লক্ষ্মী ‘সাধের লাউ’ করল লাভবান

আজহারুল হক, ময়মনসিংহ
 | প্রকাশিত : ১৩ জানুয়ারি ২০১৯, ১৫:৩২

লাউ নাকি সৌভাগ্যের লক্ষণ। খনার বচনে আছে লাউয়ের বন্দনা, ‘উঠান ভরা লাউ-শসা, ঘরে তার লক্ষ্মীর দশা’। লাউ নিয়ে গান গাইতে বাংলার বাউলদের মমতার কথা সবার জানা। লোকগানের জলসায় বাউলগান ছাড়া যেন আসর জমে না কিছুতেই। ‘সাধের লাউ বানাইল মোরে বৈরাগী’ শ্রোতার অন্তরে অনুরণন তোলেনি এমন বাঙালি কি আছে ধরাধামে! এই বাউলগানে গীতিকারের আধ্যাত্মিকতার ভাব বাদ দিলে আক্ষরিক বাণীতে লাউয়ের গুণগান বিধৃত হয়েছে আদ্যোপান্ত। ‘লাউয়ের আগা খাইলাম, ডগা গো খাইলাম, লাউ দিয়া বানাইলাম ডুগডুগি’। লাউয়ের সবকিছুই তো দেখছি কাজে লাগছে মানুষের। আর স্বাদ? বাউল বলছেন- ‘লাউয়ের এত মধু, করল গো জাদু’ লাউয়ের ডুগডুগি নিয়ে কাশী-গয়া যেতে সঙ্গে বৈষ্টমী লাগে না তার।

এই লাউ শীতের এক অমোঘ সবজি। ‘হিম হিম শীত শীত, শীত বুড়ি এলো রে, কনকনে ঠান্ডায় দম বুঝি গেলো রে’। কনকনে ঠান্ডায় দাঁতে দাঁত ঠকঠক করা কাঁপুনির মাঝে গরম ধোঁয়া ওঠা লাউয়ের তরকারি কত না স্বস্তি দেয় মনে। আর চাইলে লাউয়ের গরম স্যুপ ওম ছড়িয়ে দেবে দেহে। এই লাউসহ নানাজাতের রাশি রাশি তরকারির অফুরন্ত সম্ভার শীতের বিশেষ উপহার।

বাঙালির খাদ্যতালিকায় এমনকি শহুরে রসনাবিলাসীদের কাছেও লাউয়ের কদর সবার জানা। কত পদই না করা যায় এই ‘কদু’ দিয়ে। কচি লাউ, মাছের মাথা কিংবা চিংড়িতে অরুচি আছে- এমন বাঙালি পাওয়া ভার। লাউয়ের পাতা, কচি ডগা ভিটামিনসমৃদ্ধ। লাউয়ের খোসার ভাজিও উপাদেয়।

মন আর আত্মার খোরাক জোগানো লম্বা বেলুন আকৃতির সবুজরঙা সবজিটি এখন আর্থিকভাবে লাভবান করছে মানুষকে। ময়মনসিংহের গফরগাঁওয়ের চরআলগী, নিগুয়ারী, টাঙ্গাব, পাঁচবাগ ইউনিয়ন ছাড়াও ব্রহ্মপুত্র নদের চরাঞ্চলসহ প্রত্যন্ত এলাকায় এখন লাউয়ের সবুজের সমারোহ। উপজেলার হাটবাজার ভরে যাচ্ছে শীতের লাউয়ে। ভালো ফলনে হাসি ফুটেছে লাউ চাষিদের মুখে। তারা জানান, বাজার পড়ে না গেলে অন্তত চার-পাঁচ শ লাউচাষির ভাগ্যের চাকা ঘুরে যাবে।

জানা যায়, গত ইরি ও আমন মৌসুমে উৎপাদিত ধানের দাম কম থাকায় স্থানীয় কৃষকরা এবার বেশির ভাগ জমিতে শীতের লাউ চাষ করেছেন। উৎপাদন খরচ ও আবহাওয়া দুটোই কৃষকের অনুকূলে থাকায় প্রয়োজনীয় পরিচর্যার ফলে শীত লাউয়ের বাম্পার ফলনে খুশি উপজেলার কৃষকরা। একই সঙ্গে প্রত্যাশিত বাজারদর লাভবান করছে তাদের। এবার লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি জমিতে লাউ চাষ হয়েছে গফুরগাঁও উপজেলায়। কৃষি অফিসের তথ্যমতে, এ মৌসুমে উপজেলায় লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে ২০০ হেক্টর জমিতে শীত লাউ চাষ হয়েছে। এই লাউ চাষে তেমন খরচ নেই বলে এতে আগ্রহী হয়ে উঠেছেন অনেক কৃষক।

সরেজমিনে উপজেলার চরআলগী ইউনিয়নের চরমছলন্দ কাচারীপাড়া ও টেকিরচর গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, বিস্তৃত জমি, বাড়ির খোলা জায়গায় বানানো মাচা থেকে ঝুলছে নানা আকৃতির লাউ। ভালো ফলনে খুশি ওই গ্রামের লাউ চাষী নিজাম উদ্দিন, খায়রুল, জলিল ও নজরুল। নিজাম উদ্দিন জানান, এবার তিনি ১০ শতাংশ জমিতে লাউ চাষ করেছেন। এতে তার খরচ হয়েছে চার হাজার টাকার মতো। এখন পর্যন্ত ১১ হাজার টাকার বেশি লাউ বিক্রি করেছেন। আরও অন্তত ১৫ হাজার টাকার লাউ বিক্রি করতে পারবেন বলে জানান তিনি।

টেকিরচর গ্রামের লাউ চাষী সফল কৃষক আলাল, রাসু, হাসেন, নাছির খাঁ ও নিধিয়ার চর গ্রামের মফিজ উদ্দিন বেপারীর ভাষ্য, এবার লাউয়ের বেশ ভালো ফলন হয়েছে। বাজারদরও ভালো পেয়েছেন। তবে এখন বাজার কিছুটা কমে গেলেও এই ইউনিয়নের অন্তত শতাধিক লাউ চাষী এবার বেশ লাভবান হয়েছেন।

লাউ চাষি নাছির খাঁ জানান, এ পর্যন্ত তিনি ৪০ হাজার টাকার লাউ বিক্রি করেছেন। আশা করছেন অন্তত আরও ৫০ হাজার টাকার লাউ বিক্রি করতে পারবেন।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা দীপক কুমার পাল বলেন, লাউ উৎপাদনে সেচ, সার ও শ্রমিক খরচ কম। পোকামাকড় তেমন একটা ক্ষতি করতে পারে না বলে শীতের লাউ চাষের দিকে ঝুঁকেছেন কৃষকরা। পাশাপাশি এবার শীত লাউয়ের বাম্পার ফলন হয়েছে। এ উপজেলায় উৎপাদিত শীত লাউ স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সরবরাহ হয়ে থাকে। (ঢাকাটাইমস/১৩জানুয়ারি/মোআ)

সংবাদটি শেয়ার করুন

ফিচার বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :