‘গুলবাগী’র ডিগবাজিতে হতভম্ব বিএনপি

প্রকাশ | ০৫ জানুয়ারি ২০১৯, ০৯:২৭ | আপডেট: ০৫ জানুয়ারি ২০১৯, ১০:২৯

প্রতীক ওমর, বগুড়া

বগুড়া-৭ আসনে দলের প্রার্থী শূন্য হয়ে যাওয়ার পর স্বতন্ত্র প্রার্থী রেজাউল করিম বাবুলের ওপর ভরসা রেখে তাকেই সমর্থন দিয়ে ঠকেছে বিএনপি। ধানের শীষের ঘাঁটিতে দলটির কর্মী-সমর্থকদের ভোটে জিতে এসে তিনি ভুলে গেছেন পেছনের কাহিনি। বিএনপির বিজয়ীরা না নিলেও তিনি ঠিকই সংসদ সদস্য হিসেবে শপথ নিয়েছেন। আর এতে খেপেছে বিএনপি।

স্থানীয় বা জাতীয় নির্বাচন মানেই প্রার্থী বাবুল। তবে জয়ের মালা এবারই প্রথম। স্থানীয়ভাবে গুলবাগী হিসেবে পরিচিত এই ব্যক্তির যে তেমন কোনো জনপ্রিয়তা বা গ্রহণযোগ্যতা ছিল না, সেটা গত উপজেলা নির্বাচনেও দেখা গেছে। ১৭ ভোট পেয়ে তিনি জামানত হারান সে সময়।
এই আসন থেকে নির্বাচন করতেন বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। দুর্নীতির মামলায় দ-িত এই নেত্রী ভোটে অযোগ্য ঘোষিত হওয়ার পর বিএনপি প্রার্থী করে মিল্টন মোরশেদকে। তবে উচ্চ আদালত তার প্রার্থিতা বাতিল করে দেয়। এতে বিএনপির প্রার্থীশূন্য হয়ে পড়ে আসনটি। তবে বাবুলকেই সমর্থন দেয় তারা।
বিএনপিভক্ত গাবতলী ও শাহজাহানপুর উপজেলার ভোটাররা ধানের শীষ না পেয়ে দলের নির্দেশে ব্যাপকভাবে ভোট দেন গুলবাগীর ট্রাক মার্কায়। উপচে পড়ে ব্যালট বাক্স। গণনা শেষে দেখা যায়, বিএনপি-সমর্থিত স্বতন্ত্র প্রার্থীর পক্ষে ভোট পড়ে এক লাখ ৯০ হাজার ২৯৯টি। ডাব প্রতীক নিয়ে আরেক স্বতন্ত্র প্রার্থী ফেরদৌস আরা মিনু পেয়েছেন ৬৫ হাজার ২৯২ ভোট। তিনি ছিলেন আওয়ামী লীগের সমর্থিত। মহাজোটের প্রার্থী জাতীয় পার্টির আলতাফ আলী পান ২৬ হাজার ৫৪ ভোট।

৩০ ডিসেম্বরের এই নির্বাচনে সারা দেশে বিস্ময়কর রকমের কম ভোট ও আসন পাওয়া বিএনপি এই ভোটকে কারচুপি আখ্যা দিয়ে নতুন নির্বাচনের দাবি জানিয়েছে। বিএনপির পাঁচজন এবং গণফোরামের দুজন শপথ নেননি।

তবে বিএনপির এই সিদ্ধান্ত মানেননি গুলবাগী। বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদ ভবনে যে ২৮৯ জন সংসদ সদস্য শপথ নিয়েছেন, তাদের মধ্যে আছেন তিনিও। আর এর পর থেকে গণমাধ্যমকে এড়িয়ে চলছেন। বারবার ফোন করা হলেও তিনি কল ধরেন না। তবে শপথের আগের রাতে ফেসবুক স্ট্যাটাসে তিনি বলেন, ‘জনগণকে ধোঁকা দেওয়া যাবে না।’

গুলবাগী যে ডিগবাজি দিচ্ছেন, সেটা আগেই বোঝা গিয়েছিল। বিএনপি ভোটের ফল প্রত্যাখ্যান করলেও পরদিন তিনি বগুড়া জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মমতাজ উদ্দিনের সঙ্গে দেখা করে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন। এতে তাকে নিয়ে ক্ষোভ তৈরি হয় বিএনপি-পাড়ায়।

গাবতলী উপজেলা যুবদলের নেতা খোরসেদ আলম বলেন, ‘গুলবাগী উপজেলা নির্বাচনে ভোট পেয়েছিলেন ১৭। এবার বিএনপি সমর্থন দেওয়ায় প্রায় দুই লাখ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন তিনি। এই ভোটারদের সঙ্গে বেইমানি করলে এলাকায় অবাঞ্ছিত ঘোষণা করা হবে তাকে।’
বগুড়া সদর উপজেলা বিএনপির সভাপতি মাফতুন আহমেদ খান রুবেল বলেন, ‘তাকে (গুলবাগী) দলীয় সিদ্ধান্তের কথা জানানো হয়েছিল। তার পরও তিনি শপথ নিয়েছেন। এ বিষয়ে দলীয়ভাবে আবার সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’