পরিসংখ্যানে ১০ সংসদ নির্বাচন

মহিউদ্দিন মাহী
 | প্রকাশিত : ৩০ ডিসেম্বর ২০১৮, ১০:১২

আজকের ভোটের আগেও সরকার নির্বাচনে দেশে ভোট হয়েছে ১০টি। এর মধ্যে তিনটি নির্বাচন হয়েছে একতরফা। প্রথমটি জাতীয় পার্টির আমলে, পরেরটি বিএনপির শাসনামলে এবং সর্বশেষ ২০১৪ সালেরটি।

স্বাধীনতার পর প্রথম সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের কার্যত কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী ছিল না। তবে বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর প্রথমে জিয়াউর রহমান এবং পরে হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের সেনা শাসনামলে জন্ম হয় যথাক্রমে বিএনপি ও জাতীয় পার্টির।

রাজনৈতিক অঙ্গনে এখন প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগ ও বিএনপি। এবারের নির্বাচনে দুটি দলই জোট করে অংশ নিচ্ছে। আওয়ামী লীগের জোটে আছে সেনা শাসনামলে জন্ম নেওয়া জাতীয় পার্টি আর বিএনপির জোটে আছে স্বাধীনতাবিরোধী জামায়াতে ইসলামী। এই দুটি দল ছাড়াও ছোট ছোট আরও বেশ কয়েকটি দল আছে দুই জোটে।

প্রথম জাতীয় সংসদ নির্বাচন

স্বাধীন বাংলাদেশে ১৯৭৩ সালের ৭ মার্চ প্রথম সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। মোট ভোট পড়ে ৫৩.৫৪ দশমিক ৯১ শতাংশ।

আওয়ামী লীগ ৭৩ শতাংশ ভোট এবং ২৯৩টি আসন পেয়ে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায়। প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী ন্যাপ (মোজাফফর) ৮.৩৩ শতাংশ ভোট পেলেও কোনো আসন পায়নি। জাসদ ৬.৫২ শতাংশ ভোট পেয়ে আসন পায় একটি। স্বতন্ত্র প্রার্থীরা ৫.২৫ শতাংশ ভোট পান। আসন পান পাঁচটি।

প্রথম সংসদ নির্বাচনে ভোটার ছিল তিন কোটি ৫২ লাখ পাঁচ হাজার ৬৪২ জন। অংশ নেয় ১৪টি দল। মোট প্রার্থী এক হাজার ৮৯ জন।

দ্বিতীয় সংসদ নির্বাচন

জিয়াউর রহমানের সেনা শাসনামলে দ্বিতীয় সংসদ নির্বাচনে ১৯৭৯ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি ভোট গ্রহণ হয়। মোট ভোট পড়ে ৪৯.৬৭ শতাংশ।

ভোটের মাস ছয়েক আগে গঠিত বিএনপি সে সময় ৪১.১৬ শতাংশ ভোট পায়, আসন পায় ২০৭টি। দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা আওয়ামী লীগ ভোট পায় ২৪.৫৫ শতাংশ, আসন পায় ৩৯টি।

স্বাধীনতাবিরোধী মুসলিম লীগ এই নির্বাচনে লড়াইয়ের সুযোগ পায়, তাদের বাক্সে পড়ে ১০.০৮ শতাংশ। আসন পায় ২০টি। জাসদ ৪.৮৪ শতাংশ ভোট নিয়ে আসন পায় আটটি। স্বতন্ত্র প্রার্থীরাও পায় ১০.১০ শতাংশ ভোট, আসন পায় ১৬টি।

দ্বিতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোটার ছিল তিন কোটি ৮৭ লাখ ৮৯ হাজার ২৩৯ জন। অংশ নেয় ২৯টি দল। মোট প্রার্থী দুই হাজার ১২৩ জন।

তৃতীয় সংসদ নির্বাচন

হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের সেনা শাসনামলে তৃতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোট হয় ১৯৮৬ সালের ৭ মে। বিএনপি তখন ভোট বর্জন করে। তখন মোট ভোট পড়ে ৫৯.৫৮ শতাংশ।

নবগঠিত দল জাতীয় পার্টি ৪২.৩৪ শতাংশ ভোট নিয়ে আসন পায় ১৫৩টি। নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগ ভোট পায় ২৬.১৫ শতাংশ, আসন পায় ৭৬টি। তাদের শরিক দল ন্যাপ ও সিপিবি পায় তিনটি। স্বাধীনতাবিরোধী জামায়াত প্রথমবারের মতো অংশ নেয় এই নির্বাচনে। আসন পায় ১০টি, ভোট পায় ৪.৬১ শতাংশ।

জাসদ ওই নির্বাচনে ৩.৪১ শতাংশ ভোট পেয়ে আসন পায় সাতটি। স্বতন্ত্র প্রার্থীরা জেতে ৩২ আসনে, ভোট পায় ১৬.১৯ শতাংশ।

