এগিয়ে যাক ‘আলোর ফেরিওয়ালা’

প্রকাশ | ১৭ জানুয়ারি ২০১৯, ১০:২০

আরিফুর রহমান

‘আলোর ফেরিওয়ালা!’ বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির নতুন প্রকল্প। গ্রাম থেকে গ্রামে ঘুরে বেড়াচ্ছে এই ফেরিওয়ালারা। ভ্যানে করে নিয়ে যাচ্ছে বিদ্যুৎ সংযোগের সরঞ্জাম। সঙ্গে আছেন প্রকৌশলীসহ কর্মীরা। এই প্রকল্পের কাজ নিয়ে গতকাল ঢাকা টাইমসে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। প্রতিবেদনটি টাঙ্গাইলের দেলদুয়ার এলাকার।

ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি বর্তমান সরকারের গত মেয়াদেই ছিল। সে লক্ষ্যে কাজও চলছে। লোডশেডিং সমস্যা এখন অনেকটাই কেটে গেছে। বিদ্যুৎ উৎপাদনে রেকর্ড হয়েছে। তবে গ্রামাঞ্চলে এখনো শতভাগ বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়া সম্ভব না হলেও কাজের অগ্রগতি আছে।

গ্রামে বিদ্যুৎ সংযোগ পেতে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির জোনাল কার্যালয়ে আবেদন করতে হয়; কিন্তু আবেদন করলেই বিদ্যুৎ পাওয়া যায় না। গ্রাহকদের অনেক কাঠখড় পোড়াতে হয়। নানামুখী তদবির ও দৌড়ঝাঁপের পর বিদ্যুৎ সংযোগ কেউ পান আবার বছর পার হলেও কারো ঘরে জ্বলে না আলো।

গ্রাহক হয়রানির কথা চিন্তা করেই সরকার ‘আলোর ফেরিওয়ালা’ নামের এই প্রকল্পটি হাতে নিয়েছে। এখন আর গ্রাহককে বিদ্যুতের জন্য পল্লী বিদ্যুৎ কার্যালয়ে যেতে হবে না। বরং পল্লী বিদ্যুতের কর্তারাই গ্রাহকের দুয়ারে যাচ্ছেন। চাহিদা অনুযায়ী প্রয়োজনীয় কাগজপত্র তৈরি করে তৎক্ষণাৎ বিদ্যুৎ সংযোগ দিয়ে আসছেন। বিদ্যুৎ বিভাগের এই উদ্যোগ নিঃসন্দেহে প্রশংসনীয়।

বিগত এক দশক আগেও বিদ্যুতের জন্য মানুষের হাহাকার ছিল। লোডশেডিংয়ে নাগরিক দুর্ভোগ ছিল অসহনীয় পর্যায়ে। গ্রামের পর গ্রামে বিদ্যুতের খুঁটি পোঁতা হলেও সংযোগ ছিল না। ফসলের মাঠের মাঝে বিদ্যুতের এই খুঁটিগুলো দাঁড়িয়ে ছিল সাধারণ মানুষের সঙ্গে প্রতরণার চিহ্ন হয়ে। সে অবস্থা এখন আর নেই। মানুষ এখন বিদ্যুৎ পাচ্ছে। শহরাঞ্চলে লোডশেডিং নেই বললেই চলে। গ্রামে কিছু থাকলেও আগের চেয়ে অনেক কমেছে।

সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি খাতেও বিদ্যুৎ উৎপাদন কয়েকগুণ বেড়েছে। এ খাতে বেসরকারি বিনিয়োগেও আগ্রহ বাড়ছে। দেশ-বিদেশের যৌথ বিনিয়োগে বাস্তবায়ন হয়েছে বড় বড় বিদ্যুৎ উৎপাদন প্রকল্প।

দেশের অর্থনীতিকে এগিয়ে নিতে ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসার প্রয়োজন। এ জন্য প্রয়োজন শিল্পায়ন। আর শিল্পায়নের প্রধান শর্ত বিদ্যুৎ শক্তি ও জ্বালানি। বিদ্যুৎ সরবরাহ আগের তুলনায় বাড়ায় বিনিয়োগও বাড়ছে। যদিও এখন পর্যন্ত এটি পর্যাপ্ত নয়। বর্তমান সরকার ব্যবসাবান্ধব নীতির পক্ষে। ব্যবসায়ীদের স্বার্থরক্ষায় সরকারের বিভিন্ন উদ্যোগ প্রশংসিত হয়েছে। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে আওয়ামী লীগ সরকারের প্রতি দল-মত নির্বিশেষে ব্যবসায়ীদের অকুণ্ঠ সমর্থন, তারই প্রমাণ।

দেশে আরও কয়েকটি নতুন ইকোনমিক জোন বা অর্থনৈতিক এলাকা বাস্তবায়নের ঘোষণা দিয়েছে সরকার। যত দ্রুত সম্ভব এই ঘোষণাগুলো কার্যকর করতে হবে। বিদ্যুৎ ও জ্বালানির পর্যাপ্ত ব্যবস্থা করতে হবে।

গ্রামাঞ্চলে বিদ্যুৎ খাতের অনিয়ম পুরোপুরি শেষ হয়ে যায়নি। যে কারণে এখনো গ্রাহকদের হয়রানি হতে হয়। নতুন সরকার সুশাসন প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে এসব অনিয়ম খুঁজে বের করে ব্যবস্থা নেবে, এ প্রত্যাশা করছি।