পল্লী বিদ্যুতের চেয়ারম্যানের মুখোমুখি

আলোর ফেরিওয়ালা এখন সারা দেশে

দীপান্বিতা রায়
 | প্রকাশিত : ২১ জানুয়ারি ২০১৯, ০৮:৫৮

ঝিনাইদহে পল্লী বিদ্যুতের একজন আঞ্চলিক কর্মকর্তা ঘুষ ও হয়রানিমুক্ত বিদ্যুৎ সংযোগ প্রদানে যে উদ্যোগ নিয়েছেন, সেটি সারা দেশেই ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের চেয়ারম্যান মেজর (অব.) জেনারেল মঈন উদ্দীন জানিয়েছেন, বর্তমানে দেশের ৮০টি সমিতিই চালু করেছে ‘আলোর ফেরিওয়ালা’ নামে এই উদ্যোগ।

এর অংশ হিসেবে বাড়ি বাড়ি গিয়ে সংযোগ দেওয়া হচ্ছে পাঁচ মিনিটেই। সংযোগের বাইরে কোনো ধরনের ঘুষ বা হয়রানি থেকে মুক্তি পেয়েছে গ্রাহকরা।

ঢাকা টাইমসকে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে মঈনউদ্দিন জানান, তারা সাধারণকে দুর্নীতি ও হয়রানিমুক্ত সেবা নিশ্চিত করবেন। আর এ জন্য প্রয়োজনীয় যা যা দরকার তার সবই করা হবে।

বিদ্যুৎ সংযোগ পেতে তো হয়রানির অভিযোগ ছিল। এই পরিস্থিতিতে সম্প্রতি চালু হওয়া ‘আলোর ফেরিওয়ালা’ উদ্যোগটি এসেছে। এটা কীভাবে এল?

ঝিনাইদহ পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির এজিএম শেখ আবদুর রহমান ও তার সহকর্মীরা দুর্নীতি ও হয়রানিমুক্ত গ্রাহকসেবা প্রদানের লক্ষ্যে ‘আলোর ফেরিওয়ালা’ নামে মানুষের বাড়ি বাড়ি গিয়ে বিদ্যুৎ সংযোগের এক অভাবনীয় উদ্যোগ চালু করেছেন।

এই উদ্যোগকে এগিয়ে নিতে আপনারা কী করেছেন?

আমরা একে খুবই ভালোভাবে দেখছি। এর অংশ হিসেবে দেশের ৮০টি সমিতিকে বর্তমানে ৮০০টি ভ্যানের সাহায্যে সারা দেশে বিদ্যুৎ সংযোগ প্রদানের নির্দেশনা দিয়েছি। এর বাস্তবায়ন ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে। এতে গ্রামাঞ্চলের মানুষ দুর্নীতি ও হয়রানিমুক্তভাবে দ্রুত বিদ্যুৎ পাবে এবং বিদ্যুৎ-বিভ্রাটের সমস্যাও সহজেই সমাধান হবে।

আপনাদের পরবর্তী লক্ষ্য কী?

বর্তমান সরকার গত ৬ জানুয়ারি দায়িত্ব গ্রহণ করে ১০০ দিনের কর্মপরিকল্পনায় ক. সুশাসন নিশ্চিত করা, খ. ক্ষুধা ও দারিদ্র্য দূর করা, গ. আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণ, ঘ. অবকাঠামো উন্নয়ন ও ঙ. ঘরে ঘরে বিদ্যুৎÑ এই পাঁচটি কার্যক্রমকে অগ্রাধিকার হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। এর মধ্যে ‘ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ’ একটি অন্যতম অগ্রাধিকার। সরকারের নির্বাচনী অঙ্গীকার ‘আমার গ্রাম, আমার শহর’ বিনির্মাণে বিদ্যুতের অপরিহার্যতা অনস্বীকার্য।

পল্লী বিদ্যুতের শুরুটা কীভাবে হয়?

বাংলাদেশের প্রথম সংবিধানের ১৬তম অনুচ্ছেদে একটি কথা বলা হয়েছিল যে, গ্রাম ও শহরাঞ্চলীয় বৈষম্য দূর করতে বিদ্যুতায়ন করতে হবে। ১৯৭৫ সালের সেপ্টেম্বর মাসে আইইবির সম্মেলনে বঙ্গবন্ধু একটি কথা বলেছিলেন, বাংলাদেশের শহরাঞ্চলে অর্থাৎ শতকরা মাত্র ১৫ ভাগ মানুষের জন্য বিদ্যুৎ আছে। বাকি ৮৫ ভাগ মানুষের জন্য অর্থাৎ গ্রামাঞ্চলের বৃহৎ এলাকায় বিদ্যুতের ব্যবস্থা করতে হবে।

এই চিন্তাচেতনার ভিত্তিতে ১৯৭৮ সালে আরইবির জন্ম হয়। এলাকাভিত্তিক বিদ্যুতায়নের মধ্যে দিয়ে ১৬টি সমিতির মাধ্যমে পল্লীবিদ্যুতের যাত্রা শুরু হয়।

তিন দশকে আপনাদের সমিতি তার কাক্সিক্ষত লক্ষ্য পূরণ করতে পেরেছে কী?

১৯৭৮ সাল থেকে ২০০৮ পর্যন্ত ৩০ বছরে পল্লী বিদ্যুৎ মোট ৭৪ লাখ পরিবারকে বিদ্যুৎ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু বর্তমান সরকারের আমলে অর্থাৎ ২০০৯ থেকে ২০১৮ পর্যন্ত এক কোটি ৭৬ লাখ পরিবারকে সংযোগ দেওয়া হয়েছে। বর্তমানে সমিতির গ্রাহক সংখ্যা দুই কোটি ৫০ লাখ। গত সাড়ে তিন বছরে এক কোটি ৩০ লাখ পরিবারকে সংযোগ দিয়েছি। এটি আমাদের উল্লেখযোগ্য সফলতা।

পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি কী বিদ্যুৎ চাহিদা পূরণ করতে পারছে?

বর্তমানে দেশের ৩০৪টি উপজেলায় মোট ৯০ শতাংশ এলাকায় বিদ্যুৎ দেওয়া সম্ভব হয়েছে। এর মধ্যে ২৬৭টি উপজেলা শতভাগ বিদ্যুতায়িত হয়েছে। খুব শিগগিরই অন্যান্য এলাকাও শতভাগ বিদ্যুতায়িত করা হবে। তবে চট্টগ্রাম পার্বত্য অঞ্চলের তিনটি জেলা রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবান পল্লী বিদ্যুতের আওতাধীন নয়। ওটা পিডিবির অধীন।

কোন কোন জেলায় পর্যাপ্ত বিদ্যুৎ সরবরাহ সম্ভব হয়নি? কেন সম্ভব হয়নি?

ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে কিছু কিছু জেলায় প্রয়োজনীয় বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়া সম্ভব হয়নি। যেমনÑ কিশোরগঞ্জ, সুনামগঞ্জ, নেত্রকোনা, পিরোজপুর, পটুয়াখালী, ভোলা। এসব হাওর ও উপকূলীয় এলাকায় বছরের মাত্র তিন মাস বিদ্যুৎ সংযোগের কাজ করা সম্ভব। এ কারণে সেখানে শতভাগ বিদ্যুতায়নের কাজ করা কঠিন।

বিদ্যুৎ খাত থেকে আপনাদের আয় কত? অর্থাৎ প্রতি মাসে আপনারা গ্রাহকের কাছে কত টাকার বিদ্যুৎ বিক্রি করেন?

২০০৮ সালে মাসে আড়াইশ কোটি টাকার বিদ্যুৎ বিক্রি হতো। বর্তমানে প্রতি মাসে এক হাজার ৮০০ কোটি টাকার বিদ্যুৎ বিক্রয় করি আমরা।

পল্লী বিদ্যুতের বিকাশে আপনার অবদান কী?

এই উন্নয়ন মূলত সরকারের অবদান। আমরা সম্মিলিতভাবে কাজ করছি। সরকারের স্বপ্নকে বাস্তবায়ন করাই আমাদের উদ্দেশ্য। আমরা ডিসেম্বর ২০১৯-এর মধ্যে ৪৬১টি উপজেলা শতভাগ বিদ্যুতায়নের সাফল্য অর্জনে ঐক্যবদ্ধভাবে ঝাঁপিয়ে পড়ার জন্যও নির্দেশনা দিয়েছি।

সংবাদটি শেয়ার করুন

সাক্ষাৎকার বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

সাক্ষাৎকার এর সর্বশেষ

‘স্থিতিশীল সামষ্টিক অর্থনীতির স্বার্থে সরকারকে ভারসাম্যমূলক নীতি-উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে’: ড. আতিউর রহমান

প্রতি মুহূর্তেই মনে হচ্ছিল আর্মিরা ধরে নিয়ে যাবে: ফরিদা খানম সাকি

দাম বাড়ালে এতক্ষণে কার্যকর হয়ে যেত: ক্যাব সহ-সভাপতি নাজের হোসাইন

জন্ম থেকেই নারীদের যুদ্ধ শুরু হয়: নারী উদ্যোক্তা ফরিদা আশা

নারীরা এখন আর পিছিয়ে নেই

ভবন নির্মাণে সিটি করপোরেশনের ছাড়পত্র নেওয়ার নিয়ম করা উচিত: কাউন্সিলর আবুল বাশার

তদারকি সংস্থা এবং ভবন নির্মাতাদের দায়িত্বশীল হতে হবে: অধ্যাপক আদিল মুহাম্মদ খান

বেইলি রোডের আগুনে রাজউকের ঘাটতি রয়েছে: মো. আশরাফুল ইসলাম

নতুন করে পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে নিশ্চিত হয়ে ভবন অনুমোদন দিতে হবে: ইকবাল হাবিব

বীমা খাতে আস্থা ফেরাতে কাজ করছি: আইডিআরএ চেয়ারম্যান জয়নুল বারী

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :