অভিভাবকদের মানসিকতার পরিবর্তনই পারে শিক্ষা-বাণিজ্য রুখতে

প্রকাশ | ১৭ জানুয়ারি ২০১৯, ১১:২০

অনলাইন ডেস্ক

শিক্ষা মানুষের সাংবিধানিক অধিকার। কিন্তু দেশের বেসরকারি খাতের শিক্ষা এখন বাণিজ্যের খপ্পরে। অতিরিক্ত ভর্তি ফি, উন্নয়ন ফি; কোচিং, মডেল টেস্ট ফি আর নিবন্ধন ফির নামে নির্ধারিত অঙ্কের চেয়ে বেশি টাকা আদায় রীতি হয়ে দাঁড়িয়েছে।

স্কুলের নানামুখী বাণিজ্য আরও আছে। খাতা-কলম, পোশাক হয় স্কুল কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে, নয়তো তাদের ঠিক করে দেওয়া ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান থেকে কিনতে হবে। ক্লাসের বাইরে বিশেষ কোচিং, মডেল টেস্টের হিড়িক তো আছেই।

ক্লাস পরীক্ষায় যেমন-তেমন, বিশেষ কোচিং আর মডেল টেস্টে অংশ না নিলে হয়রানি হওয়ার নজিরও আছে। এসব অভিযোগ ঢালাও না হলেও নামীদামি অনেক প্রতিষ্ঠান এ কাজ করছে।

শিক্ষায় অতিবাণিজ্যের এই প্রবণতা এক দিনে হয়নি। এর পেছনে কারণ সন্তানের জন্য অভিভাবকদের ভালো শিক্ষার সন্ধান। ভালো শিক্ষা আর ভালো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বলতে হতেগোনা কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের নামই তাদের মুখে মুখে। সামাজিক স্ট্যাটাস নির্ধারণেও সন্তানের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বিবেচনা করার প্রবণতা কোনো কোনো ক্ষেত্রে। এ ধরনের মনোভাব আগে ছিল না। বরং সন্তান কতটা ভালো শিখছে, শিক্ষার ভিত কতটা মজবুত হচ্ছেÑএসব বিষয়ই গুরুত্ব পেত। 

অভিভাবকদের মধ্যে সন্তানদের নিয়ে এই যে প্রতিযোগিতা, তা কোনো কোনো ক্ষেত্রে অস্বাভাবিক পর্যায়ে পৌঁছায়। এই অসুস্থ প্রতিযোগিতায় এগিয়ে থাকার জন্য তারা অজান্তেই সন্তানের ওপর বাড়তি বোঝা চাপিয়ে দেন। ছোট মস্তিষ্কে অতিরিক্ত চাপে সন্তান দিশেহারা হয়ে ছুটতে থাকে। সন্তান কী শিখছে বা জানছেÑএর চেয়ে ক্লাসে বা পাবলিক পরীক্ষায় এ-প্লাস বা গোল্ডেন জিপিএ ফাইভ পাওয়াকেই আরাধ্য করা হয়।

পাবলিক পরীক্ষার প্রতিযোগিতায় রেসের ঘোড়ার মতো সন্তানকে ছুটিয়ে দেওয়ার এই প্রবণতা কিছু ক্ষেত্রে ইতিবাচক ফল আনে বটে, বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই তার ব্যতিক্রম হয়। ছেলেমেয়েরা তোতা পাখির মতো মুখস্থবিদ্যায় পারদর্শী হলেও মৌলিক জ্ঞান বা সৃজনশীলতায় পিছিয়ে থাকে তারা।

এমনিতে এখনকার শিক্ষার্থীরা সৃজনশীল মেধায় অনেক দূর এগিয়েছে। তারা দেশের গ-ি পেরিয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে নাম ছড়াচ্ছে। বিদেশে উচ্চশিক্ষার সুযোগ পাচ্ছে। তথ্য ও প্রযুক্তিজ্ঞানে সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলছে। কিন্তু এর পেছনে অসুস্থ প্রতিযোগিতার বলি হওয়া শিক্ষার্থীদের সংখ্যাও কম নয়। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর বাণিজ্যপ্রবণতা এ কারণেই সৃষ্টি হয়েছে। আর এটা শহর অঞ্চলেই বেশি দেখা যায়।  

মেধার আর ইচ্ছাশক্তির মূল্যায়ন বরাবরই ছিল। এখনো আছে। প্রত্যন্ত অঞ্চলের কোনো বিদ্যালয় বা কলেজ থেকে মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা দিয়ে আসা শিক্ষার্থীরা এখনো ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়সহ সরকারি বিশ^বিদ্যালয়গুলোতে ভর্তি পরীক্ষার এগিয়ে থাকছে। বিশ^বিদ্যালয় হলগুলোর নিত্যদিনের জীবনযাপন কাছ থেকে দেখলে জানা যাবে, অভাব আর দারিদ্র্যের সঙ্গে লড়াই করে উঠে আসা মেধাবীদের গল্প। অদম্য মেধা যাদের উজ্জ্বল ভবিষ্যতের হাতছানি দিচ্ছে।

নামীদামি স্কুল বা কলেজ দূরে থাক, অর্থের অভাবে বই কিনতে পারেননি, স্কুলের মাইনে দিতে পারেননিÑএমন ঘটনার অভাব নেই। তাদের এই সাফল্যের পেছনে আছে কঠোর ইচ্ছাশক্তি আর অধ্যবসায়। ইচ্ছা আর মেধার সমন্বয়ে তারা আজ আলোর পথ পেয়েছে।

আমাদের বাবা-মায়েরা যদি সন্তানকে নামীদামি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পড়ানো কিংবা ম্যারাথন কোচিংয়ের চিন্তা থেকে বেরিয়ে এসে সুশিক্ষা ও প্রকৃত শিক্ষাকে গুরুত্ব দেন, তবেই শৃঙ্খলা ফিরবে শিক্ষা খাতে। বন্ধ হবে শিক্ষার নামে অতিমুনাফার বাণিজ্য।