অভূতপূর্ব অভিজ্ঞতা!

সাবিহা ইয়াসমিন ইসলাম
| আপডেট : ৩১ ডিসেম্বর ২০১৮, ১১:০২ | প্রকাশিত : ৩০ ডিসেম্বর ২০১৮, ২১:১৪

আজ ৩০/১২/ ২০১৮ তারিখে সকালের প্রথম দিকে মোবাইল ছাড়া ভোট দিয়ে বাসায় এসে আমার বারান্দার গাছে পানি দেবার সময় আমার বৃদ্ধাঙ্গুলির অমোচনীয় কালির দাগের দিকে নজর পড়তেই মনটা আনন্দে ভরে যায়। কারণ আমি নিশ্চিত শান্তিপূর্ণ পরিবেশে ভোট দিয়ে নিরাপদে বাসায় ফিরেছি। কেন জানি না মনে হলো যে, আমি এই শুভক্ষণের স্মৃতি ক্যামেরাতে ধারণ করে রাখি। আমি মোবাইলটি নিয়ে আমার গাছগুলোর পাশেই আমার কালিমাখা বৃদ্ধাঙ্গুলির দুইটি ছবি তুলে ফেলি এবং ছবি দুটি আমি সাথে সাথেই ফেসবুকে পোস্ট করি। সারাদিন বহুমুখী ব্যস্ততায় ফেসবুক আর খুলে দেখা হয়নি । বিকাল প্রায় চারটার দিকে ফেসবুকের ফিড গুলি দেখতে গিয়ে অবাক হয়ে দেখি বিএনপি দলীয় একজন বিশিষ্ট নেতার ( নমিনেশন বঞ্চিত ) পরমা সুন্দরী স্ত্রী আমার অমোচনীয় কালিমাখা বৃদ্ধাঙ্গুলির একটি ছবি আমার আজান্তে তার ফেসবুকে সংজুক্ত করে ক্যাপশন দিয়েছেন ‘এইমাত্র ভোট দিয়ে এলাম’।

অবাক করা ব্যপার – আমার আঙ্গুলের ছবিতে অন্য একজনের ক্যাপশন, ‘এইমাত্র ভোট দিয়ে এলাম-- ।’ আমি তার পোস্টে কমেন্ট করে এর কারণ জানতে চাইলে তিনি প্রথমে আমার কমেন্ট মুছে দেন, এরপর আমি আবার তাকে কমেন্ট বক্সে জিজ্ঞাসা করি কেন তিনি নিজের বৃদ্ধাঙ্গুলির ছবি না ছেপে আমার বৃদ্ধাঙ্গুলির ছবিটি ছেপেছেন? তিনি যেন আমার ছবিটি সরিয়ে তার নিজের বৃদ্ধাঙ্গুলির ছবি সংযুক্ত করেন এবং সেটিই হবে অনেক প্রশংসনীয়। তিনি তার ম্যাসেঞ্জার বক্স থেকে আমাকে জানান যে, আমার আঙ্গুলের ছবি তার খুব ভালো লেগেছে, তাই তিনি ছেপেছেন। তিনি আরও জানান যে, তিনি ভোট ঠিকই দিয়েছেন কিন্তু কেন্দ্র থেকে ভুলে তার আঙ্গুলে অমোচনীয় কালি লাগানো হয়নি। তাই তিনি আমার আঙ্গুলের ছবি সংযুক্ত করেছেন! আমার আপত্তিতে পরবর্তীতে তিনি আমার আঙ্গুলের ছবিটি তার ‘পেজ’ থেকে সরিয়ে ফেলেন ।

তার ওপর কর্মকাণ্ডের জন্য যতটুকু না রাগ করেছি তার চেয়ে বেশি খুশি হয়েছি তার কাছ থেকে আমার আঙ্গুলের প্রশংসা শুনে। বিএনপির একজন বিশিষ্ট নেতার (নমিনেশন বঞ্চিত ) স্ত্রী হিসেবে তিনি এবার ভোট দিয়েছেন কি দেননি এটা নিয়ে মন্তব্য করতে চাই না। কারণ তাকে আমি ফেসবুক ছাড়া ব্যক্তিগতভাবে চিনি না। তবে আমার খুব কাছ থেকে চেনা বিএনপি দলীয় একনিষ্ঠ সমর্থক কিছু পরিবার যাদের বিএনপির ভবিষ্যৎ চিন্তায় এবং শুভ কামনায় রাতে ঘুম আসে না , এদের একটি পরিবার প্রধান দ্বারা ২০১৪ সালে ইলেকশনের পর গোপালগঞ্জে বাড়ি হবার কারণে আমি আক্রান্ত হয়েছিলাম। কারন বিএনপি ক্ষমতায় এলে জামায়াতের কোটা হতে পরিবার প্রধানের বিচারপতির আসনটি নিশ্চিত হয়েছিল। আওয়ামী লীগের একক নির্বাচনের কারণে তার সেই নিশ্চিত আসনটি হাতছাড়া হয়ে গিয়েছিল! আর আমার আক্রান্ত হওয়ার ছিল আমার বাড়ি টুঙ্গিপাড়া গোপালগঞ্জ!

এবার ইচ্ছে করে কাছ থেকে অবাক হয়ে দেখলাম তাদের কারোরই বিএনপির পক্ষে ভোট দেবার কোনো আগ্রহ নেই। ঢাকার বাইরে তাদের ভোটকেন্দ্র, তারা ঢাকা আঁকড়ে পড়ে আছেন। এসব একনিষ্ঠ বিএনপি সমর্থক সময়মত ভোট দেবেন না অথচ আশা করে বসে থাকবেন যে সাধারণ জনগণ বিএনপির পক্ষে ভোটের বন্যা বইয়ে দেবে। আর বিএনপি ক্ষমতায় এলে এসব সুবিধাবাদীরা সুবিধাজনক পদে সসম্মানে , সযত্নে আসীন হবেন। এবার সাধারণ জনগণ তাদের উপযুক্ত স্থানে ভোটদানের মাধ্যমে সুবিধাবাদীদের উপযুক্ত জবাব দিয়ে দিয়েছে।

খুব সামান্য ব্যক্তি হিসেবে পরামর্শ থাকবে দল ছেড়ে বিএনপি থেকে আওয়ামী লীগে যোগদানে যেন কাউকে উৎসাহিত করা না হয়। বরং আওয়ামী লীগ থেকে যেন এসব দলছুটদের সহযোগিতা করা হয়ে যাতে এসব দলছুটরা সহজে একটি নিবন্ধিত নতুন দল গঠন করে রাজনীতিতে সক্রিয় থাকতে পারেন। এতে গণতন্ত্র সমুন্নত থাকবে এবং দীর্ঘ সময় ধরে ত্যাগী দলীয় সমর্থকরা দলছুট সমর্থক দ্বারা সুবিধা বঞ্চিত হবেন না।

নির্বাচনে বিজয়ী সবার জন্য সশ্রদ্ধ শুভেচ্ছা , শুভ কামনা।

লেখক: অ্যাডভোকেট, সুপ্রিম কোর্ট, বাংলাদেশ

সংবাদটি শেয়ার করুন

মতামত বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :