পোশাক খাতে মজুরি কাঠামোর সমস্যা ‘চিহ্নিত’

প্রকাশ | ১০ জানুয়ারি ২০১৯, ২১:৫৪ | আপডেট: ১০ জানুয়ারি ২০১৯, ২২:০৮

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস
আশুলিয়ায় পুলিশের সঙ্গে পোশাক শ্রমিকদের সংঘর্ষ

পোশাক শ্রমিকরা যখন ‘বেতন বৈষম্য’ দূর করার দাবিতে টানা পঞ্চম দিনের আন্দোলনে ব্যস্ত, তখন সচিবালয়ে বৈঠকে চিহ্নিত হয়েছে বেতন কাঠামোর সমস্যা।

আন্দোলনের মুখে শ্রমিকদের বেতন বৈষম্য নিরসনে পর্যালোচনা কমিটির প্রথম বৈঠকের পর বৃহস্পতিবার এই কথা জানানো হয়। বৈঠক শেষে জানানো হয়, মজুরি কাঠামোর সাতটা গ্রেডের মধ্যে ৩, ৪ ও ৫ নম্বর গ্রেডেই মূলত সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে।

বৈঠকে পোশাক শিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর পাশাপাশি শ্রমিক প্রতিনিধি ও সরকারের পক্ষ থেকেও কর্মকর্তারা অংশ নেন। বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিব ও কমিটির আহ্বায়ক আফরোজা খান।

এবারের মজুরি কাঠামোতে ন্যূনতম মজুরি ধরা হয়েছে আট হাজার টাকা। দ্বিতীয় গ্রেডে ১৪ হাজার ৬৩০ টাকা, তৃতীয় গ্রেডে ৯ হাজার ৫৯০ টাকা, চতুর্থ গ্রেডে ৯ হাজার ২৪৫ টাকা, পঞ্চম গ্রেডে ৮ হাজার ৮৫৫ টাকা ও ষষ্ঠ গ্রেডে ৮ হাজার ৪০৫ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।

শ্রমিকদের মধ্যে কথা ছড়িয়েছে যে, ২০১৩ সালের ডিসেম্বরে কার্যকর হওয়া মজুরি কাঠামোতে বার্ষিক পাঁচ শতাংশ বেতন বৃদ্ধির কথা বলা হয়েছিল। ওই হিসাব ধরা হলে এখন যত বেতন ধরা হয়েছে তাতে তাদের মজুরি আরো কমে যায়। 

তৈরি পোশাকশিল্পের শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি আট হাজার টাকা নির্ধারণ করে গত ২৫ নভেম্বর গেজেট প্রকাশ করে সরকার। ডিসেম্বরের ১ তারিখ থেকে তা কার্যকর করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছিল সেখানে।

তখন শ্রমিকরা প্রতিক্রিয়া না দেখালেও গত ৩০ ডিসেম্বর ভোট শেষে নতুন সরকারের শপথের আয়োজনের মধ্যেই গত রবিবার রাজধানীর বিমানবন্দর সড়কে অবস্থান নিয়ে প্রথম বিক্ষোভে নামেন উত্তরার কয়েকটি পোশাক কারখানার শ্রমিকেরা। এরপর থেকে টানা চলছে বিক্ষোভ। শ্রমিকদের অভিযোগ, নতুন বেতন কাঠামোতে নানা বৈষম্য আর ত্রুটি আছে। এগুলোর সমাধান করতে হবে।

মঙ্গলবারই জরুরি বৈঠকে বসে সরকার, মালিক ও শ্রমিকপক্ষ। ঘোষণা আসে, মালিক ও শ্রমিকপক্ষের পাঁচজন করে এবং সরকারের বাণিজ্যসচিব ও শ্রমসচিবকে নিয়ে ১২ সদস্যের একটি কমিটি করার সিদ্ধান্ত হয়।

বৃহস্পতিবার এই কমিটির প্রথম বৈঠক হয় শ্রম মন্ত্রণালয়ে। বৈঠক শেষে সচিব আফরোজা খান বলেন, ‘যেহেতু সমস্যা শনাক্ত হয়েছে সেহেতু সমস্যা সমাধান করা যাবে। আগামী রবিবার কমিটির বৈঠক আবার বসবে। ওই বৈঠকে চিহিৃত তিনটি গ্রেডের বিষয় সমাধানের চেষ্টা করা হবে।’

সচিব মনে করেন পোশাক খাতে এই অস্থিরতার পেছনে অন্য কারণ আছে। বলেন, ‘অর্থনীতির মূলভিত্তি হচ্ছে গার্মেন্টস খাত। এ খাতকে ধ্বংস করার জন্য একটি চক্র পেছন থেকে কলকাঠি নাড়ছে। ...মজুরি কাঠামোর চেয়ে বেশি বেতন দেওয়া হয় এমন একটি কারখানাও ভাঙচুর করা হয়েছে।’

বৈঠকে এফবিসিসিআই সভাপতি শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন, বিজিএমইএ সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান, সাবেক সভাপতি আতিকুল ইসলাম এবং আব্দুস সালাম মুর্শিদীও উপস্থিত ছিলেন। 

মাঠ ছাড়েনি শ্রমিকরা

আগের চার দিনের ধারাবাহিকতায় বৃহস্পতিবারও বিক্ষোভ অব্যাহত রাখে পোশাক শ্রমিকরা। গাজীপুর, সাভার, আশুলিয়া এলাকায় হয় এসব বিক্ষোভ। আশুলিয়ায় পুলিশ-শ্রমিক সংঘর্ষ, ধাওয়া-পাল্টা-ধাওয়ার মধ্যে অন্তত ২০টি পোশাক কারখানায় ছুটিও ঘোষণা করা হয়।

ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের জামগড়ার ছয়তলা, বেরন ও জিরাবো-কাঠগড়া-বিশমাইল সড়কে বৃহস্পতিবার সকাল আটটার দিকে এই সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।

এ সময় জিরাবো-কাঠগড়া ও জামগড়াসহ বেশ কিছু এলাকায় ২০ থেকে ২৫টি পোশাক কারখানায় ছুটি ঘোষণা করা হয়।

শ্রমিক নেতা, মালিকপক্ষ যা বলছেন

শ্রমিকদের আন্দোলন প্রসঙ্গে গার্মেন্টস শ্রমিক ঐক্য পরিষদের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, নতুন বেতন কাঠামোতে প্রত্যাশা অনুয়ায়ী মজুরি বাড়েনি। নতুনদের বেতন বৃদ্ধির সঙ্গে পুরনোদের বেতন বৃদ্ধির অসামঞ্জস্য রয়েছে।

পরিষদের সভাপতি মোশরেফা মিশু ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘সিনিয়রদের মজুরি এখানে বাড়েনি। তাদের বেসিক কমে গেছে। অথচ সিনিয়ররাই একটি কারখানার প্রাণ। তাদের বিষয়টিকে মজুরি কাঠামোতে গুরুত্ব না দেয়ায় তারা এটা মানতে পারছে না বিধায় আন্দোলন করছেন।’

তবে এক মাসের মধ্যে পর্যালোচনার সময় চাওয়ায় শ্রমিকদের এখন কাজে ফিরে যাওয়া উচিত বলেও মনে করেন মোশরেফা মিশু। বলেন, ‘আন্দোলনে বিরতি দিয়ে শ্রমিকদের অপেক্ষা করা উচিত। এক মাস পরে দাবি মানা না হলে আবার আন্দোলন হতে পারে। কিন্তু শ্রমিকদের অধিকাংশই এ খবরটা জানে না। খবরটা জানানোর জন্য প্রত্যেক কারখানা ও প্রতিষ্ঠানে আনুষ্ঠানিকভাবে শ্রমিকদেরকে জানানোর ব্যবস্থা করা হোক।’

বেতন কমে যাওয়ার অভিযোগ প্রসঙ্গে মজুরি বোর্ডের মালিক পক্ষের প্রতিনিধি সিদ্দিকুর রহমান ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘নতুন মজুরি বোর্ড অনুযায়ী সমন্বয় করার পরে কারও বেতনই ১২ টাকার বেশি বাড়বে না। আবার বেতন কমারও কোনো সুযোগ নেই। কোনো বেতন বা সুবিধা একবার দেওয়া হলে সেটা কমার কোন সুযোগ নাই। এরপরেও শ্রমিকদেরকে অহেতুক ভুল বোঝানো হচ্ছে যে, তাদের কারো কারো বেতন কমে যাবে। তারা সহজ-সরল এবং নিরীহ বলেই তাদের ভুল বুঝিয়ে উস্কে দেয়ার চেষ্টা করছে সুযোগ সন্ধানীরা।’