এই নির্বাচনে মোট ভোটার ছিলেন চার কোটি ৭৮ লাখ ৭৬ হাজার ৯৭৯ জন। অংশগ্রহণকারী দল ছিল ২৮টি। মোট প্রার্থী ছিলেন এক হাজার ১২৪ জন।

চতুর্থ সংসদ নির্বাচন

১৯৮৮ সালের ৩ মার্চ এই নির্বাচন বর্জন করে আওয়ামী লীগ, বিএনপিসহ মূলধারার দলগুলো। বর্তমানে ঐক্যফ্রন্টে বিএনপির শরিক জেএসডির আ স ম আবদুর রব সম্মিলিত বিরোধী দল নামে একটি জোট করে ভোটে যান।

ওই নির্বাচনে ভোট পড়ে ৫৪.৯৩ শতাংশ। একতরফা ওই নির্বাচনে জাতীয় পার্টি ৬৮.৪৪ শতাংশ ভোট পায়, আসন পায় ২৫১টি। রবের সম্মিলিত বিরোধী দল ১২.৬৩ শতাংশ ভোট এবং ১৯টি আসন পায়। বর্তমানে বিএনপির নেতা শাজাহান সিরাজের নেতৃত্বাধীন জাসদ ১.২ শতাংশ ভোট পেয়ে তিনটি আসন পায়। বঙ্গবন্ধুর খুনি কর্নেল ফারুক রহমানের ফ্রিডম পার্টি ০.৯৪ শতাংশ ভোট নিয়ে পায় দুটি আসন।

স্বতন্ত্র প্রার্থীরা সে সময় আসন লাভ করে ২৫টি, অন্যান্য ২৪টি আসন পায়। মোট ভোট পড়ে ৫৭ দশমিক ৯০ শতাংশ। এই সংসদের মেয়াদকাল ছিল ১৫ এপ্রিল ১৯৮৮ থেকে ৬ ডিসেম্বর ১৯৯০ পর্যন্ত।

এই নির্বাচনে মোট ভোটার ছিলেন চার কোটি ৯৮ লাখ ৬৩ হাজার ৮২৯ জন। অংশ নেয় নয়টি দল। মোট প্রার্থী ছিলেন ৯১৯ জন।

পঞ্চম সংসদ নির্বাচন

১৯৯১ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি ভোট হয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে। ভোট পড়ে ৫৪.৯৩ শতাংশ।

ওই নির্বাচনে বিএনপি ৩০.৮১ শতাংশ ভোট নিয়ে আসন পায় ১৪০টি। ৩০.০৮ শতাংশ ভোট নিয়ে আওয়ামী লীগ ৮৮টি আসন নিয়ে হয় নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী।

জাতীয় পার্টি ৩৫টি আসন এবং ১১.৯২ শতাংশ ভোট পায়। জামায়াত পায় ১২.১৩ শতাংশ ভোট, আসন পায় ১৮টি। ১.৮১ শতাংশ ভোট নিয়ে বাকশাল আসন পায় পাঁচটি। আওয়ামী লীগের সমর্থন নিয়ে সিপিবি পায় পাঁচটি আসন, ভোট পায় ১.১৯ শতাংশ।

স্বতন্ত্র প্রার্থীরা ৪.৩৯ শতাংশ ভোট পেলেও কোনো আসন পায়নি। অন্যান্য দল ৪.৭৮ শতাংশ ভোট পেয়ে আসন পায় তিনটি।

এই নির্বাচনে মোট ভোটার ছিলেন ছয় কোটি ২০ লাখ ৮১ হাজার ৭৯৩ জন। অংশগ্রহণকারী দলের সংখ্যা ৭৫। প্রার্থী ছিলেন দুই হাজার ৭৮৭ জন।

ষষ্ঠ সংসদ নির্বাচন

১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টিসহ প্রধান দলগুলোর বর্জনের মুখে বিএনপি একতরফা ভোটে জিতে আসে। ভোট পড়ে ২৬.৭৪ শতাংশ। কোন দল কত শতাংশ ভোট পেয়েছিল, তার হিসাব নেই। বিএনপি ২৭৮টি, ফ্রিডম পার্টি একটি এবং স্বতন্ত্র প্রার্থীরা ১০টি আসন পেয়েছিল বলে তথ্য আছে নির্বাচন কমিশনে।

একতরফা নির্বাচনে ভোটার ছিলেন পাঁচ কোটি ৬১ লাখ ৪৯ হাজার ১৮২ জন। অংশগ্রহণকারী দলের সংখ্যা ৪২। প্রার্থীসংখ্যা এক হাজার ৪৫০ জন।

সপ্তম সংসদ নির্বাচন

১৯৯৬ সালের ১২ জুন সপ্তম সংসদ নির্বাচনে ভোট পড়ে ৭৫.৬০ শতাংশ।

আওয়ামী লীগ ৩৭.৪৪ শতাংশ ভোট পেয়ে সবচেয়ে বেশি ১৪৬টি আসন পায়। নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপি ৩৩.৬০ ভোট নিয়ে পায় ১১৬টি আসন। তৃতীয় অবস্থানে থাকা জাতীয় পার্টি ৩২টি আসনে জেতে। ভোট পায় ১৬.৪০ শতাংশ। জামায়াত ৮.৬১ শতাংশ ভোট পেয়ে জেতে তিনটি আসন।

এই নির্বাচনে মোট ভোটার ছিলেন পাঁচ কোটি ৬৭ লাখ দুই হাজার ৪২২ জন। অংশগ্রহণকারী দলের সংখ্যা ৮১। মোট প্রার্থী ছিলেন দুই হাজার ৫৭৪ জন।

অষ্টম সংসদ নির্বাচন

ভোট গ্রহণ হয় ২০০১ সালের ১ অক্টোবরের নির্বাচনে ভোট পড়ে ৭৫.৫৯ শতাংশ।

ওই নির্বাচনে বিএনপি ৪০.৮৬ শতাংশ ভোট নিয়ে আসন পায় ১৯৩টি। বিএনপির শরিক জামায়াতে ইসলামী ৪.২৯ শতাংশ ভোট পেয়ে আসন পায় ১৭টি। আরেক শরিক জাতীয় পার্টি (না-ফি) ১.১২ শতাংশ ভোট পেয়ে চারটি আসন পায়। ইসলামী ঐক্যজোট ০.৬৮ শতাংশ ভোট নিয়ে আসন পায় দুটি।

নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগ ৬২টি আসন এবং ভোট পায় ৪০.২১ শতাংশ।

জাতীয় পার্টি ওই নির্বাচনে ৭.২৬ শতাংশ ভোট এবং আসন পায় ১৪টি।

এই নির্বাচনে মোট ভোটার ছিলেন সাত কোটি ৪৯ লাখ ৪৬ হাজার ৩৬৮ জন। ভোটে অংশ নেয় ৫৫টি দল। প্রার্থী ছিলেন এক হাজার ৯৩৯ জন।

নবম সংসদ নির্বাচন

স্বাধীনতার পর ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বরের নির্বাচনে সবচেয়ে বেশি ভোট পড়েছে, ৮৭.১৩ শতাংশ।

আওয়ামী লীগ এককভাবে ৪৮.০৪ শতাংশ ভোট নিয়ে আসন পায় ২৩০টি। জোটের শরিক জাতীয় পার্টি ৭.০৪ শতাংশ ভোট পেয়ে আসন পায় ২৭টি। নৌকা নিয়ে জাসদ ০.৬ শতাংশ ভোট নিয়ে তিনটি এবং ওয়ার্কার্স পার্টি ০.৩ শতাংশ ভোট পেয়ে পায় দুটি আসন।

বিএনপি ওই নির্বাচনে আসন পায় ৩০টি। ভোট পায় ৩২.৫ শতাংশ। তাদের শরিক জামায়াতে ইসলামী ৪.৭ শতাংশ ভোট নিয়ে আসন পায় দুটি। আরেক শরিক বিজেপি ০.২৫ শতাংশ ভোট নিয়ে আসন পায় একটি। স্বতন্ত্র প্রার্থীরা ২.৯৪ শতাংশ ভোট পেয়ে আসন পায় চারটি।

এই নির্বাচনে ভোটার ছিলেন আট কোটি ১০ লাখ ৮৭ হাজার তিনজন। অংশগ্রহণকারী দলের সংখ্যা ৩৮। মোট প্রার্থী এক হাজার ৫৬৭ জন।

দশম সংসদ নির্বাচন

২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচন বর্জন করে বিএনপি-জামায়াত জোট ও সমমনারা। ১৫৩টি আসনে একজন করে প্রার্থী থাকার কারণে সেখানে ভোট হয়নি। বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন তারা। বাকি আসনগুলোতে সব মিলিয়ে ওই বছর ভোট পড়ে ৪০.০৪ শতাংশ।

প্রদত্ত ভোটের ৭২.১৪ শতাংশ নিয়ে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায় আওয়ামী লীগ। আসন পায় ২৩৪টি। নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী জাতীয় পার্টি ৩৪টি আসন এবং ৭ শতাংশ ভোট পায়।

তৃতীয় অবস্থানে থাকা ওয়ার্কার্স পার্টি ২.১ শতাংশ ভোট নিয়ে আসন পায় ছয়টি; ১.১৯ শতাংশ ভোট নিয়ে জাসদ আসন পায় পাঁচটি। ১.০৪ শতাংশ ভোট পেয়ে তরীকত ফেডারেশন আসন পায় দুটি; ০.৭৪ শতাংশ ভোট নিয়ে জাতীয় পার্টি (জেপি) আসন পায় দুটি। স্বতন্ত্র প্রার্থীরা ১৫.০৬ শতাংশ ভোট নিয়ে আসন পায় ১৬টি।

এই নির্বাচনে ভোটার নয় কোটি ১৯ লাখ ৬৫ হাজার ১৬৭ জন। অংশগ্রহণকারী দলের সংখ্যা ১২। মোট প্রার্থী ৫৪৩ জন।

সংবাদটি শেয়ার করুন

রাজনীতি বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

রাজনীতি এর সর্বশেষ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :