হাসিমুখের শিশুদের কম্বল দিল জনতা ব্যাংক

প্রকাশ | ১৬ জানুয়ারি ২০১৯, ২৩:০৪ | আপডেট: ১৬ জানুয়ারি ২০১৯, ২৩:২১

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা টাইমস

জনতা ব্যাংক লিমিটেডের উদ্যোগে শীতের নতুন কম্বল পেল হাসিমুখ সমাজ কল্যাণ সংস্থা দ্বারা পরিচালিত ‘হাসিমুখ’ স্কুলের ক্ষুদে শিক্ষার্থীরা। বুধবার বিকালে স্কুলটিতে অধ্যায়নরত শতাধিক সুবিধাবঞ্চিত শিশুর হাতে কম্বলগুলো তুলে দেন ব্যাংকটির বিভাগীয় কার্যালয় ঢাকা উত্তরের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার মোহাম্মদ মাইনুদ্দিন মিয়া, আঞ্জুমান আরা তাসনিম এবং জেনারেল ম্যানেজার মোঃ মোরশেদুল কবির।

খোলা রাস্তার ওপরে একসঙ্গে এতগুলো সুবিধাবঞ্চিত বাচ্চাকে পড়তে দেখে অবাক হন জনতা ব্যাংকের এসব উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। সুশৃঙ্খলভাবে বসিয়ে বাচ্চাদের পাঠদানের জন্য তারা প্রশংসায় ভাসান সংস্থাটির স্বেচ্ছাসেবকদেরও। এছাড়া হাসিমুখে আসতে পেরে এবং বাচ্চাদের হাতে শীতের কম্বল তুলে দিতে পেরে নিজেদের মুগ্ধতার কথাও জানান তারা।

এ সময় সেখানে সংস্থাটির কোষাধ্যক্ষ জুলকার নাইন, সমাজ কল্যাণ সম্পাদক রিশাদ রিজওয়ান, নিয়মিত স্বেচ্ছাসেবক মিনা, রেশমী, হাশেম, গিয়াস, শরাফত এবং বাহাদুরসহ অন্যরা উপস্থিত ছিলেন। শিশুদের হাতে কম্বল তুলে দেওয়ায় তারা অতিথিদের বিশেষ ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানান। অন্যদিকে অতিথিরাও যেকোনো কাজে সংস্থাটির পাশে থাকার আশ্বাস দেন।  

শীতের কম্বল পেয়ে খুশি হাসিমুখ স্কুলটির সুবিধাবঞ্চিত শিশুরাও। বাংলামটর টাইলস মার্কেট এলাকায় রাস্তার পাশে অস্থায়ী ঝুপড়ি বানিয়ে মা-বাবার সঙ্গে থাকে তৃতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থী মুনাফ। গত চার বছর ধরে সে হাসিমুখ স্কুলে পড়ছে। শীত নামার পর থেকে দুটি কাঁথা একসঙ্গে করে তারা পরিবারের সবাই একসঙ্গে ঘুমায়। কম্বল হাতে নিয়ে চওড়া হাসি দিয়ে সে জানায়, ‘এবার আর শীত আইতে পারব না।’

ফাতেমা নামে শিশু শ্রেণির এক শিক্ষার্থীকে কম্বল পাওয়ার পর থেকেই শুধু হাসতে দেখা যায়। তার চোখে-মুখে যেন ঈদের খুশি। লম্বা কম্বলটাকে গায়ে জড়িয়ে সারা ক্লাস ঘুরে বেড়িয়েছে সে। ফাতেমার বড় বোন হাসিমুখ স্কুলের চতুর্থ শ্রেণির শিক্ষার্থী। সেও একটি কম্বল পেয়েছে। তবে ছোট বোনের কাছ থেকে কম্বলটি তার কাছে নিতে ব্যর্থ সে। কিছুতেই ছোট্ট ফাতেমা তার কমলা রঙের কম্বলটি কাছছাড়া করতে নারাজ।

তবে শুধু এবারই নয়, প্রতি বছর শীত নামলেই সুবিধাবঞ্চিত এসব শিশুদের জন্য কম্বলের পাশাপাশি শীতের পোশাকের ব্যবস্থা করে হাসিমুখ সমাজ কল্যাণ সংস্থা। এ বছরও শীতের বার্তা পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে গত ১৭ নভেম্বর ইনার হুইল ক্লাব অব ধানমন্ডির উদ্যোগে দেড় শতাধিক বাচ্চার হাতে শীতের নতুন পোশাক তুলে দেয় সংস্থাটি। তারই ধারাবাহিকতায় বুধবার দেওয়া হল কম্বল।

২০১১ সাল থেকে যাত্রা শুরু হাসিমুখ সমাজ কল্যাণ সংস্থাটির। গত আট বছরেরও বেশি সময় ধরে সমাজের অবহেলিত ও সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের নানা সুযোগ সুবিধা এবং অধিকার আদায়ের লক্ষে কাজ করে যাচ্ছে সংস্থাটি। এ লক্ষে তারা ‘হাসিমুখ’ নামে স্কুলটি পরিচালনা করেন। শুক্রবার বাদে সপ্তাহের বাকি ছয় দিন বিকাল চারটা থেকে ছয়টা পর্যন্ত পরিবাগের ওয়াবদা অফিসার্স কোয়ার্টারের সামনের রাস্তায় চট বিছিয়ে চলে এটির কার্যক্রম। এখানকার দেড় শতাধিক বাচ্চার মাঝে শিক্ষার আলো ছড়াতে প্রতিদিনই নিরলস সেবা দিয়ে যাচ্ছেন এক ডজনের বেশি স্বেচ্ছাসেবক।  

শুধু শিক্ষাই নয়, শিক্ষার সকল উপকরণও বাচ্চারা এই সংস্থাটি থেকে পায়। এছাড়া বাচ্চাদের কারিগরি জ্ঞানে দক্ষ করে তুলতে সংস্থাটির রয়েছে একটি কম্পিউটার ল্যাব। প্রতিদিন সেখানে বাচ্চাদের আইটি বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেন একটি দক্ষ আইটি টিম। পাশাপাশি দেশের ইতিহাস ঐতিহ্য সম্পর্কে জানাতে ২১ ফেব্রুয়ারি, ২৬ মার্চ এবং ১৬ ডিসেম্বরের মতো জাতীয় দিবসগুলো বাচ্চাদের সঙ্গে পালন করে তারা। বিশেষ অনুষ্ঠান থাকে পহেলা বৈশাখ ও ফাল্গুনেও।

ঢাকা টাইমস/১৬ জানুয়ারি/এএইচ