সহাবস্থান না হলে ডাকসু নির্বাচনে ‘যাবে না’ ছাত্রদল

শরিফ রুবেল
 | প্রকাশিত : ২০ জানুয়ারি ২০১৯, ০৯:০৩

প্রায় তিন দশক পর ডাকসু নির্বাচনের তোড়জোড় শুরু হলেও ক্ষমতাসীন দলের ছাত্রসংগঠন ছাত্রলীগের প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপির ছাত্রসংগঠন ছাত্রদল অনেকটাই নিশ্চুপ। কারণ তারা ক্যাম্পাসে ঢুকতে পারছে না। এই অবস্থায় নির্বাচনে তাদের যাওয়া নির্ভর করছে বেশ কিছু শর্তের ওপর।

সংগঠনের নেতারা বলছেন, এখন যে অবস্থা, তাতে ভোটে যাওয়ার মতো পরিবেশ আছে বলে তারা মনে করেন না। তারা চান নির্বিঘেœ প্রচার চালাতে। তবেই নির্বাচনে অংশগ্রহণের বিষয়টি বিবেচনা করবেন।

এরই মধ্যে প্রশাসনের সঙ্গে দুই দফা বৈঠকে আট দফা দাবি দিয়েছে ছাত্রদল। ডাকসু নির্বাচন বিষয়ে বিশ^বিদ্যালয়ের বৈঠকে ছাত্রদলের নেতারা অংশ নেন ঢাবি কর্তৃপক্ষের নিরাপত্তায়। এমনকি তাদের বিশ^বিদ্যালয়ের গাড়িতে করে এনে আবার বৈঠক শেষে গাড়িতে করেই নিয়ে যাওয়া হয়।

দুই বৈঠকে ছাত্রদল ক্যাম্পাসে সহাবস্থান নিশ্চিত করা, ভোটার হওয়ার উপযুক্ত সবার প্রার্থী হওয়ার সুযোগ দেওয়া, হলে হলে ভোট গ্রহণের বদলে কলা ভবন ও কার্জন হলে বুথ স্থাপন, গোটা ক্যাম্পাস সিসি ক্যামেরার আওতায় আনা, ছাত্রসংগঠনের কাছে গ্রহণযোগ্য শিক্ষকদের সমন্বয়ে ‘নিরপেক্ষ’ নির্বাচন কমিশন গঠন, তফসিল ঘোষণার পর প্রার্থী ও নেতা-কর্মীদের হয়রানি, মামলা বা গ্রেপ্তার না করা প্রভৃতি দাবি জানায়।

বামপন্থীসহ বিরোধী অন্য ছাত্রসংগঠনগুলোও দাবি করছে, তারা অংশগ্রহণমূলক, সহাবস্থানের নিশ্চয়তা, সমান সুযোগ এবং পেশিশক্তিমুক্ত পরিবেশে নিবার্চন চান। যদিও এ বিষয়ে ক্ষমতাসীন ছাত্রসংগঠন বিরোধীদের ক্যাম্পাসে আসার ক্ষেত্রে ছাত্র-অছাত্র ইস্যুতে শতর্ আরোপ করছে। আর এ ধরনের শর্ত সুষ্ঠু নির্বাচনের পথে অন্তরায় বলে ধরা হচ্ছে। কারণ এর আগেও এই নির্বাচনের উদ্যোগ আটকে যায় বিরোধী ছাত্রসংগঠনের এসব শর্তের কারণেই।

ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সাহিত্য ও প্রকাশনা সম্পাদক মিনহাজ উদ্দিন ভুঁইয়া ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘আমাদের ঠিকমতো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ঢুকতেই দেওয়া হয় না। আমাদের যদি হলে প্রবেশ এবং নির্বাচনের প্রচার-প্রচারণা সঠিকভাবে করতে দেওয়া হয়, তাহলে আমরা নির্বাচনে অবশ্যই অংশগ্রহণ করব। ছাত্রলীগ যেমন সুযোগ-সুবিধা পাবে, ছাত্রদলকেও তেমন সুযোগ নিশ্চিত করতে হবে। তা না হলে আমরা ডাকসু নির্বাচনে যাব না।’

প্রায় এক যুগ ধরে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতাকাঠামোর বাইরে থাকা বিএনপির মতো ছাত্রদলও বেকায়দায় নানা কারণে। সংগঠনের সভাপতি রাজীব আহসান আর সাধারণ সম্পাদক আকরাম হোসেন নাশকতার একাধিক মামলার আসামি। তাদের ফোনে পাওয়াও দুস্কর।

ছাত্রদলের প্রকাশনা সম্পাদক বলেন, ‘আমরা যদি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ ছাত্রছাত্রীদের সাথে কথা বলতে না পারি এবং তাদের নিয়ে নির্বাচনী ক্যাম্পেইন না করতে পারি, তাহলে এই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেও কোনো লাভ হবে না।’

সংগঠনের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সভাপতি আল মেহেদী তালুকদার বলেন, ‘আমরা যখনই ক্যাম্পাসে গিয়েছি, তখনই আমাদের কর্মীদের আক্রমণ করা হয়েছে। মারধর করে পুলিশে দেওয়া হয়েছে। মাত্র দুই মাস পর ডাকসু নির্বাচন, অথচ এখনো আমাদের ক্যাম্পাসে প্রবেশ করতে হয় প্রক্টরিয়াল টিমের প্রহরায়।’

এসব বিষয়ে জানতে চাইলে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি রেজওয়ানুল হক চোধুরী শোভন ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘ছাত্রলীগ কখনো কোনো ছাত্রসংগঠনকে তার মত প্রকাশে বাধা দেয়নি। কারণ ছাত্রলীগ স্বাধীন মত প্রকাশে বিশ্বাসী। তবে কেউ যদি ক্যাম্পাসে না এসে সহাবস্থান নিশ্চিত করতে চায়, তাহলে সেটি কীভাবে সম্ভব তা আমার জানা নেই।’

যদিও ক্যাম্পাসে সহাবস্থান রয়েছে দাবি করছেন ছাত্রলীগের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সভাপতি সনজিত চন্দ্র দাস। তিনি ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘ক্যাম্পাসে সহাবস্থান আছে। যারা বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়মিত শিক্ষার্থী, তারা ক্যাম্পাসে আসছেন, ক্লাস করছেন, আড্ডা দিচ্ছেন। সাধারণ শিক্ষার্থীরা যদি তাদের মতাদর্শ গ্রহণ করে নেন, তাহলে তারা ক্যাম্পাসে আসতে পারবেন, কেউ তো তাদের বাধা দিচ্ছে না।’

১৯২১ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পর ১৯২২-২৩ শিক্ষাবর্ষে ছাত্রসংসদ (ডাকসু) সৃষ্টি হয়। মোট ৩৬ বার এই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। স্বাধীনতার পর গত ৪৮ বছরে ভোট হয়েছে সাতবার। সাতবার ডাকসু নির্বাচন হয়েছে।

ডাকসুর সর্বশেষ নির্বাচন হয় ১৯৯০ সালের ৬ জুন। এরপর ৯১, ৯৪, ৯৫ ও ২০০৫ সালে তফসিল, এমনকি নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করা হলেও কিছু সহিংস ঘটনা, সুষ্ঠু পরিবেশ না থাকা, ছাত্রসংগঠনের বিরোধিতা ইত্যাদি কারণে তা আর হয়ে ওঠেনি।

২০১২ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ‘শিক্ষার্থী অধিকার মঞ্চ’ থেকে বিক্ষোভ, ধমর্ঘট, কালো পতাকা মিছিলের মাধ্যমে ডাকসু নির্বাচনের দাবি জানান সাধারণ শিক্ষার্থী ও বিভিন্ন ছাত্রসংগঠনের নেতা-কর্মীরা।

আন্দোলন, রাষ্ট্রপতির নিদের্শ এবং আদালতের আদেশের পর গত বছরের শেষে আবার ডাকসু নির্বাচনের বিষয়টি সামনে আসে। উপাচার্য আখতারুজ্জামান ২০১৯ সালের মার্চের মধ্যে ভোটের পরিকল্পনা ঘোষণা করেছেন।

সংবাদটি শেয়ার করুন

শিক্ষা বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :