অর্থনৈতিক উন্নয়ন গতিশীল করতে চায় বেজা
প্রকাশ | ১৭ জানুয়ারি ২০১৯, ১৬:০৮
দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের চাকা গতিশীল করতে নিরলসভাবে কাজ করছে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেজা)। এর অংশ হিসেবে একশটি অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলার লক্ষ্যেমাত্রা গ্রহণ করেছে এবং সে লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে। এ পর্যন্ত ৮টি অর্থনৈতিক অঞ্চলকে চূড়ান্ত অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।
বেজার ব্যবস্থাপক ও উপসচিব আবু হেনা মো. মোস্তফা কামাল বলেন, চলতি বছরে সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে প্রায় ৮৮টি অর্থনৈতিক অঞ্চল তৈরির কাজ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। আগামী পাঁচ বছরের মধ্যেই সবগুলো দৃশ্যমান হবে।
তিনি বলেন, এই অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলো গড়ে উঠলে চাপমুক্ত হবে ঢাকা। ঢাকাকে বিকেন্দ্রীকরণ করে অর্থনৈতিক উন্নয়নের ছোঁয়া প্রত্যেকটি বিভাগে ছড়িয়ে দেওয়া হবে। যার ফলে মানুষকে আর ঢাকামুখী হতে হবে না। শুধু রাজধানীবাসী না, দেশজুড়েই মানুষ অর্থনৈতিক সুযোগ-সুবিধা ভোগ করবে।
জানা গেছে, দেশে প্রতি বছর ২৭ লাখ মানুষ কর্মের বাজারে প্রবেশ করতে চান। কিন্তু কাজের সুযোগ না থাকায় তাদের অধিকাংশই বেকার থেকে যান। এখন পর্যন্ত বেকার রয়েছেন চার কোটি মানুষ।
বেকারত্ব হ্রাসের প্রসঙ্গ উঠলে তিনি বলেন, একটি দেশের ইকোনমিক জোন গড়ে উঠার প্রধান লক্ষ্যই হলো কর্মসংস্থান সৃষ্টি। আগামী ১৫ বছরের মধ্যে অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলোয় কাজের সুযোগ পাবেন এক কোটি মানুষ। এ ছাড়া এই শিল্পাঞ্চলকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা লিঙ্কেজ শিল্প, অন্যান্য সেবা প্রতিষ্ঠান ও ব্যবসা-বাণিজ্যে বহু মানুষের কর্মসংস্থান হবে।
তিনি আরও বলেন, শুধু কর্মসংস্থান সৃষ্টিই নয়, দেশি-বিদেশি বিনিয়োগও বাড়বে। অতিরিক্ত ৪০ হাজার মার্কিন ডলার বিনিয়োগ বাড়বে এসব অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে উঠলে। একদিকে যেমন পরিকল্পিত শিল্পনগরীতে উৎপাদন বাড়বে, অন্যদিকে শিল্পায়নের বিরূপ প্রভাব থেকে রক্ষা পাবে পরিবেশ। বিনিয়োগকারীরা সব সেবা ও সুযোগ-সুবিধা এই অঞ্চলের মধ্যেই পাবেন। এতে তাদের ব্যবসার খরচ কমবে, সময় বাঁচবে ও যাবতীয় প্রক্রিয়া সহজ হবে।
শিল্প-কারখানার বর্জ্যে নদীদূষণ ও বায়ুদূষণ কমবে অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে উঠার মাধ্যমে। কেননা অঞ্চলের মধ্যে অত্যাধুনিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনার পাশাপাশি করা হবে বনায়ন।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বেজা পরিচালনা পরিষদের চেয়ারম্যান। ২০১২ সালের ১৮ এপ্রিল তার সভাপতিত্বে হয় প্রথম পরিচালনা পরিষদের বৈঠক। বর্তমানে বেজার নির্বাহী চেয়ারম্যান পবন চৌধুরী। অর্থনৈতিক অঞ্চল তৈরির কাজ শেষ করতে ‘বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল উন্নয়ন প্রকল্প (পর্যায়-১)’ শীর্ষক একটি প্রকল্পও হাতে নেয় সরকার।
অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলো ইতোমধ্যে বিদেশিদের আকৃষ্ট করেছে। সেখানে বড় আকারে বিনিয়োগ করতে আগ্রহ দেখাচ্ছে নামকরা সব দেশি-বিদেশি কোম্পানি। চীন, ভারত, জাপান, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, রাশিয়া, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্যসহ বিভিন্ন দেশের শিল্পোদ্যোক্তাদের কাছ থেকে আসছে বিনিয়োগ প্রস্তাব। এ ছাড়া বস্ত্রশিল্প, মোটরসাইকেল তৈরি, নির্মাণসামগ্রী ও কাচশিল্প স্থাপনেও আগ্রহ প্রকাশ করেছে অনেক বিদেশি কোম্পানি। দেশীয় কোম্পানির সঙ্গে যৌথভাবে বিনিয়োগ করতে বেশ কয়েকটি বিদেশি কোম্পানি সমঝোতা স্মারকও করেছে।
২০২১ সালে মধ্যম আয়ের ও ২০৪১ সালে উন্নত দেশে পরিণত হওয়ার লক্ষ্যে পথ চলছে বাংলাদেশ। এই স্বপ্ন বাস্তবায়ন করার জন্য বর্তমান সরকার সারা দেশে অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলো স্থাপনের পরিকল্পনা গ্রহণ করেছেন।
বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেজা) বলছে, দেশি-বিদেশি উদ্যোক্তাদের জন্য ২০৩০ সালের মধ্যেই ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলার কাজ শেষ করা হবে।
জানা গেছে, প্রস্তাবিত ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চলের মধ্যে ইতোমধ্যে ৮২টির প্রাথমিক অনুমোদন দিয়েছে বেজার গভর্নিং বোর্ড। এর মধ্যে ২৩টি বেসরকারি অঞ্চল এবং বাকিগুলো সরকারি ব্যবস্থাপনায় বিভিন্ন দেশের সরকারের সঙ্গে ও সরকারি-বেসরকারি অংশীদারত্বের (পিপিপি) মাধ্যমে বাস্তবায়িত হবে।
সংশিষ্টরা জানান, দেশে বেশির ভাগ শিল্পই গড়ে উঠেছে অপরিকল্পিতভাবে। এর ফলে জমি, অর্থ ও সময় অপচয় হচ্ছে। এখন পরিকল্পিতভাবে শিল্পনগরী গড়ে তোলার কারণে জমির সঠিক বরাদ্দ দেওয়া সম্ভব হচ্ছে। এতে জমির অপচয় রোধ হবে; অন্যদিকে ব্যাপক হারে কৃষিজমি বা বনভূমি ধ্বংস হবে না। উল্টো অঞ্চলের মধ্যে বনায়ন হবে। এককভাবে কারখানা প্রতিষ্ঠা করতে গেলে গ্যাস, বিদ্যুৎ ও অন্যান্য অবকাঠামোর খরচ এককভাবে করতে হয়। ফলে খরচ অনেক বেশি পড়ে। পণ্য পরিবহন খরচ বেশি হয়। কিন্তু অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপন হওয়ায় শিল্প গড়ে তোলার জন্য প্রয়োজনীয় সব সেবা মিলবে ওই অঞ্চলেই। ফলে এককভাবে সবাই সুবিধা নিতে পারবেন। পণ্য ওই অঞ্চল থেকেই দেশে-বিদেশে বাজারজাত করা যাবে। ফলে বন্দরগুলোয় অযথা জটের মুখোমুখি হতে হবে না।
এদিকে বিনিয়োগকারীরা বলছে, শিল্প গড়ার জন্য তাদের দীর্ঘদিনের চাওয়া পূরণ করছে অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলো।
উদ্যোক্তারা জানিয়েছেন, অর্থনৈতিক অঞ্চলের কারণে এর আশপাশের এলাকাগুলোয়ও উন্নয়নের ছোঁয়া লাগছে। এলাকার রাস্তাঘাট ও গ্যাস-বিদ্যুৎ পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে। শিল্পাঞ্চলকে কেন্দ্র করে হাসপাতাল, হোটেল, আবাসিক এলাকা, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন সেবামূলক প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠছে। বহু মানুষের কর্মসংস্থান হচ্ছে। সংশ্লিষ্ট এলাকা হয়ে উঠছে ব্যবসা-বাণিজের কেন্দ্র।
উদ্যোক্তা আরিফুল ইসলাম বলেন, অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলা হলে বিনিয়োগ বাড়বে। বিনিয়োগ বাড়লে কর্মসংস্থান বাড়বে, মানুষের আয় বাড়বে এবং উচ্চহারে প্রবৃদ্ধি হবে। দেশে নতুন উদ্যোক্তা তৈরি হবে অনেক। প্রচুর বৈদেশি মুদ্রা অর্জনেরও সুযোগ রয়েছে।
উন্নত দেশের সারিতে একদিন নাম থাকবে বাংলাদেশের। সেই লক্ষেই অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলো নির্মাণের কাজ এগিয়ে চলেছে। এজন্য পরিকল্পিতভাবে শিল্পায়ন হচ্ছে। ফলে এক স্থান থেকে সব পণ্যের জোগান হওয়ার পাশাপাশি পরিবেশবান্ধব শিল্পনগরী তৈরি হচ্ছে। অর্থনৈতিক নগরী গড়ে তুলে উৎপাদন বাড়ানো ও কর্মসংস্থান সৃষ্টির সব পরিকল্পনা বাস্তবায়ন হচ্ছে দ্রুতগতিতে।