভীরের কাছে গ্রেপ্তারের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘আমরা বিএনপি-জামায়াত হিসেবে কাউকে গ্রেপ্তার করি নাই। যাদের বিরুদ্ধে ফৌজদারি অপরাধের মামলা আছে আমরা তাদেরই গ্রেপ্তার করেছি।’

কিশোরগঞ্জের ছয়টি আসনে এক শর মতো গ্রেপ্তার আছে। আটকদের মধ্যে আছেন সদর উপজেলার চেয়ারম্যান শরিফুল ইসলাম, জেলা যুবদল সভাপতি রেজাউল করিম পার্নেল, পৌর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মো. আরমান, ছাত্রদলের সভাপতি আফজাল।

মুন্সিগঞ্জের তিনটি আসনে ১৬২ জন গ্রেপ্তারের তথ্য মিলেছে। এর মধ্যে টঙ্গিবাড়ী উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আক্তার হোসেন মোল্লা, যুবদলের সদস্য সচিব রিগান শিকদার, সোনারঙ টঙ্গীবাড়ী ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি, আব্দুল্লাহপুর ইউনিয়ন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি রতন গণি আছে।

ঢাকা জেলার গ্রেপ্তারের তথ্য সুনির্দিষ্ট নেই। তবে ঢাকা-৬ আসনে ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থী সুব্রত চৌধুরীর অভিযোগ তার আসনেই আটক আছে ৫০০ নেতাকর্মী । বলেন, ‘আমার নেতাকর্মীরা বাড়িঘরে থাকতে পারছে না, তারা পালিয়ে বেড়াচ্ছে।’

জানতে চাইলে ঢাকা মহানগর পুলিশের ওয়ারি বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার মো. ফরিদ উদ্দিন ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘উনি (সুব্রত) যে গ্রেপ্তারের তথ্য দিয়েছেন তা সত্য নয়। যাদের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা আছে তাদেরই গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এর বাইরে আর কিছু বলব না এই মুহূর্তে।’

গাজীপুর প্রতিবেদক আবুল হাসান জানান, জেলার পাঁচটি আসনে বিএনপি-জামায়াতের ২১৪ জন গ্রেপ্তার হয়েছেন। এর মধ্যে বিএনপির গাজীপুর-৫ আসানের প্রার্থী এ কে এম ফজলুল হক মিলনও আছেন।

নরসিংদী আসাদুজ্জামান রিপন জানান, জেলার পাঁচটি আসনে গ্রেপ্তার তিন শতাধিক। এর মধ্যে নরসিংদীর বেলাব উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক ও উপজেলা চেয়ারম্যান আহসান হাবিব বিপ্লব আছেন।

নারায়ণগঞ্জের পাঁচটি আসনে গ্রেপ্তারের সংখ্যা অন্তত ৬০। গণফোরামের জেলা সভাপতি দেলোয়ার হোসেন চুন্নুু, মহানগর বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুস সবুর খান সেন্টুও আছেন এদের মধ্যে।

রাজবাড়ীতে দুটি আসনে ৩০০ জনের মতো গ্রেপ্তার হয়েছেন। পৌর বিএনপির সভাপতি মঞ্জুরুল আলম দুলাল, সাধারণ সম্পাদক এহসানুল করিম, সদর উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক কাজী আব্দুস সবুর, গোয়ালন্দ উপজেলা বিএনপির সভাপতি সুলতান আলম মুন্নুও আছেন।

ফরিদপুরের চারটি আসনে গ্রেপ্তারের সংখ্যা অন্তত ১৪৯। মাদারীপুরের তিনটি আসনে এই সংখ্যাটি ৪৯। শরীয়তপুরে তিনটি আসনে মোট ৬০ জন গ্রেপ্তার হয়েছেন।

সিলেট বিভাগ

সুনামগঞ্জের প্রতিবেদক জাহাঙ্গীর আলম জানান, জেলার পাঁচটি আসনে গ্রেপ্তার ২০০ জনের বেশি। তাদের মধ্যে ধর্মপাশা উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মোতালেব খান রয়েছেন। সিলেটের ছয়টি আসনে এই সংখ্যাটি অন্তত ৫০, মৌলভীবাজারের চারটি আসনে ৪০।

হবিগঞ্জ প্রতিবেদক আবু হাসিব খান জানান, এই জেলায় ৪২ জন গ্রেপ্তার আছেন।

চট্টগ্রাম বিভাগ

কুমিল্লা প্রতিবেদক মাসুস আলম জানান, তফশিল ঘোষণার পর বিএনপি-জামায়াতের এক হাজার ১২ জন গ্রেপ্তারের তথ্য আছে। কুমিল্লা-১০ আসনের বিএনপির প্রার্থী মনিরুল হক চৌধুরী আগে থেকেই কারাগারে।

চাঁদপুর প্রতিবেদক শওকত আলী জানান, পাঁচটি আসনে এই সংখ্যাটি ২৫০ জনের মতো।

ফেনীতে তিনটি আসনে গ্রেপ্তার ২০০ জনের মধ্যে আছেন জেলা ছাত্রদলের সভাপতি সালাউদ্দিন মামুন, সিনিয়র সহ-সভাপতি ফরহাদ উদ্দিন চৌধুরী মিল্লাত।

নোয়াখালীর ছয়টি আসনে গ্রেপ্তারের সংখ্যা অন্তত ২৬৫। এর মধ্যে আছেন নোয়াখালী জেলা বিএনপির সিনিয়র সহসভাপতি এ বি এম জাকারিয়া, নোয়াখালী শহর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক শাহ জাফর উল্ল্যাহ রাসেল, জেলা যুবদলের সাবেক সভাপতি মাহবুব আলমগীর আলো।

লক্ষ্মীপুর প্রতিনিধি আব্বাছ হোসেন জানান, জেলার চারটি আসনে তিন শর বেশি আটক আছে। এদের মধ্যে আছেন সদর উপজেলার বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক লোকমান হোসেন, রামগতি উপজেলার বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আদি আব্দুল্লাহ, কমলনগর উপজেলার সাধারণ সম্পাদক নুরুল হুদা চৌধুরী।

চট্টগ্রাম কারাগারের একজন কর্মকর্তা জানান, এমনিতে জেলায় সব সময় আটক থাকে সাত থেকে সাড়ে সাত হাজার। এখন এই সংখ্যাটি সাড়ে ১০ হাজার। এই তিন হাজার আটক হয়েছে ভোটের প্রচার চলাকালে।

কক্সবাজার প্রতিবেদক ইসমত আরা ইশু জানান, জেলার চারটি আসনে গ্রেপ্তার হয়েছেন অন্তত ২৫০ জন। রাঙ্গামাটিতে এই সংখ্যাটি ১০ জন। তাদের মধ্যে জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক সাইফুল ইসলাম পনির রয়েছেন।

বান্দরবান প্রতিনিধি মং খিং জানান, তফশিল ঘোষণার পর এ পর্যন্ত এই জেলায় বিএনপির কাউকে গ্রেপ্তারের তথ্য নেই।

সংবাদটি শেয়ার করুন

রাজনীতি বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

রাজনীতি এর সর্বশেষ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :