মার্কিন সরকারে ইতিহাসের দীর্ঘস্থায়ী অচলাবস্থা

প্রকাশ | ১৩ জানুয়ারি ২০১৯, ১০:০৩ | আপডেট: ১৩ জানুয়ারি ২০১৯, ১০:৩৬

আন্তর্জাতিক ডেস্ক, ঢাকা টাইমস

মেক্সিকো সীমান্তে দেয়াল নির্মাণের অর্থ বরাদ্দের জেরে মার্কিন সরকারে চলা আংশিক অচলাবস্থা দেশটির পূর্বের সব রেকর্ড ভেঙে দিয়েছে। গত ২২ ডিসেম্বর থেকে ফেডারেল সরকারে অচলাবস্থা শুরু হয়। আজ রবিবার অচলাবস্থার ২৩তম দিন। দেশটিতে আধুনিক বাজেট পদ্ধতি চালুর পর এখন পর্যন্ত ২১ বার বিভিন্ন মেয়াদে মার্কিন সরকারে আংশিক অচলাবস্থা সৃষ্টি হয়েছে। এযাবৎকালে অচলাবস্থার সর্বোচ্চ রেকর্ড ছিল ২১ দিনের। যা অতিক্রম করেছে বর্তমান অচলাবস্থা। প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিন্টনের সময়ে ১৯৯৫ সালের ডিসেম্বর থেকে ১৯৯৬ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত ২১ দিন বন্ধ ছিল মার্কিন ফেডারেল সরকার।

অভিবাসি সমস্যা সমাধানে ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড কমাতে মেক্সিকো সীমান্তে দেয়াল নির্মাণের জন্য ৫৭০ কোটি ডলার বরাদ্দ দিতে কংগ্রেসের প্রতি আহ্বান জানান প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। সেই অর্থ সংযুক্ত না করেই বিল পাস করে প্রতিনিধি পরিষদ তথা কংগ্রেস। এতেই ক্ষুদ্ধ হন ট্রাম্প এবং সেই বিলে সই করতে অস্বীকৃতি জানান তিনি। বাজেটে সই না করার ফলে ফেডারেল সরকারে অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়। বিনামূল্যে কাজ করতে বাধ্য হয় আট লক্ষাধিক কর্মী।

এ অবস্থা নিরসনে কয়েক দফায় প্রতিনিধি পরিষদের নেতৃত্বে থাকা ডেমোক্র্যাটদের সঙ্গে বৈঠকে বসেন ট্রাম্প। তবে দেয়াল নির্মাণে অর্থ বরাদ্দ দিতে কংগ্রেস সদস্যরা মত না দেয়ায় সব বৈঠকই সমাধান ছাড়া শেষ হয়। সর্বশেষ বৈঠক থেকে ওয়াক আউট করেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। তিনি এসব বৈঠককে সময়ের অপচয় হিসেবে উল্লেখ করেন। এছাড়া দেয়াল নির্মাণের অর্থ বরাদ্দ না দিলে তিনি বিলে কিছুতেই সই করবেন না বলে স্পষ্ট জানিয়ে দেন। এতে যদি অচলাবস্থা কয়েকবছর পর্যন্ত দীর্ঘস্থায়ী হয় তাতেও তিনি তার অবস্থান থেকে সরবেন না বলে জানিয়ে দেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। এছাড়া সমস্যার সমাধান না হলে জরুরী অবস্থা জারিরও হুমকি দিয়েছেন তিনি।

অচলাবস্থা ও দেয়াল নির্মাণ ঘিরে ডেমোক্র্যাটদের সঙ্গে উত্তেজনার মধ্যে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ২২ জানুয়ারি থেকে সুইজারল্যান্ডের দাভোসে হতে যাওয়া ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের সম্মেলনে যাওয়ার পরিকল্পনাও বাতিল করেছেন। পরিস্থিতি এখন যা, তাতে জরুরি অবস্থা জারি ছাড়া বিকল্পও দেখছেন না অনেকেই। ডেমোক্রেট সিনেটর জো মানচিন বলেন, ‘জরুরি অবস্থা জারি করা ভুল হবে, কিন্তু তার (ট্রাম্প) লক্ষ্য পূরণে এখন সম্ভবত এ পথই খোলা।’ একই সুর শোনা গেছে ট্রাম্পঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত রিপাবলিকান সিনেটর লিন্ডসে গ্রাহামের মুখেও। তিনি বলেন, ‘এখনকার চেয়ে বেশি কখনোই নিরাশ হইনি। সামনে এগিয়ে যাওয়ার কোনো পথই দেখছি না।’

সময়ানুযায়ী তহবিল বরাদ্দ না হওয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় সরকারের ১৫টি বিভাগের মধ্যে নয়টির কার্যক্রম আংশিক বন্ধ হয়ে গেছে। এসব বিভাগের মধ্যে পররাষ্ট্র, হোমল্যান্ড সিকিউরিটি, পরিবহন, কৃষি ও বিচার বিভাগ অন্যতম।

মার্কিন অর্থবছর শুরু হয় ১ অক্টোবর। তার আগেই বাজেট অনুমোদন করিয়ে নেওয়ার সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা থাকলেও সমঝোতার অভাবে কখনো কখনো মার্কিন কংগ্রেস তা পাস করাতে ব্যর্থ হয়। এমন অবস্থায় অস্থায়ী বাজেট বরাদ্দের মধ্য দিয়ে সরকার পরিচালনার তহবিল জোগান দেয়া হয়। অস্থায়ী এই বাজেট বরাদ্দের ক্ষেত্রে দুই কক্ষের অনুমোদনসহ প্রেসিডেন্টের স্বাক্ষরের বাধ্যবাধকতা রয়েছে।

মার্কিন সরকারের ইতিহাসে সর্বোমোট ২১ বার অচলাবস্থার তালিকা:

ডোনাল্ড ট্রাম্প (তিনবার): ডিসেম্বর ২০১৮ থেকে বতর্মান, ফেব্রুয়ারি ২০১৮ এক দিন, জানুয়ারি ২০১৮ তিন দিন।

বারাক ওবামা (একবার): ২০১৩ সালের অক্টোবরে ১৬ দিন।

বিল ক্লিনটন (দুইবার): ডিসেম্বর ১৯৯৫-জানুয়ারি ১৯৯৬ সালে ২১ দিন, ১৯৯৫ সালের নভেম্বরে পাঁচ দিন।

জর্জ এইচডব্লিউ বুশ (একবার): ১৯৯০ সালের অক্টোবরে তিন দিন।

রোনাল্ড রিগ্যান (আটবার): ১৯৮৭ সালের ডিসেম্বরে একদিন, ১৯৮৬ সালের অক্টোবরে একদিন, ১৯৮৪ সালের অক্টোবরে একদিন, একই বছরের সেপ্টেম্বর-অক্টোবরে দুইদিন, ১৯৮৩ সালের নভেম্বরে তিনদিন, ১৯৮২ সালের ডিসেম্বরে তিনদিন। ১৯৮২ সালের সেপ্টেম্বরে একদিন, ১৯৮১ সালের নভেম্বরে দুইদিন।

জিমি কার্টার (পাঁচবার): ১৯৭৯ সালের সেপ্টেম্বর থেকে অক্টোবরে ১১ দিন, ১৯৭৮ সালের সেপ্টেম্বর থেকে অক্টোবরে ১৮ দিন, ১৯৭৭ সালের নভেম্বর থেকে ডিসেম্বরে আট দিন, ১৯৭৭ সালের অক্টোবর থেকে নভেম্বরে আট দিন, একই বছর সেপ্টেম্বর থেকে অক্টোবরে ১২ দিন।

জেরাল্ড ফোর্ড (একবার): ১৯৭৬ সালের সেপ্টেম্বর থেকে অক্টোবরে দশ দিন।

ঢাকা টাইমস/১৩জানুয়ারি/একে