রাজশাহীতে নৌকার জয়ের নেপথ্যে

রিমন রহমান, রাজশাহী
 | প্রকাশিত : ০২ জানুয়ারি ২০১৯, ১৯:০৭

এক সময় রাজশাহী অঞ্চলে ধানের শীষের আধিপত্য ছিল। তবে পদ্মাপাড়ের এই জেলা এখন নৌকার দখলে। নবম ও দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে রাজশাহীর ছয়টি আসনের সব কটিতেই এমপি হন আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোটের প্রার্থীরা। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও ছয় আসনের প্রতিটিতে বিপুল ভোটে আবারও জয়ী হয়েছে মহাজোট।

নির্বাচনের পর এখন জয়-পরাজয়ের বিশ্লেষণ করছেন সংশ্লিষ্টরা। এখানে আওয়ামী লীগের জয়ের নেপথ্যে তিনটি বিশেষ কারণ মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। তারা মনে করছেন, আওয়ামী লীগের ঐক্যবদ্ধ হওয়া এবং বিগত ১০ বছরে রাজশাহীতে সরকারের দৃশ্যমান উন্নয়ন কর্মকা- ও জনসম্পৃক্ততা জয়ের ব্যাপারে ভূমিকা রেখেছে। তরুণ ও নারী ভোটাররা উন্নয়নের পক্ষে একচেটিয়া রায় দেওয়ায় রাজশাহীর সবকটি আসনে বিপুল ব্যবধানে জয় পেয়েছেন নৌকার প্রার্থীরা।

একইভাবে বিএনপির প্রার্থীদের জনবিচ্ছিন্নতা, উন্নয়নে কোনো অবদান না রাখা এবং তরুণ প্রজন্মকে সম্পৃক্ত না করতে পারায় ভরাডুবি হয়েছে তাদের। এ ছাড়া জামায়াতসঙ্গ ও জঙ্গি-সংশ্লিষ্টতার কারণে বিএনপি প্রার্থীদের প্রত্যাখ্যান করেছেন রাজশাহীর মানুষ। রাজশাহীর জঙ্গি মদদদাতাদের এবারও মনোনয়ন দেওয়া হয়। তরুণ প্রজন্মকে কোনো আশাও দিতে পারেনি তারা। এ কারণে তরুণ প্রজন্ম বিএনপির প্রতি কোনো ভরসা রাখতে পারেনি। নারীরাও মুখ ফিরিয়েছেন বিএনপি থেকে। আর দলীয় কোন্দল তীব্র আকার ধারণ করায় নিজেদের মধ্যেও বিভেদ সৃষ্টি হয় চরমে। ফলে নেতায় নেতায় দ্বন্দ্ব প্রকট আকার ধারণ করে ভোটের আগে থেকেই। ভোটের প্রচারেও তাদের দ্বন্দ্ব ছিল প্রকট। এসব কারণেই নির্বাচনে ভরাডুবি হয়েছে ধানের শীষের।

রাজশাহী বিএনপির শীর্ষ এক নেতা বলেন, তাদের দল নির্বাচনে লক্ষ্যই ঠিক করতে পারেনি। শুরু থেকেই ছিল এলোমেলো। প্রার্থীরা সবাই ছিলেন জনবিচ্ছিন্ন, মানুষের কাছে যেতেই পারেননি। গত ১২ বছরের বেশি সময় ধরে এলাকায় না ফিরে হঠাৎ ভোটের মাঠে নেমে বেকায়দায় পড়েন। অনেকের বিরুদ্ধে জঙ্গি মদদদানের মামলা রয়েছে। তাদের সাধারণ মানুষ নাশকতাকারী হিসেবে মনে করেছেন। তাই ভোটে জবাব দিয়েছেন।

