নয় মাসের মধ্যে সবচেয়ে চাঙা পুঁজিবাজার

প্রকাশ | ০৯ জানুয়ারি ২০১৯, ০০:২৪

অর্থনৈতিক প্রতিবেদক
ঢাকাটাইমস

এই মুহূর্তে গত নয় মাসের মধ্যে সূচকের সর্বোচ্চ অবস্থান দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই)। মঙ্গলবার এক দিনেই ১১৬ পয়েন্টের বড় উত্থান হয়েছে। দর বেড়েছে ভালো-মন্দ প্রায় সব কোম্পানির।

এর আগে সর্বশেষ ২০১৮ সালের ১ এপ্রিল মঙ্গলবারের চেয়ে সূচক বেশি বেড়েছিল। ওই দিন ডিএসইএক্স বেড়েছিল ১৫০ পয়েন্ট।

মঙ্গলবারের উত্থানে ডিএসইএক্স উঠে এসেছে ৫৭৭১ পয়েন্ট, যা বিগত ৮ মাসে বা ২০১৮ সালের ৩০ এপ্রিলের পর সর্বোচ্চ। এদিন ১ হাজার ১০ কোটি ৩ লাখ টাকার শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে, যার পরিমাণ আগের দিন ছিল ৯৬৫ কোটি ৫৪ লাখ টাকা। এ হিসাবে লেনদেন বেড়েছে ৪৪ কোটি ৪৯ লাখ টাকা বা ৫ শতাংশ।

ডিএসইতে লেনদেন হওয়া ৩৪৬টি কোম্পানির মধ্যে ২৩৮টি বা ৬৯ শতাংশ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম বেড়েছে। অন্যদিকে দাম কমেছে ৮৫টি বা ২৪ শতাংশ কোম্পানির এবং অপরিবর্তিত রয়েছে ২৩টি বা ৭ শতাংশ কোম্পানির।

গত ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনের পর থেকেই বাজারে চাঙাভাব দেখা যাচ্ছে। এর আগে কয়েক মাসের টানা মন্দা কাটিয়ে ছয়টি কার্যদিবসের মধ্যে পাঁচ দিনই বেড়েছে সূচক। এই কয় দিনে সূচক বেড়েছে ৪২১ পয়েন্ট। লেনদেন বেড়েছে ৬২২ কোটি টাকা।

ভোটের আগে শেষ কার্যদিবসে ডিএসইতে প্রধান সূচক ডিএসইতে সূচক ছিল ৫ হাজার ৩৪৯.১৮ পয়েন্ট। লেনদেন ছিল ৩৮৮ কোটি ২৪ লাখ টাকা।
পুঁজিবাজার-সংশ্লিষ্টরা জানান, এই চাঙাভাব খুব অস্বাভাবিক ঘটনা নয়। কারণ, সরকার পরিবর্তন হয় কি না, এ নিয়ে একধরনের সংশয় কাজ করে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে। তবে সরকারের ধারাবাহিকতা নিশ্চিত হওয়ার পাশাপাশি ব্যাংকগুলোর ভালো মুনাফাও এর একটি কারণ।

গত অর্থবছরে ব্যাংকিং খাত নিয়ে নানা নেতিবাচক খবর এবং বিভিন্ন প্রান্তিকে আগের বছরের তুলনায় কম মুনাফার খবর এসেছে গণমাধ্যমে। আর বিনিয়োগকারীরা আতঙ্কিত হয়ে সেসব শেয়ার ছেড়ে দিয়েছেন। তবে বছর শেষে আগের বছরের তুলনায় বেশি মুনাফার হিসাবই পাওয়া যাচ্ছে। পুঁজিবাজারে ব্যাংকের শেয়ারের দাম বাড়লেই সূচকের উত্থান হয়।
আরেকটি বিষয় বিনিয়োগকারীদের মধ্যে কাজ করছে। বিদায়ী অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত পুঁজিবাজার নিয়ে রক্ষণশীল বলেই ধারণা ছিল তাদের মধ্যে। এই মন্ত্রণালয়ের নতুন মুখ আ হ ম মুস্তফা কামালকে নিয়ে একধরনের আশাবাদ আছে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে। তিনি সোমবার শপথ নিয়েই বাজার সম্পর্কে ইতিবাচক কথা বলেছেন। আর এর প্রভাব পড়েছে প্রথম কার্যদিবসেই।

বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমবিএ) সভাপতি মোহাম্মদ এ হাফিজ ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘বাজার মন্দা থাকায় অনেক বিনিয়োগ চলে গিয়েছিল। ভোটের পর সব শঙ্কা কেটে যাওয়ায় একটা অনুকূল পরিবেশ বিরাজ করছে। নতুন সরকার বাজারের প্রতি আন্তরিক হবেÑএ আভাসও পাওয়া যাচ্ছে। এ পরিস্থিতিতে যে বিনিয়োগ চলে গিয়েছিল, সেগুলো আসতে শুরু করেছে। একই সঙ্গে নতুন বিনিয়োগ আসছে। আর এ কারণেই সূচক-লেনদেন বাড়ছে।’

মঙ্গলবার টাকার অঙ্কে ডিএসইতে সবচেয়ে বেশি লেনদেন হয়েছে ব্র্যাক ব্যাংকের শেয়ার। এদিন কোম্পানিটির ২৩ কোটি টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। লেনদেনে দ্বিতীয় স্থানে থাকা জেএমআই সিরিঞ্জের ২০ কোটি ৫৫ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। ২০ কোটি ৫ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেনের মাধ্যমে তৃতীয় স্থানে রয়েছে বেক্সিমকো।

লেনদেনে এরপর রয়েছে আলিফ ম্যানুফ্যাকচারিং, অলিম্পিক ইন্ডাস্ট্রিজ, ইউনাইটেড পাওয়ার, অ্যাকটিভ ফাইন কেমিক্যাল, ইফাদ অটোস, বিবিএস কেবলস ও ঢাকা ব্যাংক।
অপর শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) সার্বিক সূচক সিএএসপিআই এদিন ৪০২ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৭ হাজার ৭০৮ পয়েন্টে। এদিন সিএসইতে হাতবদল হওয়া ২৮০টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে শেয়ারদর বেড়েছে ১৮৮টির, কমেছে ৭২টির এবং অপরিবর্তিত রয়েছে ২০টির। আর ৭৩ কোটি ৮৫ লাখ টাকার শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে।

ঢাকাটাইমস/০৯জানুয়ারি