একদা টলটলে পানি এখন ‘আলকাতরা’

আতাউর রহমান সানী, রূপগঞ্জ
| আপডেট : ১৫ জানুয়ারি ২০১৯, ১৬:০৩ | প্রকাশিত : ১৫ জানুয়ারি ২০১৯, ১৫:৫২

শীতলক্ষ্যা নদী রূপগঞ্জকে পূর্ব-পশ্চিমে দুই ভাগে বিভক্ত করেছে। আর রূপগঞ্জের একেবারে পশ্চিম সীমানা ঘেঁষে রয়েছে বালুনদী। এ দুই নদীকে ঘিরে গড়ে উঠেছে রূপগঞ্জের শিল্পাঞ্চল ও কৃষি। শীতলক্ষ্যা নদীর পূর্ব তীরে শিল্পাঞ্চল গড়ে উঠলেও পশ্চিম তীর অর্থাৎ বালু নদীর পূর্ব অঞ্চলে কৃষিই উপজীব্য। মূলত বালু ও শীতলক্ষ্যা নদীর পানি অবলম্বন করে এখানকার সব ধরনের কাজ পরিচালিত হয়।

একটা সময় শীতলক্ষ্যায় ছিল টলটলে পানি। বলছিলেন কায়েতপাড়া ইউনিয়নের বাঘবাড়ি এলাকার নূরুল হক মিয়া, ‘অনেকে রোগ নিরাময়ের জন্য খেত এই নদীর পানি। এখন খাওয়া তো দূরের কথা, বালু ও শীতলক্ষ্যার পানি স্পর্শও করা যায় না। নদীপথে চলার সময় নাকে রোমাল চেপে রাখতে হয়।’ শীতলক্ষ্যা ও বালু নদের তীরবর্তী গ্রামগুলোর কয়েক লাখ মানুষের দুঃখ নদীর পচা পানি। রাজধানী ঢাকার উপকন্ঠ ও রূপগঞ্জের কোল ঘেঁষে প্রবহমান দুই নদী এখন দূষণ-দখলে নিঃস্বপ্রায়।

বালু নদের নয়ন জুড়ানো রূপ তার ক্ষয়ে যেতে শুরু করে দুই যুগ আগে। নদে এখন মাছ নেই। বেড়েছে মশার উপদ্রব্য। কমে গেছে ফসলের উৎপাদন। সংকট দেখা দিয়েছে খাবার পানির। বেড়েছে রোগ-বালাই। পচা পানির কটু গন্ধে তীরবর্তী মানুষের দুর্ভোগও বেড়েছে। বিপন্ন হয়ে গেছে পরিবেশ। বিপর্যস্ত মানুষের জীবন। দূষণের পাশাপাশি পাল্লা দিয়ে চলছে নদ দখলের প্রতিযোগিতা।

একসময় ভোরে আর বিকালে সতেজ হাওয়া খেতে নদীর দুই পাড়ে হাঁটাহাঁটি এলাকাবাসী। তাতে প্রফুল্ল হতো দেহ-মন। প্রবাদ আছে- ‘নদীপাড়ের হাওয়া, লাখ টাকার দাওয়া’। এখন এ প্রবাদ ফিকে হয়ে গেছে। রাজধানী ঢাকার পয়োবর্জ্য ও শিল্প-কারখানার বর্জ্য পড়ে নদীর পানি এখন আলকাতরার মতো কালো। স্থানীয় লোকজন একে ডাকে ‘পচা’ পানি বলে।

সরেজমিনে বালু নদের তীরবর্তী বালুরপাড়, নগরপাড়া, দাসেরকান্দি, বাবুরজায়গা, ফকিরখালী, বেরাইদ, নাগদারপাড়, গৌড়নগর, ত্রিমহনীসহ বিভিন্ন ঘুরে দেখা গেছে, এ যেন নাগরিক সভ্যতা ও আধুনিকতার ছোঁয়ার বাইরের জগৎ। নারকীয় পরিবেশের সঙ্গে তুলনা চলে এর। নদীর কালো পচা পানিতেই বৌ-ঝিরা থালাবাসন পরিষ্কার করছেন। কৃষক গরু-ছাগল গোসল করাচ্ছে। এমনকি লোকজন গোসল করছে এ পচা পানিতে।

