দুই মেয়াদের বেশি নয়

বাদ পড়াদের প্রায় সবাই ১০ বছরের মন্ত্রী

প্রকাশ | ০৮ জানুয়ারি ২০১৯, ০৯:০৩ | আপডেট: ০৮ জানুয়ারি ২০১৯, ১১:৪৭

হাবিবুল্লাহ ফাহাদ

বড় পরিবর্তন এসেছে নতুন মন্ত্রিসভায়। প্রবীণরা অবসর পেয়েছেন। জায়গা করে নিয়েছেন তরুণরা। গত মন্ত্রিসভায় দাপুটে মন্ত্রীদের অনেকেই এবার আর নেই। ভাব যায়নি, এমন কয়েকজনও আছেন তালিকার বাইরে।

গেল মন্ত্রিসভার দাপুটে সদস্যদের বাদ পড়া নিয়ে আছে নানা আলোচনা। কোনোটা মুখরোচক, কোনোটা যৌক্তিক বিচারে। তবে এবারের মন্ত্রিসভার তালিকা বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, আওয়ামী লীগ সরকারের গত দুই মেয়াদে যারা বিরতিহীনভাবে মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী ছিলেন, তাদের দুজন ছাড়া কারোই ঠাঁই হয়নি এবারের মন্ত্রিসভায়।

এর বাইরে এক মেয়াদে গতবার মন্ত্রিসভায় ছিলেন এমন ২৯ জন মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও উপমন্ত্রী বাদ পড়েছেন। এদের অনেকে বয়সের ভারে ন্যুব্জ। শারীরিকভাবে এতটাই অসুস্থ, চলাফেরা করতেও অসুবিধা হয়। এ ছাড়া কর্মফল অনুকূল নয়, এমন বিবেচনাতেও পিছিয়ে পড়েছেন কেউ কেউ।

আবার ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের আগে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারে থাকার বিষয়টিও এখানে আমলে নেওয়া হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রে জানা গেছে।

আবার ২০০৯ সালের মন্ত্রিসভা থেকে এক মেয়াদ বিরতি শেষে ফিরেছেন চারজন। তারা হচ্ছেন আব্দুর রাজ্জাক, দীপু মনি, মুন্নুজান সুফিয়ান ও হাছান মাহমুদ।

এর বাইরে ব্যতিক্রম আছেন দুজন। যারা বর্তমান সরকারের টানা তিন মেয়াদেই মন্ত্রিসভায় জায়গা পেলেন। তাদের একজন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিমন্ত্রী স্থপতি ইয়াফেস ওসমান। তিনি ২০০৯ সালের ৬ জানুয়ারি গঠিত মন্ত্রিসভায় একই মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী ছিলেন। পরের বার ১২ জানুয়ারি ২০১৪ সালের মন্ত্রিসভার শুরুতেও ছিলেন একই পদে। পরে পদোন্নতি পেয়ে মন্ত্রী হন গত সরকারের মাঝামাঝিতে। গতকাল শপথ নেওয়া মন্ত্রিসভাতেও তিনি আছেন মন্ত্রী হয়ে। তবে মন্ত্রিসভায় ‘কবি’ বলে পরিচিত ইয়াফেস ওসমান বরাবরই টেকনোক্র্যাট কোটায় মন্ত্রিত্ব করছেন।

দ্বিতীয়জন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, যিনি ২০০৯ সালের সরকারের শেষ দিকে এসে রেলমন্ত্রী হিসেবে মন্ত্রিসভায় ঠাঁই পান। গত সরকারের শুরু থেকেই ছিলেন একই মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী হিসেবে। এবারও ধারাবাহিকতা রয়েছে তার।

সরকারের নীতিনির্ধারণী একটি সূত্রে জানা গেছে, ওবায়দুল কাদের সেতুমন্ত্রী থাকাকালেই দক্ষিণের মানুষের স্বপ্নের প্রকল্প পদ্মা সেতুর কাজ শুরু হয়েছে। সেতুর কাজ এখন পুরোদমে চলছে। কাদের মন্ত্রী হিসেবে শেষটাও দেখে যেতে চান। তার ইচ্ছার কথা সরকারপ্রধানকে বলায় ইচ্ছাপূরণের সুযোগ মিলেছে বলে তথ্য পাওয়া গেছে। যদিও সেটা যাচাই করা যায়নি।

আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের একাধিক নেতার সঙ্গে আলাপকালে জানা গেছে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নতুনদের সুযোগ করে দিতেই প্রবীণের বিকল্প খুঁজেছেন। তা ছাড়া টানা তিন মেয়াদে ক্ষমতায় এসেছে আওয়ামী লীগ। দলে অনেক প্রাজ্ঞ ও যোগ্য সংসদ সদস্য ছিলেন, যাদের মেধা ও অভিজ্ঞতা মন্ত্রিসভাকে আরও সমৃদ্ধ করতে পারে। এই ভাবনা থেকেই সম্ভাবনাময় সংসদ সদস্যদের মন্ত্রিসভায় তুলে এনেছেন তিনি।

আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর একজন সদস্য ঢাকা টাইমসকে বলেন, ২০০৯ ও ২০১৪ সালের মন্ত্রিসভার অনেকে ১৯৯৬ সালের মন্ত্রিসভায় ছিলেন। বঙ্গবন্ধু হত্যার দীর্ঘ সময় পর ৯৬ সালে আওয়ামী লীগ নতুন করে ক্ষমতায় আসে। তখন যাদের নিয়ে মন্ত্রিসভা গঠন করা হয়েছিল, তাদের মধ্যে তরুণরা ছিলেন। তখন তাদের সুযোগ দেওয়া হয়েছিল বলেই গত দুই মেয়াদে আওয়ামী লীগ একটি পূর্ণাঙ্গ অভিজ্ঞ মন্ত্রিসভা পেয়েছে।

বর্তমান প্রবীণদের অনেকেই মাঝ বয়সে মন্ত্রিসভায় এসেছিলেন। টানা কয়েক মেয়াদ মন্ত্রিত্ব করেছেন। এখন নতুনদের জন্য জায়গা ছেড়ে দিয়েছেন। আওয়ামী লীগে গণতন্ত্রের এই শুদ্ধ চর্চা বহুদিনের।

তবে এর পরও গত মন্ত্রিসভার দাপুটে মন্ত্রীদের অনেকের সুযোগ রয়েছে। এখনো অনেক মন্ত্রণালয়ের পূর্ণমন্ত্রী দেওয়া হয়নি। এ ছাড়া প্রধানমন্ত্রী নিজেও পাঁচটি মন্ত্রণালয় হাতে রেখেছেন। যেখানে গেল মন্ত্রিসভা থেকে কেউ উঠে আসতে পারেন বলে আলোচনা আছে।

তবে সরকারের সংশ্লিষ্ট সূত্রে কথা বলে জানা গেছে, টানা তৃতীয়বার ক্ষমতায় আসায় জনগণের কাছে আওয়ামী লীগের দায়বদ্ধতা বেড়েছে। দেশের মানুষের মাঝে ইতিবাচক বার্তা পৌঁছে দিতে এবারের মন্ত্রিসভাকে ঢেলে সাজানো হয়েছে। জনগণের কাছে সরকারের মন্ত্রিসভা যেন একঘেয়ে হয়ে না যায়, এটাও বিবেচনায় ছিল। তা ছাড়া একই ব্যক্তি দীর্ঘদিন দায়িত্ব পালন করার ফলে প্রশাসনিক অনেক নির্ভরযোগ্যতা ও দুর্বলতা তৈরি হয়। এটি এড়ানোর কৌশল হিসেবেও তরুণদের তুলে এনেছেন শেখ হাসিনা।

এর বাইরেও বর্তমান সরকারের দুয়ারে দুটি বড় উপলক্ষ কড়া নাড়ছে। একটি ২০২১ সালে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী এবং ২০২০ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের শতবর্ষপূর্তি। এই দুই মাইলফলক উদ্যাপনে সরকারকে বড় ধরনের উদ্যাপনের মধ্য দিয়ে যেতে হবে। এই আয়োজনের জন্যও করিৎকর্মা নেতৃত্ব প্রয়োজন। এই বিবেচনায়ও অগ্রাধিকার পেয়েছেন নবীনরা।