রাজশাহী বিশ^বিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক আলী আজম শান্তনু বলেন, বিএনপির ক্ষেত্রে জনবিচ্ছিন্নতা যেমন পরাজয়ের মূল কারণ তেমনিভাবে বিপুল জয়ে আওয়ামী লীগের নেপথ্যে রয়েছে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার বিষয়টি। আগে থেকেই বলা হচ্ছিল, ঐক্যবদ্ধ আওয়ামী লীগকে কেউ হারাতে পারবে না। মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্বদানকারী দলটি ভোটের আগেই সব দ্বন্দ্ব-বিভেদ ভুলে ঐক্যবদ্ধ হয়ে মাঠে সক্রিয় ছিল। শুরু থেকেই পরিকল্পনা অনুসারে আওয়ামী লীগের সব পর্যায়ের নেতাকর্মীদের ঐক্যবদ্ধভাবে সম্পৃক্ত করতে পারায় এবারো রাজশাহীর সবকটি আসনে বিপুল ব্যবধানে জয় পেয়েছেন নৌকার প্রার্থীরা। বিগত ১০ বছরে রাজশাহীতে সরকারের দৃশ্যমান অনেক উন্নয়ন কর্মকা- ও জনসম্পৃক্ততাও এ জয়ের ব্যাপারে ভূমিকা রেখেছে। তরুণ ও নারী ভোটাররা উন্নয়নের পক্ষে নৌকায় একচেটিয়া রায় দিয়েছেন এবার। রাজশাহী আওয়ামী লীগের নেতারা বলছেন, এবারও রাজশাহীর সবকটি আসনে নৌকার জয়ের টার্গেট নিয়ে মাঠে সক্রিয় ছিল আওয়ামী লীগ। তফসিল ঘোষণার আগে ও পরে মনোনয়ন নিয়ে দলীয়ভাবে নানা বিভক্তি দেখা দিলেও নৌকার পক্ষে সবাই এক হয়ে মাঠে নেমেছিলেন। ভোটের মাঠে নেতায়-নেতায় দ্বন্দ্ব-বিভেদ কাটিয়ে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ করে ভোটের মাঠে সবচেয়ে সোচ্চার ছিলেন রাজশাহী সিটি করপোরেশনের মেয়র এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন। নৌকার জয় এনে দিতে দিন-রাত সমান করে ভোটের মাঠে ছিলেন তিনি। রাজশাহী ১৪ দলের সমন্বয়ক ও মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি লিটনের নেতৃত্বেই রাজশাহীর সব আসনেই নৌকার পক্ষে একাট্টা হয় আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সব সংগঠন। পৃথকভাবে মাঠেও নেমেছিলেন তারা। ভোটের মাঠে শুরুতেই তুলেছিলেন শক্ত আওয়াজ। এ কারণে আওয়ামী লীগ সবকটি আসনে জয় পেয়েছে বলে মনে করছেন তারা।

নেতারা বলছেন, উন্নয়নের সঙ্গী হয়েই আবারও নৌকাতেই ভরসা রেখেছেন রাজশাহীর সাধারণ মানুষ। বিপুল ভোটে উন্নয়নের প্রতীক নৌকাকে বিজয়ী করেছেন তারা।

এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন বলেন, একদিকে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের নৌকা প্রতীক, অন্যদিকে বিপক্ষের প্রতীক ধানের শীষ। তিনি বলেন, জামায়াত যুদ্ধাপরাধী দল। ইতোমধ্যে তাদের দলের নিবন্ধন বাতিল হয়েছ। এতকিছুর পরও সেই দলের নেতাদের ধানের শীষের প্রতীক দিয়েছে বিএনপি। রাজশাহীর মানুষ সেটি মেনে নেননি।

রাজশাহীর ৬টি আসনের মধ্যে চারজনই হ্যাটট্রিক জয় পেয়েছেন। একজন দ্বিতীয়বারের মতো ও একজন নবাগত প্রার্থী জয়লাভ করেছেন। রাজশাহী-১ আসনে ওমর ফারুক চৌধুরী, রাজশাহী-২ আসনে ফজলে হোসেন বাদশা, রাজশাহী-৪ আসনে ইঞ্জিনিয়ার এনামুল হক ও রাজশাহী-৬ আসনে শাহরিয়ার আলম তৃতীয়বারের মতো নির্বাচিত হয়েছেন। এ ছাড়া রাজশাহী-৩ আসনে আয়েন উদ্দিন দ্বিতীয়বারের মতো এবং রাজশাহী-৫ আসনে নতুন মুখ ডা. মনসুর রহমান বিজয়ী হয়েছেন।

সংবাদটি শেয়ার করুন

রাজনীতি বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

রাজনীতি এর সর্বশেষ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :