ধানের শীষের জনপ্রতিনিধিরা উঠছেন নৌকায়!

প্রকাশ | ২৩ জানুয়ারি ২০১৯, ০৯:৩১

শাহাব উদ্দিন শিহাব, সিলেট

তারা বিএনপির সমর্থনে ধানের শীষ প্রতীকে স্থানীয় নির্বাচনে বিজয়ী হয়েছেন। অথচ এখন আওয়ামী লীগে যোগ দিয়ে নৌকার পাল্লা ভারী করছেন। তাদের কেউ মামলা থেকে বাঁচতে চাইছেন, কেউবা পরের নির্বাচনে বিজয় নিশ্চিত করতে চাইছেন। আর কেউ এলাকার উন্নয়নের অজুহাত দেখাচ্ছেন। সিলেটের রাজনীতিতে এসব দলবদল এখন আলোচিত বিষয়।

স্থানীয় সূত্র জানায়, মামলায় জর্জরিত বিএনপির অনেক জনপ্রতিনিধি ক্ষমতাসীন দলে ভিড়েছেন। যোগ দেওয়ার অপেক্ষায় আছেন আরও কয়েকজন। নৌকা নিয়ে নির্বাচন করলে স্থানীয় সরকার নির্বাচনে বিজয় অনেকটা নিশ্চিত, এই ভাবনা থেকেও অনেকেই দলবদল করছেন।

দক্ষিণ সুরমা উপজেলার কুচাই ইউনিয়নের টানা চারবারের চেয়ারম্যান আবুল কালাম। বিএনপি-সমর্থিত প্রার্থী হিসেবেই চারবার নির্বাচিত হয়েছেন তিনি। সম্প্রতি আওয়ামী লীগে যোগ দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন জেলা বিএনপির সদ্য বহিষ্কৃত এই উপদেষ্টা। এদিকে দক্ষিণ সুরমার বরইকান্দি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও দক্ষিণ সুরমা উপজেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক হাবিব হোসেন গত ১৯ জানুয়ারি যোগ দিয়েছেন আওয়ামী লীগে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সিলেটে বিএনপির স্থানীয় নেতা এমন আরও কয়েকজন জনপ্রতিনিধি আওয়ামী লীগে যোগ দেওয়ার মিছিলে আছেন। তাদের কেউ উপজেলা চেয়ারম্যান, কেউ সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলর, আর কেউ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান। মামলা থেকে বাঁচতে ও আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হওয়ার লক্ষ্যেই তারা দলবদল করছেন বলে জানা গেছে।

নাম-পরিচয় প্রকাশে অনিচ্ছুক তাদের কেউ কেউ জানান, আগামীতে স্থানীয় সরকার নির্বাচনগুলোতে বিএনপির প্রার্থী হয়ে বিজয়ী হওয়ার বিষয়টি অনিশ্চিত। কেননা দলীয় প্রতীকের উপজেলা ও ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচন সুষ্ঠু হওয়ার মতো পরিবেশ তৈরির সুযোগ কম। এ ক্ষেত্রে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেলে বিজয় অনেকটা নিশ্চিত হবে। তাই স্থানীয় সরকার নির্বাচনের তোড়জোড় শুরু হতেই সরকারি দলে ভিড়তে শুরু করেছেন তারা।

সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র ও বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য আরিফুল হক চৌধুরী আওয়ামী লীগে যোগ দিচ্ছেন, সম্প্রতি এমন গুঞ্জনও ছিল এখানকার রাজনীতিতে। তবে তিনি বিএনপির একটি অনুষ্ঠানে দলবদলের গুঞ্জনকে ‘অপপ্রচার’ দাবি করে এতে কান না দেওয়ার আহ্বান জানান।

এদিকে বিএনপি থেকে আসা নেতাদের আওয়ামী লীগ স্বাগত জানাচ্ছে। বিপরীতে সিলেট বিএনপির নেতারা তাদের ‘বিশ্বাসঘাতক’ আখ্যা দিচ্ছেন। এ প্রসঙ্গে সিলেট জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আলী আহমদ ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘যারা দলবদল করে তারা বিশ্বাসঘাতক। তারা জনগণের বিশ্বাস নিয়ে খেলা করেছে। দলবদলকারীরা নিজের স্বার্থ ছাড়া আর কিছুই আশা করে না।’

সদ্যই দলবদলকারী কুচাই ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবুল কালাম ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘আমার ইউনিয়নের উন্নয়নের কথা চিন্তা করেই আমি আওয়ামী লীগে যোগ দিচ্ছি। সরকার ও স্থানীয় সাংসদ অন্য দলের হলে এলাকার উন্নয়নে কাক্সিক্ষত বরাদ্দ পাওয়া যায় না।’

সিলেটের রাজনীতির এই দলবদলকে ভালো চোখে দেখছেন না সিলেট জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি মোহাম্মদ লালা। তিনি ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘পঁচাত্তরের পর থেকেই দলবদলের একটা প্রথা চলে আসছে। দলবদল বিষয়টা বিশ্বাসঘাতকতার মতোই একটি অনৈতিক বিষয়।’