স্তন ও জরায়ু-মুখ ক্যানসারে ১২ হাজার নারীর মৃত্যু

প্রকাশ | ২০ জানুয়ারি ২০১৯, ২১:১৬

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস

গত বছর স্তন ক্যানসারে আক্রান্ত হন ১২ হাজার ৭৬৪ জন নারী, যার ছয় হাজার ৮৪৬ জনেরই মৃত্যু হয়েছে। ওই এক বছরে আট হাজার ৮৬ জন নারী জরায়ু-মুখ ক্যানসারে আক্রান্ত হন, মৃত্যুর সংখ্যা ছিল পাঁচ হাজার ২১৪ জন।

‘জরায়ু-মুখ স্তন ক্যানসার প্রতিরোধ সপ্তাহ-২০১৯’- এর কর্মসূচিতে গতকাল এ তথ্য জানানো হয়েছে। ওই দুই রোগ সংক্রান্ত সেবার পরিধি ও মান উন্নয়ন এবং জনসচেতনতা বাড়াতে ১৯ থেকে ২৫ জানুয়ারি উদ্্যাপিত হচ্ছে এ সপ্তাহ।

এ উপলক্ষে রবিবার সকালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) বটতলা থেকে জনসচেতনতামূলক র‌্যালি বের করে জাতীয় জরায়ু-মুখ ও স্তন ক্যানসার স্ক্রিনিং ও প্রশিক্ষণ কেন্দ্র। উপাচার্য অধ্যাপক ডা. কনক কান্তি বড়ুয়ার নেতৃত্বে র‌্যালিটি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন অংশ প্রদক্ষিণ করে।

র‌্যালিপূর্ব সংক্ষিপ্ত সমাবেশে সেন্টার ফর সার্ভিক্যাল অ্যান্ড ব্রেস্ট ক্যান্সার স্ক্রিনিং অ্যান্ড ট্রেনিংয়ের প্রকল্প পরিচালক অধ্যাপক আশরাফুন্নেসা জানান,  পৃথিবীতে ক্যানসারে আক্রান্ত নারীদের একটি বড় অংশ জরায়ু-মুখ ও স্তন ক্যানসারের শিকার। শুধুমাত্র বাংলাদেশেই ২০১৮ সালে আট হাজার ৮৬ জন জরায়ু-মুখ ক্যানসার আক্রান্ত নারীকে শনাক্ত করা হয়েছে। এই ক্যানসারে মারা যাওয়া নারী ছিলেন পাঁচ হাজার ২১৪ জন। ওই বছরে স্তন ক্যানসারে আক্রান্ত নারীর সংখ্যা ছিলো ১২ হাজার ৭৬৪ জন আর মৃত্যুবরণ করেন ছয় হাজার ৮৪৬ জন।

অধ্যাপক আশরাফুন্নেসা বলেন, জরায়ু-মুখ ক্যানসার এমন একটি মরণব্যাধি, যা প্রাথমিকভাবে সাধারণত কোনো দৃশ্যমান পূর্বলক্ষণ প্রকাশ করে না।  কিন্তু নিয়মিত পরীক্ষার মাধ্যমে প্রাথমিক অবস্থায় শনাক্ত করা গেলে এই ক্যানসারের সম্পূর্ণ নিরাময় সম্ভব। জরায়ু-মুখ ক্যানসারের ক্ষেত্রে ভায়া পরীক্ষায় রোগের পূর্বাবস্থা নির্ণয় করা যায়। ভবিষ্যতে ক্যানসারে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকলে সেটিও শনাক্ত করা সম্ভব। স্তন ক্যানসারের ক্ষেত্রে সিবিই পরীক্ষায় প্রাথমিক অবস্থায় নির্ণয় করা সম্ভব যা প্রশিক্ষণের পর নারীরা নিজে নিজেই করতে পারেন। এই পরীক্ষাগুলো জরায়ু-মুখ ও স্তন ক্যানসার নির্ণয়ে খুবই সহজ ব্যথামুক্ত ও কার্যকর।

