আর কত বয়স অইলে কার্ড অইবো!

প্রকাশ | ১০ জানুয়ারি ২০১৯, ১৩:২৫

শেরপুর প্রতিনিধি

সরকার দরিদ্র বৃদ্ধ-বৃদ্ধাদের সহায়তার জন্য বয়স্ক ভাতা দিয়ে আসছে বেশ কয়েক বছর ধরে। কিন্তু এখনো এই ভাতা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন অনেকে। এমনকি অশীতিপর মানুষও বয়স্কভাতার তালিকায় স্থান পাননি এমন খবরও আসে প্রায়ই। শেরপুরের মোমেনা বেগম যেমন। ৯৬ বছর বয়সী এই প্রায় চলৎশক্তিহীন দরিদ্র বৃদ্ধার নামই ওঠেনি তালিকায়!

কার দোষে এই অসহায় মানুষগুলো বয়স্কভাতা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন, সে প্রসঙ্গে যাচ্ছি না। আমরা বরং মোমেনার কথা শুনি।

মোমেনা বেগমের প্রায় বুজে যাওয়া গলায় আরতি। হতাশা। ‘মেলা চেষ্টা করলাম। অহনো এডা কার্ড অইলো না। মেম্বার চেয়ারম্যানদের কইলাম। কেউ আমার কথা শুনলো না। আপনারাই কন আর কত বয়স অইলে আমার কার্ড অইবো!’

বৃদ্ধা মোমেনার এই প্রশ্নসূচক খেদোক্তির সামনে আমাদের মুখ লুকানো ছাড়া আর কী করার আছে। শেরপুরের শ্রীবরদী উপজেলার তাঁতিহাটি ইউনিয়নের ভটপুর গ্রামের মৃত মজিবর আলীর স্ত্রী মোমেনা। তার বাবার নাম সোবহান শেখ। মা সিন্দুরি বেওয়া।

সম্প্রতি ভটপুর গ্রামে গিয়ে বৃদ্ধ মোমেনাকে পাওয়া গেল একটি ঝুপড়িঘরে। ৭০ বছরের একমাত্র ছেলে, তিনিও অসুস্থ। দুই মেয়ে বিয়ে দিয়েছেন অন্যত্র।

ছেলের সঙ্গে ওই ঝুপড়িঘরে থাকে মোমেনা। ঘরটি অন্যের জমিতে। আগে আশপাশের বাড়িতে ভিক্ষা করে জীবন চালাতেন। এখন আর হাঁটাচলা করতে পারেন না। এ জন্য ঝুপড়িঘরে পড়ে থাকেন বেশির ভাগ সময়। কেউ খাবার দিলে খান। না পেলে উপোষ থাকেন। চেয়ে থাকেন নিয়তির দিকে।

মোমেনার ছেলে বৃদ্ধ সুরুজ মিয়া বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে আমি নিজেও অসুখে ভুগছি। আগে অন্যের বাড়িতে কাজ করে খাওয়া-পরার ব্যবস্থা করতাম। এখন অসুখের কারণে তাও করতে পারি না। এখন নিয়তি ছাড়া আমগোর আর উপায় নাই।’

ওই ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য লুৎফর রহমানের দাবি তিনি মোমেনা বেগমের নাম পাঠালেও তা কীভাবে যেন বাইরে থেকে গেছে। তিনি বলেন, ‘তারা আমার কাছে এসেছিল। তাদের দুরবস্থা দেখে বয়স্কভাতার কার্ডের জন্য মোমেনা বেগমের নাম উপজেলা সমাজসেবা অধিদপ্তরে জমা দিয়েছিলাম। কিন্তু পরে জানতে পারলাম তালিকায় তার নাম ওঠেনি।’

এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হয় সমাজসেবা অধিদপ্তরে। মোমেনা বেগমের নাম তালিকাভুক্ত করার বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হবে বলে জানান উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা সরকার নাছিমা আকতার।