তিস্তাপারের মানুষের দুর্ভোগ আর কবে ঘুচবে?

প্রকাশ | ১৭ জানুয়ারি ২০১৯, ০৮:৫৪

আরিফুর রহমান

প্রাণ হারিয়েছে তিস্তা। বর্ষার খরস্রোতা এই নদী এখন প্রাণহীন। ধু ধু বালুচর। নদীর ওপর আছে সেতু। কিন্তু নদী পার হতে পথচারীদের সেতুতে না চড়লেও চলে। শুকনো নদীর বুক মাড়িয়ে হেঁটেই পার হওয়া যায়।

নদী শুকিয়ে যাওয়ায় হারিয়ে যাচ্ছে জীববৈচিত্র্য। গাছপালা মরে যাচ্ছে পানি না পেয়ে। সেচ দেওয়া যাচ্ছে না ফসলের মাঠে। হারিয়ে যাচ্ছে মাছ। জেলেদের নৌকা আর ছোটে না। তাদের অলস দুপুর কাটে অনাহারে। দেশের বড় সেচপ্রকল্প হাতীবান্ধার তিস্তা ব্যারেজটিও অকার্যকর হওয়ার পথে। তিস্তাপারের মানুষের এই দুঃখ যুগ-যুগান্তরের।

ভারতের সিকিম ও পশ্চিমবঙ্গে প্রবাহিত হচ্ছে তিস্তা। বাংলাদেশে ঢুকেছে নীলফামারী জেলার কালীগঞ্জ সীমান্ত হয়ে। ৩১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ ঐতিহাসিক তিস্তা লালমনিরহাট, নীলফামারী, রংপুর ও গাইবান্ধা জেলার মাঝ দিয়ে বয়ে গেছে। এই পথে কুড়িগ্রামের চিলমারী বন্দর হয়ে মিশেছে ব্রহ্মপুত্র নদে। ভৌগোলিকভাবে আমাদের দেশে তিস্তার ১২৫ কিলোমিটার অংশ রয়েছে।

এটি সুন্দর একটি পর্যটনকেন্দ্রও বটে। বাংলাদেশের অপার সৌন্দর্যের অনন্য এক দৃষ্টান্ত। তিস্তাপারের মানুষের জীবিকা নির্বাহের এটিও একটা মাধ্যম। পর্যটকদের নদীতে ঘুরে নিয়ে বেড়ায় মাঝিরা। খেয়াপারে জীবিকা চলে তাদের। কিন্তু শুকনো মৌসুমে বেকার জীবন কাটাতে হয় তাদের। দুঃখ-দুর্দশা তখন পিছু ছাড়ে না তাদের।

প্রতিবেশী দেশ ভারত গজলডোবায় বাঁধ দিয়ে তিস্তার পানিপ্রবাহ অনেকটাই নিয়ন্ত্রণ করে। এর ব্যাপক প্রভাব পড়ে বাংলাদেশে। নিজেদের চাহিদা মিটিয়ে ভারত বর্ষাকালে ছেড়ে দেয় অতিরিক্ত পানি। এতে বান ডাকে তিস্তায়। বানের পানিতে ভাসতে হয় তিস্তাপারের মানুষকে। আবার শুকনো মৌসুমে চাহিদা অনুসারে পানি মেলে না। যুগের পর যুগ তিস্তার পানির ন্যায্য হিস্যা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে বাংলাদেশ।

ভারতের বর্তমান বিজেপি সরকারের প্রধান নরেন্দ্র মোদি ক্ষমতায় এসে বলেছিলেন, তার সরকারের সময়ের মধ্যে তিস্তার পানিচুক্তি সম্পাদন করবেন। কিন্তু কথা রাখতে পারেননি তিনি। ভারতে এখন কেন্দ্রীয় সরকার নির্বাচনের ডামাডোল চলছে। বর্তমান সরকারের এই মেয়াদে তিস্তাপারের মানুষের জন্য কোনো আশা নেই। অপেক্ষা করতে হবে নতুন সরকারের জন্য।

তিস্তায় এখন প্রায় সাড়ে তিন থেকে চার হাজার কিউসেক পানি রয়েছে, যা সিলড্রাপ ও ক্যানেলগুলো ভরে রাখা হয়েছে। পানি আরও কমে গেলে সেচপ্রকল্প সচল রাখা কষ্টকর হবে বলে জানিয়েছেন পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা।

যুগের পর যুগ এই অচলাবস্থা চলতে পারে না। দেশ যখন উন্নয়নের মহাসড়কে এগিয়ে যাচ্ছে, তখন উত্তরের মানুষের দুর্বিষহ জীবন মেনে নেওয়ার মতো নয়। তিস্তাপারের দুঃখ ঘোচাতে পারে কেবল প্রতিবেশী দেশের সদিচ্ছা। উত্তরের মানুষের ভাগ্য জড়িয়ে আছে এই নদীর সঙ্গে। লাখো মানুষকে দুর্বিষহ জীবন থেকে রক্ষা দিতে পারে বাংলাদেশকে যদি তিস্তার পানিবণ্টনের ন্যায্য হিস্যা দেওয়া হয়।