আইভী-শামীম সংঘর্ষের বিহিত হয়নি এক বছরেও

প্রকাশ | ১৮ জানুয়ারি ২০১৯, ০৮:৫৯

মাজহারুল ইসলাম রোকন

নারায়ণগঞ্জে হকার উচ্ছেদ নিয়ে মেয়র সেলিনা হায়াৎ আইভী ও সংসদ সদস্য শামীম ওসমানের সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনায় ব্যবস্থা নেওয়ার ঘোষণা থাকলেও তা হয়নি এক বছরেও। প্রশাসনিক তদন্ত কমিটিকে এক সপ্তাহের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হলেও তারা ৫২ সপ্তাহেও দিতে পারেনি।

এই ঘটনায় প্রশাসনিক ব্যবস্থার পাশাপাশি রাজনৈতিকভাবে সুরাহার কথা থাকলেও সেটা হয়নি। দুই নেতাকে ঢাকায় ডেকে আলোচনার কথা বলেছিলেন কেন্দ্রীয় নেতারাও। তবে সেটাও আর হয়নি।

২০১৮ সালের ১৬ জানুয়ারি ওই হামলার শিকার হয়ে আহত হন মেয়র আইভীসহ বেশ কয়েকজন আওয়ামী লীগ নেতা। এ সময় পিস্তল বের করে শামীমের অনুসারী এক নেতার শাসানোর ছবি ভাইরাল হয়। অবশ্য সে সময় প্রতিপক্ষের হামলার শিকার হয়ে তিনি পিস্তল ফেলেই পালান।

শহরের প্রধান সড়ক থেকে হকার উচ্ছেদ করে পথচারীদের চলার পথ সহজ করার পক্ষে আইভী। তবে পুনর্বাসন ছাড়া উচ্ছেদের বিরোধী ছিলেন শামীম ওসমান। দুই নেতার মধ্যে নতুন করে বিরোধ তৈরি হয় এই ঘটনাটি নিয়ে। আর সংঘর্ষের পর ঢাকায় সরকারের পক্ষ থেকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল যথাযথ আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছিলেন একাধিকবার। 

ওই সংঘর্ষের পর শহরের ফুটপাতে কয়েকদিন হকার বসা বন্ধ থাকলেও পরে তারা আবার ফিরে আসতে শুরু করে। তবে গত ১০ জানুয়ারি নারায়ণগঞ্জ শহরের ফুটপাত আবার হকারমুক্ত করা হয়। পুলিশ সুপার হারুন উর রশিদ যোগদানের পর সম্প্রতি চাষাঢ়া থেকে হকার উচ্ছেদ করেন তিনি।

২০১৭ সালের ২৫ ডিসেম্বর সিটি করপোরেশন ও জেলা পুলিশের যৌথ অভিযানে শহরের ফুটপাত থেকে হকারদের উচ্ছেদ করা হয়। পরের দিন থেকে হকারদের আন্দোলন চলতে থাকে। হকাররা যায় শামীম ওসমান ও সদর আসনের সংসদ সদস্য সেলিম ওসমানের কাছে। সেলিম সরাসরি হকারদের পক্ষ না নিলেও শামীম দাঁড়ান তাদের পাশে।

ওই বছরের ১৬ জানুয়ারি বিকাল সোয়া ৪টার দিকে নগর ভবনের সামনে থেকে বের হন মেয়র আইভী। হকারদের অবস্থান ছিল চাষাঢ়া শহীদ মিনারে। আইভী মিছিল নিয়ে আগাতে থাকেন চাষাঢ়ার দিকে। শহীদ মিনার থেকে হকাররাও সায়াম প্লাজার দিকে যাওয়া শুরু করেন। মধ্যে শুরু হয়ে যায় দুই পক্ষের মারামারি, ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া।

এ সময় শামীম ওসমান অনুগামী যুবলীগ নেতা নিয়াজুল ইসলাম অস্ত্র বের করলে তাকে মারধর করেন আইভী অনুসারীরা। ছিনিয়ে নেওয়া হয় অস্ত্র। শামীম ওসমানের নেতাকর্মীরা পাল্টা হামলা চালালে আইভীকে ‘মানবপ্রাচীর’ তৈরি করে রক্ষা করেন নেতাকর্মীরা। ঘটনার দুই দিনের মাথায় ঘটনাস্থল থেকে প্রায় কয়েক গজ দূর থেকে নিয়াজুল ইসলামের অস্ত্রটি উদ্ধার দেখায় পুুলিশ।

এই ঘটনার তদন্তে নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসনেরও একটি কমিটি হয়। অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক জসীম উদ্দিন হায়দার তিন সদস্যের কমিটির অপর দুই সদস্য ছিলেন তৎকালীন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) মোস্তাফিজুর রহমান ও র‌্যাব-১১-এর সহকারী পরিচালক (এএসপি) বাবুল আখতার। নির্দেশ ছিল এক সপ্তাহের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে।

৫২ সপ্তাহেও প্রতিবেদন জমা পড়েনি, সেটি নিশ্চিত করেছেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক জসীম উদ্দীন হায়দার। যুক্তি দেখান, তদন্তের কাজ যখন শেষ পর্যায়ে ছিল তখন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোস্তাফিজুর রহমানকে পদোন্নতি দিয়ে মেহেরপুর জেলার এসপি করা হয়েছে। ফলে তদন্ত কাজ আরও ধীরগতি হয়ে গেছে। এখন নতুন করে কমিটি না হওয়া পর্যন্ত কিছুই বলা যাচ্ছে না। আর কমিটি করবেন জেলা প্রশাসক রাব্বী মিয়া।

সংঘর্ষের এক সপ্তাহ পর ২৩ জানুয়ারি মেয়র আইভীর পক্ষে নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানায় লিখিত অভিযোগ দেন সিটি করপোরেশনের আইন কর্মকর্তা জিএম এ সাত্তার। এতে অস্ত্র প্রদর্শনকারী নিয়াজুল ইসলাম খান ও নারায়ণগঞ্জ মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সম্পাদক শাহ নিজামসহ নয়জনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাত প্রায় এক হাজার জনকে আসামি করে লিখিত অভিযোগ করা হয়।

ঘটনার আট দিন পর ২৪ জানুয়ারি রাতে সদর মডেল থানার পরিদর্শক (অপারেশন) জয়নাল আবেদীন বাদী হয়ে মামলা করেন। এতে চাষাঢ়ায় সরকারি কাজে বাধা, জনস্বার্থে ব্যাঘাত, পুলিশের ওপর হামলার অভিযোগ এনে ৪০০ থেকে ৫০০ জনকে আসামি করা হয়।

নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কামরুল ইসলাম জানান, ওই মামলাটির তদন্ত কাজ এখনো শেষ হয়নি।