অ্যামেচার রেডিও যেভাবে এল

প্রকাশ | ১২ জানুয়ারি ২০১৯, ১১:৩৮

মো. শহীদুল্লাহ কায়সার

অ্যামেচার রেডিও বা হ্যাম রেডিও সম্পর্কে কম-বেশি অনেকেই জেনে থাকবেন। এটি একটি শখের রেডিও। শখের হলে কি হবে! দুর্যোগের সময় টেলিযোগাযোগের অন্যতম মাধ্যম এটি। দুর্যোগের সময় অ্যামেচার রেডিও অপারেটরদের বলা হয় রাষ্ট্রের অষোঘিত দূত। কেননা, যখন প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় তখন সব ধরনের টেলিযোগ ব্যবস্থা বিকল হয়ে যায় তখন অ্যামেচার রেডিও অপারেটররা তাদের বেতার যন্ত্রের সাহায্যে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকার সার্বিক তথ্য দেশ-বিদেশের সরকারি-বেসরকারি সংস্থার কাছে তুলে ধরেন। অংশ নেন উদ্ধার কাজেও।

বিশ্বব্যাপী ৩০ লাখ অ্যামেচার রেডিও অপারেটররা এই কাজ করে যাচ্ছেন। বাংলাদেশ টেলিযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) তথ্যমতে বাংলাদেশ লাইসেন্সপ্রাপ্ত ৪০০ জন হ্যাম রয়েছেন।

হ্যাম রেডিওর ইতিহাস বেশ পুরনো। ১৯০৮ সালে হার্ভাড বিশ্ববিদ্যালয়ের তিন শিক্ষার্থী- হাইমেন, এলমি ও মুরে অ্যামেচার রেডিও স্টেশন তৈরি করেন। ধরে নেয়া হয়, তাদের নামের আদ্যক্ষরগুলো দিয়েই হ্যাম শব্দের উৎপত্তি।

১৯০৯ সালে নিউইয়র্ক সিটির জুনিয়র ওয়্যারলেস ক্লাব লিমিটেডের শিক্ষার্থীরা নিজেরা অ্যা মেচার ট্রান্সমিটার ও রিসিভার তৈরি করে হোমব্রিউ (হাতে বানানো) অ্যামেচার রেডিও কার্যক্রম চালু করেন। তখন মোর্স কোডে বা, সিডব্লিউ মোডে সবাই তথ্য আদান-প্রদান করত। 

১৯১১ সালে এই মাধ্যমে প্রথম ভয়েস কমিউনিকেশন শুরু হয়। সুদূর অতীতে স্যামুয়্যেল ফিনলে ব্রিজ মোর্স ১৮৩৫ সালে প্রথম মোর্স কোড আবিষ্কার করেন, যা তিনি পরিপূর্র্ণ করেন ১৮৩৮ সালে। সেই পদ্ধতি অবলম্বন করে সারা বিশ্বে তখন টেলিগ্রাফ ব্যবস্থা চালু হয়। যা তারের মাধ্যমে দুই প্রান্তে সংযোগ করত। শুরুতে সব রেডিও অ্যামেচারদের এই মোর্স কোডের ওপরই দক্ষতা পরীক্ষা দিয়ে হ্যাম লাইসেন্স নিতে হতো। এখন এই শর্ত সারা বিশ্বেই মওকুফ করা হয়েছে।

শুরুর দিকে ট্রান্সমিটার ও রিসিভার তৈরি হতো ভালভ, ভ্যাকুয়াম টিউব দিয়ে, যা ছিল আকারে বড়, ওজনদার ও ব্যয়বহুল। আর এখন মাইক্রোকন্ট্রোলার চিপ সিস্টেম, উচ্চ ক্ষমতার, আকারেও ছোট ও হালকা, ডিজিটাল ও অত্যাধুনিক রেডিও সেট বাজারে পাওয়া যায়। 

১৯১৩ সালে পেনিনসুলার ডন ওয়ালেস প্রথম অ্যামেচার রেডিও পরিচালনার জন্য কল সাইন পান। যদিও আমেরিকান নাগরিক হিরাম পারসি ম্যাক্সিমকে অ্যামেচার রেডিওর জনক বলা হয়। যিনি ছিলেন ১৯১৪ সালে এআরআরএলের প্রতিষ্ঠাতা। তিনি হ্যামদের সংগঠিত করেন। তারও আগে ১৮৩৫ সালে প্যারিস কনভেনশনে আইটিইউ নামক সংগঠনটি প্রতিষ্ঠিত হয়। যারা সারা বিশ্বে টেলিকম রেগুলেটরি ও ফ্রিকোয়েন্সি কন্ট্রোল করে থাকেন।

১৮ এপ্রিল ১৯২৫ সালে অ্যামেচার রেডিওর আন্তর্জাতিক নিয়ন্ত্রক প্রতিষ্ঠান আইএআরইউ সৃষ্টি হয়। সেই থেকে প্রতি বছর ১৮ এপ্রিল সারা বিশ্বে আন্তর্জাতিক অ্যামেচার রেডিও ডে পালন করা হয় এবং সারা বিশ্বে সংগঠনভিত্তিক অ্যামেচার রেডিওর কার্যক্রম শুরু হয়।

(ঢাকাটাইমস/১২জানুয়ারি/এজেড)