রাজপথ নয় সংসদই হোক গণতন্ত্রের মঞ্চ

প্রকাশ | ১৭ জানুয়ারি ২০১৯, ১২:৪৫

আরিফুর রহমান

সদ্য সমাপ্ত সংসদ নির্বাচন শেষে গঠিত নতুন সরকার কাজ শুরু করেছে ইতিমধ্যে। এর আগে ক্ষমতাসীন দলসহ মহাজোটের শরিক দলের সাংসদরা শপথ নিয়েছেন। কিন্তু নির্বাচনের অন্য প্রধান জোট ঐক্যফ্রন্টের বিজয়ী সংসদ সদস্যরা শপথ নেননি। নির্বাচনে বড় ধরনের অনিয়মের অভিযোগ তুলে বিএনপির নেতৃত্বাধীন বিরোধী জোটটির সিদ্ধান্ত, তাদের সাংসদরা শপথ নেবেন না। এখন পর্যন্ত এই সিদ্ধান্তে অটল রয়েছে তারা।

এ নিয়ে বিরোধী জোটটির দলগুলোর মধ্যে পক্ষে-বিপক্ষে মত আছে। বিপক্ষ মতের নেতারা চান এ নিয়ে আন্দোলনের সূচনা হোক। আবার সরকারসহ নানা মহল চায় তারা সংসদে যোগ দিয়ে জনগণের রায়ের প্রতি মর্যাদা দেখাক। শনিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও দলের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ও কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের যৌথ সভার শুরুতে গণতন্ত্রের স্বার্থে ঐক্যফ্রন্টের সাংসদদের সংসদে যোগদানের আহ্বান জানিয়েছেন।

আমরা দেখেছি, গত দশ বছরে দেশে গণতন্ত্র নিয়ে নানা প্রশ্ন উঠলেও সরকার উন্নয়নকে অগ্রাধিকার দিয়ে দেশকে অনেক দূর এগিয়ে নিয়েছেন। নানা সূচকে বাংলাদেশের উন্নতি বিশ্বের নজর কেড়েছে। এবার সব দলের অংশগ্রহণে জাতীয় নির্বাচন সম্পন্ন হয়েছে। ২০১৪ সালে বিএনপির বর্জন করা নির্বাচনে বিজয়ের পর সরকার নিয়ে বিদেশিদের যেটুকু অস্বস্তি ছিল সেটি এবার আর নেই। বন্ধুদেশগুলো ইতিমধ্যে শেখ হাসিনার সরকারকে শুভেচ্ছা জানিয়েছে।

আরেকটি বিষয়, গত এক যুগে দেশের মানুষের মধ্যে রাজনৈতিক ভাবনা কিংবা দৃষ্টিভঙ্গি অনেক বদলে গেছে। রাজনৈতিক কোনো ইস্যুতে জনগণকে রাজপথের আন্দোলনে শামিল করা সহজ হবে না। বিদেশিদের মাধ্যমে সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টির মতো পরিস্থিতি দেশে নেই। আমরা মনে করি রাজনৈতিক মাঠে কোণঠাসা হয়ে পড়া বিএনপির নির্বাচনে অংশগ্রহণ ছিল একটি সঠিক সিদ্ধান্ত। এখন সংসদে যোগ দেয়ার মতো সিদ্ধান্ত তাদের ইতিবাচক হিসেবে দেখতে হবে। মাঠে যা বলার সুযোগ পাচ্ছে না তারা সেটি দেশবাসীর কাছে তুলে ধরার একটি বড় মঞ্চ পাবে তারা।

প্রধানমন্ত্রীর আহ্বানের মধ্যে আরও একটি কথা প্রণিধানযোগ্য। যে কয়টা আসন জিতেছে ঐক্যফ্রন্ট, গণতন্ত্রের স্বার্থে তাদের পার্লামেন্টে আসা প্রয়োজন। সংসদীয় গণতন্ত্রে আসনসংখ্যা কমবেশির চেয়ে সংসদ কতটা কার্যকর সেটা বেশি গুরুত্বপূর্ণ। ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থীরা সংসদে গিয়ে সরকারের গঠনমূলক আলোচনা-সমালোচনার মাধ্যমে সরকারের জবাবদিহি কিছুটা হলেও নিশ্চিত করতে পারবে বলে আমরা বিশ্বাস করি।

নির্বাচনে অনিয়মের সুনির্দিষ্ট অভিযোগ থাকলে তা প্রতিকারের আইনি ব্যবস্থা আছে। কিন্তু দলের যারা বিজয়ী হয়েছেন, তাদের সংসদে যোগ দিতে না দেয়া জনগণের ভোটের প্রতি অবজ্ঞা দেখানোর শামিল হবে। বিজয়ী আসনের ভোটাররা তাদের প্রতিনিধি নির্বাচন করেছেন সংসদে গিয়ে তাদের কথা বলার জন্য।

আমরা মনে করি, সদস্যসংখ্যা কম হলেও সংসদে গিয়ে বিরোধী জোটের বিজয়ীরা জোরালো ভূমিকা রাখতে পারেন। সেখানে সরকারের জবাবদিহি করার জন্য জনগণ তাদের ক্ষমতা দিয়েছে। একই সঙ্গে তারা নিজেদের গণতান্ত্রিক নানা দাবি তুলে ধরতে পারেন সংসদে। পথঘাট বন্ধ করে রাজপথের বক্তব্যের চেয়ে সংসদ তাদের জন্য ভালো মঞ্চ হবে বলে আমরা মনে করি।

দেশে সংঘাতের রাজনীতি আবার ফিরুক সেটা কেউই প্রত্যাশা করে না। আমরা মনে করি, ঐক্যফ্রন্টের বিজয়ীদের সংসদে যাওয়াই হবে যুক্তিযুক্ত।