নদের উভয় তীরে কৃষিজমি। এখানে বিভিন্ন রকমের ফসলের চাষ করেন স্থানীয় কৃষকেরা। পচা পানির কারণে এখন ফসলের উৎপাদন কমে গেছে বলে জানান স্থানীয় কৃষকরা। বর্গাচাষী মারতুজা বলেন, ‘আগে জমিনো বিঘায় ধান পাইতাম ৪০ মণ। অহন অয় ১৮ মণ ২০ মণ। পচা পানি খেতে দেওনে আলীর (চারার) গোড়া মোডা অইয়া যায়। ফলন অয় না। ’ এই বিশাল এলাকার দুই-তিন ফসলি জমি এখন পরিণত হয়েছে এক ফসলিতে। কৃষক মফিজুল ইসলাম বলেন, ‘কারণ অন্য ফসল পচা পানিতে নষ্ট অইয়া যায়।’ বিকল্প না থাকায় তারা নদীর পচা পানি ব্যবহার করছেন জমিতে।

রূপগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা তাইজুল ইসলাম কৃষকদের বক্তব্য সমর্থন করে বলেন, পচা পানির কারণে এসব এলাকার কৃষিতে বিরাট ক্ষতি হচ্ছে। পানিতে প্রচুর কার্বন ডাই-অক্সাইড থাকায় চারাগাছের গোড়া পচে যায়।

দূষণের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে চলছে দখলের প্রতিযোগিতাও। দখলদাররা নদীপাড়ে বাঁশের খুঁটি পুঁতে, গাছের ডালপালা ফেলে ছোপ (ঘের) তৈরি করে। বুঝানো হয় এখানে মাছ আটকানো হবে। পরে ধীরে ধীরে ওই ছোপের জায়গায় বালু ফেলে ভরাট করা হয়।

বালু নদের ডেমরা থেকে তুরাগের মোহনা পর্যন্ত দুই তীরে ১৬০টির মতো ছোপ রয়েছে বলে স্থানীয় জেলেরা জানান। এসব ছোপ নদীপাড়ের প্রভাবশালীদের দখলে রয়েছে। একই চিত্র শীতলক্ষ্যা নদীতেও দেখা যায়।

(ঢাকাটাইমস/১৫জানুয়ারি/মোআ)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

বাংলাদেশ এর সর্বশেষ

ফেসবুক আইডি ক্লোন করে প্রতারণার মাধ্যমে অর্থ আত্মসাৎ, যুবক গ্রেপ্তার

ফরিদপুর প্রেসক্লাবের নবনির্বাচিত নেতৃবৃন্দের সঙ্গে পুলিশ সুপারের মতবিনিময়

পতেঙ্গায় ফিশিং বোটের ইঞ্জিন বিস্ফোরণে ৪ জন দগ্ধ

চট্টগ্রামে ঈদকে সামনে রেখে জালনোট চক্রের ৩ সদস্য গ্রেপ্তার

বরিশালে নামাজের সময় মসজিদের এসি বিস্ফোরণ

ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে দ্রুতগতির লেনে যাত্রী নামানোর অপরাধে ৩৩ যানবাহনকে মামলা 

বরগুনা প্রেসক্লাব দখলের মামলায় ৭ জন কারাগারে  

পর্যটকদের আকৃষ্ট করছে তাহিরপুরের শহীদ সিরাজ লেক

ঝিনাইদহে ভর্তুকি মূল্যে টিসিবির পণ্য বিক্রি শুরু

ঢাকা-ময়মনসিংহ সড়কে বেতন বৃদ্ধির দাবিতে শ্রমিকদের বিক্ষোভ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :