৪০০ কোটি টাকায় দূর হতে পারে জরায়ুমুখ ক্যান্সার
সরকার চারশ কোটি টাকা ব্যয় করলে নারীদের জরায়ুমুখ ক্যান্সার থেকে দূরে রাখতে পারে বলে রাজধানীতে এটি আলোচনায় উঠে এসেছে। সেখানে জানানো হয়, নয় থেকে ১৪ বছর বয়সী কিশোরীদের টিকা দিয়ে এই সমস্যা থেকে মুক্ত করা যায়।
শনিবার জাতীয় প্রেসক্লাবের ভিআইপি লাউঞ্জে এই আয়োজন করা হয় ‘সারভাইক্যাল ক্যান্সার দিবস-২০১৯’ উপলক্ষে। আয়োজক ছিল ‘মার্চ ফর মাদার’ এবং ‘রোটারি ইন্টারন্যাশনাল ডিসট্রিক্ট ৩২৮১’ নামে দুইটি সংগঠন।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) স্ত্রীরোগ বিভাগের চেয়ারম্যান সাবেরা খাতুন বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে স্তন ক্যান্সার স্ক্রিনিং করা হচ্ছে। রোগীরা এলে তাদের জরায়ুমুখ ক্যান্সার আছে কি না, তা পরীক্ষা করা হয় এখানে। কিন্তু পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে পপুলেশন বেসড স্ক্রিনিং প্রোগ্রাম চালু আছে। এর অর্থ হল, সেখানে লিস্ট তৈরি করে ডেকে এনে টেস্ট করানো হয়। বাংলাদেশে এই ধরনের টেস্ট চালু হওয়া দরকার।’
‘এই স্ক্রিনিং টেস্টের তিনটি ধাপ রয়েছে। প্রথম ধাপে ৯ থেকে ১৪ বছর বয়সী মেয়েদেরকে টিকা দিতে হবে। এটাকে প্রাথমিক প্রিভেনশন অ্যাওয়ারনেস বলা হয়।’
‘দ্বিতীয় ধাপে ৩০ থেকে ৬০ বছর বয়সী নারীদের জরায়ুমূখ ক্যান্সার হয়েছে কি না, সেই পরীক্ষা করতে হবে।’
‘তৃতীয় ধাপে যাদের বয়স ৪০ এর উপরে এবং যাদের ক্যান্সার হয়েছে, তাদের অপারেশন, রেডিও থেরাপি ও কেমোথেরাপি দিয়ে সুস্থ করে তোলার চেষ্টা করতে হবে।’
মার্চ ফর মাদার এর প্রধান সমন্বয়ক হাবিবুল্লাহ তালুকদার রাসকিন বলেন, ‘আমরা খুব তাড়াতাড়িই সারাদেশে মোট ৪০০ টি কেন্দ্রে স্ক্রিনিং করার উদ্যোগ গ্রহণ করছি।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব হেলথ ইকোনমিক্স এর পরিচালক সাইদ আব্দুল হামিদ বলেন, ‘এই চিকিৎসা খুব ব্যয়বহুলও নয়। সরকার যদি ৪০০ কোটি টাকা ব্যয় করেন, তবে বাংলাদেশের সব কিশোরী মেয়েকে টিকা দেওয়া সম্ভব। এই টাকা প্রথম বছরেই এই পরিমাণ খরচ হবে। পরবর্তী বছরে তা অনেক কমে যাবে।’
স্তন ও জরায়ুমুখ ক্যান্সারের বিরুদ্ধে লড়াইয়েরজন্য বাল্যবিবাহ বন্ধ করার তাগিদও দেন আলোচকরা।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব হেলথ ইকোনমিক্স এর পরিচালক সাইদ আব্দুল হামিদ বলেন, ‘অল্পবয়সে বিয়ে রোধ করার জন্য সরকারকে ভূমিকা রাখতে হবে। এছাড়া জরায়ুমুখ ক্যান্সার সম্পর্কে সঠিকভাবে জানতে স্কুল কলেজ পর্যায়ে কর্মসূচি থাকতে হবে। প্রয়োজনে স্কুল, কলেজ, ইউনিভার্সিটি পর্যায়ে গার্লস ক্লাব গঠন করতে হবে।’
আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য মারুফা আক্তার পপি বলেন, ‘ স্তন ও জরায়ুমুখ ক্যান্সার প্রতিরোধে প্রয়োজন সচেতনতা। আমাদের দেশে গ্রামের নারীরা অসচেতন। এ বিষয়ে আলোচনা করতে তারা লজ্জাবোধ করেন। আমার একটি মতামত হলো, এই উদ্যোগকে কমিউনিটি ক্লিনিকের সাথে সম্পৃক্ত করতে পারলে সচেতনতা বৃদ্ধি ব্যাপকতা পাবে।’
নিজে ক্যান্সার আক্রান্ত হওয়ার কথা উল্লেখ করে অপরাজিতা সোসাইটি এগেইন্সড ক্যান্সার এর চেয়ারপারসন তাহমিনা গাফফার বলেন, ‘২০০৩ সালে ক্যান্সারে আক্রান্ত ছিলাম। ভাবতেই পারিনি আমি বাঁচব। অথচ, এখনো বেঁচে আছি। ক্যান্সার আক্রান্তদের জন্য কাজ করছি।’
‘এমন অনেক রোগী আছেন, ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়েও যারা ২০/২৫ বছর সুস্থ জীবন-যাপন করছেন। মূলত সঠিক সময়ে সঠিক চিকিৎসা দিতে পারলেই এটা সম্ভব। আমি সবসময় বলি, কেউ ক্যান্সার রোগীকে দেখে ভয় পাবেন না। তাদেরকে উৎসাহিত করবেন। তারা যেন ঘরে বন্দী হয়ে মানসিকভাবে ভেঙে না পড়েন।’
কন্ঠশিল্পী সামিনা চেীধুরী, আয়োজন সংগঠনের গভর্নর এ এফ এম আলমগীর, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের রেডিয়েশন অনকোলজি বিভাগের অধ্যাপক স্বপন বন্দোপাধ্যায়ও এ সময় বক্তব্য রাখেন।
ঢাকাটাইমস/১২জানুয়ারি/ডিআর/ডব্লিউবি