অতিথি পাখির নিরাপত্তায় এলাকাবাসী

প্রকাশ | ১০ জানুয়ারি ২০১৯, ০৯:২৮

বদরুল ইসলাম বিপ্লব, ঠাকুরগাঁও

রং-বেরঙের অতিথি পাখির কলকাকলিতে মুখর ঠাকুরগাঁওয়ের রাণীশংকৈল উপজেলার ঐতিহাসিক রামরায় দীঘি। প্রচ- শীত থেকে বাঁচতে সুদূর সাইবেরিয়া থেকে আসা এই অতিথিদের প্রতি সদয় স্থানীয় লোকজন। তাদের শিকার না করার আহ্বান জানিয়ে নিরাপত্তা দিচ্ছে প্রশাসনও।

সরেজমিনে দেখা গেছে, প্রতি বছরের মতো হাজার হাজার অতিথি পাখির আগমনে পাখির রাজ্যে পরিণত হয়েছে বরেন্দ্রের প্রাচীন জলাশয়গুলোর মধ্যে দ্বিতীয় বৃহত্তম রামরায় দীঘি। দীঘির শান্ত পানিতে দিনভর সাঁতার কাটে ওরা, সন্ধ্যা নামার সঙ্গে সঙ্গেই আশ্রয় নেয় দীঘিপাড়ের লিচুগাছে। ভোর হলে আবারও খাবারের খোঁজে ঝাঁকবেঁধে পানিতে নেমে পড়ে। দীঘি ও পাড় মিলিয়ে ৫২ দশমিক ২০ একর এই এলাকার দৃষ্টিনন্দন ও মনোলোভা পরিবেশে এ যেন অতিথি পাখির মিলনমেলা।

প্রায় ২২ ফুট উচ্চতায় ১৮ দশমিক ৩৪ একরের দীঘিপাড়ের এক হাজার ২৬০টি লিচু গাছ ও প্রায় ১০ হাজার বনজ ও ঔষধি বৃক্ষের ডালে ডালে বসা, আকাশে উড়ে বেড়ানো এবং ৩৩ দশমিক ৮৬ একরের বিশাল এ জলাশয়ে জলকেলি করা এসব পাখি দেখতে প্রতিদিন ভিড় জমাচ্ছেন শত শত নারী-পুরুষ, স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থী ও শিশু। মোবাইল ফোনে ছবি, ভিডিও ও সেলফি তোলায় ব্যস্ত দর্শনার্থীরা।

পাখি দেখতে আসা ভূমি রায় বলেন, ‘শুনেছিলাম, এই দীঘিতে অনেক পাখি আসে। এর আগে দেখিনি, তাই স্বচোক্ষে দেখতে আসা। এত পাখি একসঙ্গে কোনোদিন দেখিনি। মন জুড়িয়ে গেছে।’

স্থানীয় বাসিন্দা আলী আহসান হাবীব বলেন, এসব অতিথি পাখি দেখতে সারাদিনে অনেক মানুষ আসছেন। এলাকাবাসীও সজাগ থাকেন, কেউ যেন এদের শিকার করতে না পারেন।

রানীশংকৈল উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান সইদুল হক বলেন, ‘পাখিদের ভিড়ে রামরায় দীঘি ও সংলগ্ন এলাকার সৌন্দর্য বাড়ার পাশাপাশি প্রকৃতির ভারসাম্যও রক্ষা হচ্ছে। ওদের শিকার রোধে আমরা সবাই আন্তরিক।’

অতিথি পাখি শিকার করা দ-নীয় অপরাধ উল্লেখ করে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মৌসুমী আফরিদা সবাইকে ওদের রক্ষার আহ্বান জানান।

১৮ শতকে মালদুয়ার পরগনার এই রামরায় জমিদারি ছিল নাথপন্থী দুই চিরকুমারী সহোদর রানীর হাতে। বড় রানী ও ছোট রানী বলে পরিচিত ওই দুজন ছিলেন অত্যন্ত প্রজাবৎসল। তাদের পানীয়জলের কষ্ট নিবারণে ৩৬০টি পুকুর খনন করেন দুই রানী। ৯০০ মিটার  দৈর্ঘ্য ও ৫৫০ মিটার প্রস্থ এবং ৮.৯ মিটার গভীর রামরায় দীঘি সেগুলোর একটি।