মানসিকভাবে শক্তিশালী মানুষের সাত অভ্যাস

প্রকাশ | ১৮ জানুয়ারি ২০১৯, ১৯:০৭ | আপডেট: ১৮ জানুয়ারি ২০১৯, ১৯:১৩

সদর উদ্দীন লিমন

পৃথিবীতে প্রতিটি মানুষেরই ভালো ও মন্দের মধ্যে পার্থক্য করার ক্ষমতা আছে। প্রতিটি বুদ্ধিমান মানুষই স্বপ্ন দেখে যথাযথভাবে সব পরিস্থিতি মোকাবেলা করার জন্য। এগুলো সম্ভব মানসিকভাবে শক্তিশালী হলে। অনেকেরই একসঙ্গে বহু বিষয় সামলাতে হয়। এমন অনেক ব্যক্তি আছেন যারা একই সাথে ব্যবসা করেন, পরিবার ও আত্মীয় স্বজনদের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখেন, সন্তানদের পড়ালেখা করান, নিয়মিত শারীরিক অনুশীলন করেন, ব্যবসায়িক প্রয়োজনে বা পরিবারকে নিয়ে দূরে কোথাও ঘুরতে যান। তবে তারা কোনো জাদু দিয়ে এসব করেন না। তাদের বিশেষ কোনো শক্তিও নেই। এসব করতে তাদের আলাদা বাজেট বা সময়ের প্রয়োজন হয় না। এসব ক্ষেত্রে মানসিকভাবে শক্তিশালী ব্যক্তিরাই টিকে থাকেন।

তারা তাদের ভাবনা ও আবেগ নিয়ন্ত্রণ করেন, যথাযথভাবে কাজ করেন, এমনভাবে কাজ করেন যা তার জীবনমানকে উন্নয়ন করে। মাঝে মাঝে তাদের অনেক সংগ্রামও করতে হয়। তারা কোনো প্রকার ভয় ছাড়াই বাস্তব পরিস্থিতি মোকাবেলা করে। তারা নিয়মিত কিছু অভ্যাস মেনে চলেন যেগুলো তাদের মানসিক পেশিগুলোকে শক্তিশালী করে। সেই সাথে খারাপ অভ্যাসগুলো পরিত্যাগ করে যেগুলো তাদেরকে পেছনের দিকে নিয়ে যেতে পারে। এসব মানুষই একটা পর্যায়ে সুপারহিরো হিসাবে আবির্ভাব হয়। কিন্তু তারাও সাধারণ মানুষ। প্রত্যেকেই মানসিক পেশিগুলো শক্তিশালী করে সুপারহিরো হতে পারে। এজন্য আপনি একজন রোল মডেল খুঁজে বের করুন যে আপনাকে মোটিভেশন দিতে পারবে। আপনি এমন ব্যক্তিকে রোল মডেল হিসাবে বেছে নিন যার মধ্যে নি¤েœাক্ত সাতটি গুণ আছে। আপনিও এগুলো অনুসরণ করতে শুরু করুন। 

জীবনে যাদের এগিয়ে যাওয়ার লক্ষ্য আছে

জীবনে নিজের লক্ষ্য সম্পর্কে সবসময় সচেতন থাকতে হবে এবং সময়ের মূল্য দিতে হবে। প্রতিদিন সকালে আপনাকে ঠিক করতে হবে আপনি আজ কী কী কাজ করবেন। আপনাকে দায়িত্ববান হতে হবে। মোট কথা আপনাকে সঠিকভাবে চিন্তাভাবনা করতে হবে ও পরিকল্পনা করতে হবে। কথায় আছে যদি ইচ্ছা থাকে, তাহলে উপায় হয়।

‘যখন তুমি ভাবনার প্রতি নজর দাও সেগুলো শব্দ হয়। যখন শব্দের প্রতি নজর দাও সেগুলো কাজে পরিণত হয়। যখন কাজের প্রতি মনোযোগী হও তখন সেগুলো অভ্যাসে পরিণত হয়। যখন অভ্যাসের দিকে নজর দাও তখন সেগুলো আপনার চরিত্রে পরিণত হয়। যখন তুমি চরিত্রিরে প্রতি নজর দাও তখন সেটা আপনার ভাগ্য নির্ধারণ করে।’ (লাও জু)

ক্ষমতার বাইরে না যাওয়া

‘তোমার জীবনে তখনই অবিশ্বাস্য পরিবর্তন আসে যখন তুমি এমন সিদ্ধান্ত নাও যেটা নিয়ন্ত্রণের ক্ষমতা তোমার আছে এবং যা তোমার নিয়ন্ত্রণের ক্ষমতা নেই সেখান থেকে সরে আস।’ (স্টিভ মারাবোলি)

আমরা যেটা নিয়ন্ত্রণ করতে পারি না তার উপর নজর দেয়া মানে হচ্ছে শক্তি নষ্ট হওয়া এবং যেটা করতে পারি সেটা থেকে মনোযোগ সরে আসা। যৌক্তিক মানুষ সব একসঙ্গে করতে যায় না। তারা বাছাই করে নেয় যে, কোনটা তার প্রয়োজন এবং কোনটা করার সামর্থ্য তার আছে। আর তারা স্বীকার করে নেয় যে, এটা করার ক্ষমতা তার নেই। এভাবেই তারা দুশ্চিন্তা থেকে মুক্ত হয়।

মানুষ আমাদের নিয়ে কী ভাবে সেটা আমরা নিয়ন্ত্রণ করতে পারি না। কিন্তু আমরা দৃঢ় ও বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক স্থাপনের জন্য চেষ্টা করতে পারি। আমরা নিশ্চিত করে বলতে পারি না যে, চাকরি পাব। কিন্তু চাকরির জন্য আমরা নিজেকে ভালোভাবে প্রস্তুত করতে পারি।

অপ্রত্যাশিত ফলাফল গ্রহণ করা

জীবন কঠিন হতে পারে। মানসিকভাবে শক্তিশালী ব্যক্তিরা সবসময় ইতিবাচক চিন্তাভাবনা করে ও কৌঁশল গ্রহণ করে। তারা সবসময় জীবনের ভালো দিকগুলো খুঁজে বের করার চেষ্টা করে। তারা শুধু অপরাধ সংক্রান্ত বিষয় বা অপরাধীদের খুঁজে বের করার চেষ্টা করে না। তারা নিজের দুর্দশা আরেকজনের সঙ্গে তুলনা করে না। তারা প্রতিক’লতা ও চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে পছন্দ করে এবং অপ্রত্যাশিত কোনো ফলাফলকেও সহজে মেনে নেয়।

অতীত নিয়ে পড়ে থাকে না

মানসিকভাবে যারা শক্তিশালী তারা পেছনের দিকে ফিরে তাকায়, বর্তমান সময় উপভোগ করে ও ভবিষ্যতের জন্য পরিকল্পনা করে। কিন্তু অতীত নিয়ে পড়ে থাকে না। তারা অতীত থেকে শিক্ষা নেয়। কিন্তু অতীতের ব্যর্থতা নিয়ে হতাশায় ভোগে না। মনের মধ্যে বর্র্তমান ও ভবিষ্যতের চেয়ে অতীত বেশি ঘোরাঘুরি করলে মন বুড়ো হয়ে যায়।  

ঝুঁকি হিসাব করে 

মানসিকভাবে শক্তিশালী ব্যক্তিরা অনেক বিচক্ষণ। তাদের পরিকল্পনা আছে। তারা কোনো সিদ্ধান্ত নেয়ার সময় সব অপশন বিবেচনায় আনে। কোন কোন সমস্যা মোকাবেলা করতে হতে পারে বা অন্য আরো কী ফলাফল আসতে পারে তা নিয়ে ভাবে। সবকিছু বিবেচনা করে তারা বুদ্ধিদীপ্ত সিদ্ধান্ত নেয়। এর মানে এই না যে তারা বড় স্বপ্ন দেখে না। তারা ঝুঁকি নেয়, কিন্তু সচেতন থাকে।

পরচর্চা করে না

‘বড় মন আইডিয়া নিয়ে চর্চা করে; গড়পড়তা মন ঘটনা নিয়ে চর্চা করে; ছোট মন মানুষকে নিয়ে চর্চা করে।’ (এলিনর রুজভেল্ট)

মানসিকভাবে শক্তিশালী মানুষ জীবনের ইতিবাচক দিকগুলোর প্রতি নজর দেয়। তারা নিজের উন্নয়নে শক্তি ব্যয় করে। এ কারণেই তারা অন্যদের মধ্যে ভালো গুণ খোঁজে যেগুলো তারা নিজের জীবনে কাজে লাগাতে পারে। এসব মানুষ সবসময় চিন্তা করতে থাকে ও বড় পরিকল্পনা করে।

তারা দয়ালু

দয়ালু মানুষ সবসময় মানসিকভাবে সন্তুষ্ট থাকে। এটা বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণিত যে, দয়ালু মন অন্যদের সাথে শক্তিশালী সম্পর্ক গড়ে তুলতে সাহায্য করে। দয়ালু মানে দুর্বলতা নয়। দয়ালু হতে হলে সাহস ও শক্তির দরকার হয়। মানসিকভাবে যারা শক্তিশালী তারা পরশ্রীকাতরতায় ভোগে না। তারা সবসময় সচেতন ও আত্মবিশ^াসী। তারা সহজেই অন্যকে গ্রহণ করতে পারে। তারা সহজেই অন্যদের সমস্যা বুঝতে পারে। তারা নিজেরা সফল হওয়ার পাশাপাশি মানুষের হৃদয়েও জায়গা করে নেয়।

সূত্র: ফোর্বস