তিনি আরো বলেন, বাংলাদেশ সরকার বিশ্বব্যাপী আক্রান্ত হওয়ার প্রকোপ ও ভয়াবহতা উপলব্ধি করে অনেক আগেই এদেশের নারীদের এ দুটি মরণব্যাধি থেকে রক্ষার উদ্যোগ নেয়। স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় ৩০ থেকে ৬০ বছর বয়সী সকল বিবাহিত নারীর বিনামূল্যে ভায়া ও সিবিই করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে। সেই লক্ষ্যে সরকারের অর্থায়নে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের তত্ত্বাবধানে জাতীয় জরায়ু-মুখ ও স্তন ক্যানসার নির্ণয় কেন্দ্র স্থাপিত হয়েছে। জাতীয় কেন্দ্রটির তত্ত্বাবধানে সফলতার সঙ্গে দেশজুড়ে ৪৩১টি কেন্দ্র স্থাপিত হয়েছে মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, জেলা সদর  হাসপাতাল, নির্বাচিত উপজেলা স্বাস্থ্যকেন্দ্র এবং মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রে।

উপাচার্য অধ্যাপক ডা. কনক কান্তি বড়ুয়া বলেন, ‘বিএসএমএমইউয়ে সেন্টার অব এক্সিলেন্স হিসেবে রোগীদের সেবা দিয়ে যাচ্ছে। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের জাতীয় জরায়ু-মুখ ও স্তন ক্যানসার স্ক্রিনিং ও প্রশিক্ষণ কেন্দ্র থেকে দেশজুড়ে মা ও বোনদের মাঝে স্তন ও জরায়ু ক্যানসার বিষয়ে জনসচেতনতা সৃষ্টি, নির্ণয় ও প্রতিরোধসহ চিকিৎসাসেবা প্রদান করছে।’

‘সমাজের অর্ধেক অংশই নারী। জরায়ু ও স্তন ক্যানসার বড় ধরনের ঘাতকব্যাধি। শুরুতে এই ক্যানসার নির্ণয় করতে পারলে অনেক মা-বোনের জীবন রক্ষা করা যাবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মাতৃমৃত্যু হার ও শিশু মৃত্যুহার হ্রাস করতে অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রীর সহযোগিতায় প্রতিষ্ঠিত জাতীয় জরায়ু-মুখ ও স্তন ক্যানসার স্ক্রিনিং ও প্রশিক্ষণ কেন্দ্র এ দুই রোগে নারীদের মৃত্যুহার অনেকাংশেই কমিয়ে আসতে সক্ষম হবে, রোগ প্রতিরোধেও বিরাট ভূমিকা পালন করবে।

র‌্যালিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (গবেষণা ও উন্নয়ন) অধ্যাপক শহীদুল্লাহ সিকদার, রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ডা. এ বিএম আব্দুল হান্নান, গাইনোকোলজিক্যাল অনকোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. সাবেরা খাতুন, পরিচালক (অর্থ ও হিসাব) আবদুস সোবহানসহ এই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, শিক্ষার্থী, চিকিৎসক, কর্মকর্তা, নার্স ও কর্মচারীরাও অংশ নেন।       

সপ্তাহের কর্মসূচি অনুসারে হাসপাতালের বিভিন্ন বিভাগে আসা রোগীদের জরায়ু-মুখ ও স্তন ক্যানসারের ভয়াবহতা ও প্রতিরোধের উপায় সম্পর্কে সচেতনতামূলক বার্তা দেওয়া, সকলকে তাদের পরিচিতদের মাঝে এই বার্তা পৌঁছে দেওয়ার ব্যাপারে উৎসাহিত এবং অধিক পরিমাণে ভায়া ও সিবিই পরীক্ষা করা হচ্ছে। বিএসএমএমইউর এই কার্যক্রম মাসব্যাপী অব্যাহত থাকবে।