২১ শতাংশ ভোট বাড়ানোর চ্যালেঞ্জ বিএনপির

বোরহান উদ্দিন
 | প্রকাশিত : ২৯ ডিসেম্বর ২০১৮, ১২:৪৭

১০ বছর আগের জাতীয় নির্বাচনে বিএনপি যত ভোট পেয়েছিল তার চেয়ে এক পঞ্চমাংশ ভোট না বাড়লে বিএনপির পক্ষে লড়াইয়ে আসা কঠিন হতে পারে। ২০০১ সাল থেকেই দেখা গেছে ৪০ শতাংশের কম ভোট পেয়ে কোনো দল প্রতিদ্বন্দ্বিতায় আসতে পারেনি। সবশেষ নির্বাচনে বিএনপি ভোট পেয়েছিল ৩৩.২ শতাংশ।

সাত শতাংশ বেশি ভোট বাড়াতে হলে আগেরবারের চেয়ে অন্তত ২১ শতাংশ ভোট বাড়তে হবে বিএনপির। ১৯৯৬ সালের তুলনায় ২০০১ সালে এই পরিমাণ ভোট বেড়েছে বিএনপির। আর সেটিই স্বপ্ন দেখাচ্ছে তাদের। নেতারা বলছেন, এবার ভোটবিপ্লব হবে।

দশম সংসদ নির্বাচন বর্জন করা বিএনপি এবার ভোট চাইছে ‘গণতন্ত্রে ফেরা’ আর খালেদা জিয়ার মুক্তির কথা বলে। নাশকতার মামলা আর প্রতিপক্ষ সরকারি দলের হামলার কারণে নির্বিঘœ প্রচার চালাতে পারেনি দলটি। এই অস্থায় সার্বিকভাবে সাত শতাংশ ভোট বৃদ্ধির চ্যালেঞ্জ নিয়ে বিএনপি অংশ নিচ্ছে রবিবারের ভোটে।

দল গঠনের পর প্রথমবার অংশ নিয়ে বাজিমাত করা বিএনপি যে হারে ভোট পেয়েছে, সেটা আর তারা ছাড়িয়ে যেতে পারেনি। ১২ বছর পর ভোটে দাঁড়িয়ে তারা ভোট পায় এর চেয়ে ১২ শতাংশ কম। এর পর দুটি নির্বাচনে ভোট বাড়লেও ২০০৮ সালের নবম সংসদ নির্বাচনে কমে যায়।

জিয়াউর রহমান ক্ষমতায় আসার পর ১৯৭৯ সালে দ্বিতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি ৪১.১৬ শতাংশ ভোট পেয়ে আসন পায় ২০৭টি।

১৯৮৬ এবং ১৯৮৮ সালে নির্বাচনে অংশ নেয়নি বিএনপি। ১৯৯১ সালে ৩০.৮১ শতাংশ ভোট পেয়ে ক্ষমতায় আসে তারা। তখন আসন পায় ১৪০টি।

১৯৯৬ সালের ১২ জুনের নির্বাচনে হেরে গেলেও বিএনপির ভোট বাড়ে। তখন তারা পায় প্রদত্ত ভোটের ৩৩.৬ শতাংশ।

২০০১ সালে বিএনপি-জামায়াত, ইসলামী ঐক্যজোট এবং জাতীয় পার্টির একাংশ জোটবদ্ধ হওয়ার পর ভোটে উল্লম্ফন হয়। ওই নির্বাচনে বিএনপি পায় ৪০.৮৬ শতাংশ। আসন পায় ১৯৩টি। অর্থাৎ একবারই ভোট বাড়ে ৭.২৬ শতাংশ।

তবে সবশেষ ২০০৮ সালের নির্বাচনে ভরাডুবি হয় দলটির। ৭.৬৬ শতাংশ ভোট কমে যাওয়া দলটি পায় ৩৩.২ শতাংশ।

২০০১ সালে আওয়ামী লীগ ৪০.২১ শতাংশ ভোট পেয়েও আসন সংখ্যার দিক দিয়ে অনেক পিছিয়ে ছিল। আর ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগ ভোট পায় ৪৯ শতাংশ। তাদের ছঁতে হলে বিএনপির নিজের ভোট বৃদ্ধির পাশাপাশি আওয়ামী লীগের ভোটও কমতে হবে।

এবার অবশ্য বিএনপির শরিকদের সবাই ধানের শীষ নিয়ে লড়ায় বিএনপির বাক্সে যোগ হবে জামায়াতের জোট। ২০০৮ সালে জামায়াত ভোট পেয়েছিল ৪.৬ শতাংশ। সে বছর তারা আলাদা প্রতীকে অংশ নেওয়ায় বিএনপির বাক্সে যোগ হয়নি সংখ্যাটি। আবার এবার এলডিপি, জেএসডি, গণফোরাম যোগ হওয়ায় আরো কিছু ভোট যোগ হবে।

ওদিকে আওয়ামী লীগও নেমেছে মহাজোট করে। ২০০৮ সালে ৭ শতাংশ ভোট পাওয়া জাতীয় পার্টি এবং প্রায় এক শতাংশ পাওয়া ১৪ দলের শরিকদের পাশাপাশি নতুন যোগ হয়েছে যুক্তফ্রন্ট, যাদেরও কিছু ভোট যোগ হতে পারে।

বিএনপি ও ঐক্যফ্রন্ট নেতারা মনে করছেন, ভোটাররা কেন্দ্রে যেতে পারলে পরিস্থিতি তাদের অনুকূলে থাকবে। যে কারণে শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত মাঠে থেকে ফলাফল দেখতে চায় বিএনপি জোট।

অবশ্য ভোট বিপ্লব আদৌ সম্ভব কি না, এ নিয়ে সংশয়ের কথাও বলছেন বিএনপি নেতারা। বলছেন, বৈরী পরিবেশে তাদের প্রচার চালাতে হয়েছে। গ্রেপ্তার হয়েছে ১০ হাজারের বেশি। আট শতাধিক মামলা হয়েছে। প্রার্থীসহ কয়েক হাজার নেতাকর্মী প্রতিপক্ষের হামলায় আহত হয়েছে।

বিএনপির নির্বাচন পরিচালনা কমিটির নেতা ও কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান সেলিমা রহমান ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘আমাদের নানা শঙ্কা আছে। তবে ভোটাররা কেন্দ্রে যেতে পারলে ফল আমাদের অনুকুলে হবেই। আমরা সেই চেষ্টা আর আহ্বানই করছি।’

‘তবে ভোটের দিন অন্যরকম পরিস্থিতির তৈরি করে সরকারি দল ভোটারদের কেন্দ্রে যাওয়ার আগ্রহ নষ্ট করে দিতে পারে এমন কথাও শোনা যাচ্ছে। তবে আমরা আমাদের সব চেষ্টা দিয়ে কর্মীদের মাঠে থাকার কথা বলছি।’

বিএনপি নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ভোটের দিন পর্যন্ত সবাইকে গ্রেপ্তার এড়িয়ে চলার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। এছাড়াও নিজ নিজ এলাকার কেন্দ্রের দিকেও ভোটের আগের রাত থেকে চোখ রাখতে বলা হয়েছে। কোনো ধরণের ভিন্ন পরিস্থিতি দেখলে দ্রুত নির্বাচন কমিশন, এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে অবগত করার কথা বলা হয়েছে।’

বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক বিলকিস জাহান শিরিন ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘কেন্দ্র থেকে বারবার বলা হচ্ছে ভোটের দিন মাঠে থাকার জন্য। কারণ ভোটের দিন ভোটার এবং নেতাকর্মীদের উপস্থিতি যত বেশি হবে ততই পরিবেশ ভালো থাকবে।’

বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আহমেদ আযম খান ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘সার্বিক অবস্থা ভয়াবহ ও নজিরবিহীন। এমনটা কখনো দেখিনি। প্রার্থীরা অবরুদ্ধ, হাজার হাজার কর্মী আটক। সুষ্ঠু ভোট হবে না কারণ আদৌ সেই পরিবেশ নেই। তারপরও আমরা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় যেতে দেব না। মাটি কামড়ে থাকব। আমাদের প্রত্যাশা ভোটারদের কাছে শত বাধা উপেক্ষা করে ভোটবিপ্লব হবে।’

বিএনপি ও ঐক্যফ্রন্টের পক্ষ থেকে ইতিমধ্যে তরুণ ভোটারদের টার্গেট করে শীর্ষ পর্যায় থেকে ভোট প্রার্থনা করা হয়েছে। এবারের নির্বাচনে তরুণ ভোটার প্রায় দুই কোটি ৪০ লাখের মত। এই ভোট নির্বাচনে বড় ফ্যাক্টর হবে বলে মনে করা হচ্ছে।

তরুণদের পছন্দের প্রার্থীকে সকাল সকাল ভোট দেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও ঐক্যফ্রন্টের নেতা কামাল হোসেন।

বিএনপির নেতারা জানান, ‘কেন্দ্র পাহারা কমিটি’ গঠনের নির্দেশনা দিয়ে এবার ভোটের ফলাফল গণনা শেষ না হওয়া পর্যন্ত যেকোনো মূল্যে কেন্দ্রে অবস্থান করার জন্যও বলা হয়েছে।

রাজশাহী মহানগর বিএনপির সভাপতি মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘ভোট কেন্দ্র পাহারা দেয়ার জন্য আমাদের কমিটি আছে। তারা কাজ করছে। সদর আসনে আশা করি ভালো করে মাঠে থাকতে পারব।’

সংবাদটি শেয়ার করুন

রাজনীতি বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

রাজনীতি এর সর্বশেষ

আওয়ামী লীগ নিজেদের নৌকা নিজেরাই ডুবিয়েছে: মঈন খান

দেশের মানুষকে আর বোকা বানানো যাবে না: সালাম

নির্বাচনের পর বিরোধী দলগুলোর ওপর নানা কায়দায় নির্যাতন চালাচ্ছে আ.লীগ: মির্জা ফখরুল

বিএনপিসহ গণতন্ত্রকামী জনগণকে সরকার বন্দি করে রেখেছে: রিজভী 

গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে প্রশ্নবিদ্ধ করার পাঁয়তারায় বিএনপি: ওবায়দুল কাদের

ব্রিটিশ হাইকমিশনারের সঙ্গে বিএনপির বৈঠক

এমপি-মন্ত্রীর স্বজনদের উপজেলা নির্বাচনে প্রার্থী হতে আ.লীগের ‘মানা’

মুজিবনগর সরকারের ৪০০ টাকা বেতনের কর্মচারী ছিলেন জিয়াউর রহমান: পররাষ্ট্রমন্ত্রী

বিএনপি নেতা হাবিব কারাগারে

উপজেলা নির্বাচন সরকারের আরেকটা ‘ভাঁওতাবাজি': আমীর খসরু

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :