পুষ্টিহীনতায় কঙ্কালসার চঞ্চল চিত্রাহরিণ

শাহ্ আলম শাহী, দিনাজপুর
 | প্রকাশিত : ২৪ জানুয়ারি ২০১৯, ০৯:২৮

বেড়াতে আসা দর্শনার্থীদের দেখলেই খাঁচার ওপার থেকে ছুটে আসে চিত্রাহরিণের দল। খাঁচার ফাঁক দিয়ে মুখ বাড়িয়ে করুণ দৃষ্টিতে খাবার চায়। দর্শনার্থীরা বাদাম-কলাসহ সামান্য যে খাবার মুখে তুলে দেন, সেগুলোতে ক্ষুধার জ্বালা মেটাতে চায়। ক্ষুধার জ্বালায় খাঁচার ভেতরে এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্তে হরিণগুলো ছুটোছুটি করে অসহায়ের মতো।

এই হচ্ছে রামসাগর জাতীয় উদ্যানের চিত্রাহরিণগুলোর এখনকার দশা। অর্ধাহারে-অনাহারে পুষ্টিহীনতায় ভুগে ভুগে ক্রমেই দুর্বল হয়ে পড়ছে সেগুলো। দিনাজপুরের ঐতিহ্যবাহী উদ্যানটির পর্যটকদের প্রধান আকর্ষণ দূরন্ত ও চঞ্চল প্রাণীগুলোর মধ্যে আগের মতো আর প্রাণচাঞ্চল্য নেই।

সরেজমিনে জানা গেছে, রামসাগর দিঘিতে জন্মানো শাপলা-লতা খেয়ে প্রাণচঞ্চল ছিল হরিণগুলো, এ খাবারই বেশি পছন্দ করত ওরা। কিন্তু ইঞ্জিনচালিত নৌকার অবাধ চলাচল ও মাছ শিকারে গাছ বিনষ্ট হয়ে এখন আর জন্মে না শাপলা। ফলে বন কর্তৃপক্ষ ও দর্শনার্থীদের দেওয়া অপ্রতুল খাবার খেয়ে বেশকিছু হরিণ দুর্বল ও কঙ্কালসার হয়ে পড়েছে।

১৯৯১ সালে মাত্র ছয়টি হরিণ নিয়ে রামসাগর জাতীয় উদ্যানের মিনি চিড়িয়াখানার যাত্রা শুরু হয়, বর্তমানে যার সংখ্যা ৪৮টি। শতাধিক হরিণের বংশবিস্তার হলেও রাজধানী ঢাকাসহ বিভিন্ন চিড়িয়াখানায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে অনেকগুলো। রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর শুভেচ্ছাস্বরূপ বেশ কিছু হরিণ পাঠানো হয়েছে দেশের বাইরেও। তবে এখানে থাকা ১২টির বেশি মা হরিণের কিছুদিনের মধ্যেই বাচ্চা প্রসবের সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানিয়েছেন কর্তৃপক্ষ।

অত্যন্ত আকর্ষণীয় হরিণগুলো দেখতে প্রতিদিন ভিড় জমাচ্ছেন হাজারো দর্শনার্থী। সচেতন দর্শনার্থীরা হরিণগুলোর দশা দেখে উদ্বেগ প্রকাশ করে বলছেন, পর্যাপ্ত খাবার পরিবেশন ও যত্ম নেওয়া প্রয়োজন। দূরন্ত ও চঞ্চল চিত্রাহরিণগুলো ক্রমেই দুর্বল হয়ে পড়ায় হতাশ প্রাণীবিদরাও।

আর উদ্যানের তত্ত্বাবধায়ক রোটারিয়ান আব্দুস সালাম তুহিন জানান, তিনি কোনোমতে হরিণগুলোর খাবার পরিবেশন ও যত্ম অব্যাহত রেখেছেন। শীতের প্রকোপ থেকে বাঁচাতে চিড়িয়াখানায় ঘর গড়ে দিয়েছেন, যেখানে আশ্রয় নিয়ে রক্ষা পাচ্ছে হরিণগুলো।

তুহিন জানান, শুধু হরিণই নয়, নীলগাই, অজগর, বানর, শকুন, বাজপাখিসহ মিনি চিড়িয়াখানার বন্য প্রাণীগুলোর খাবারে বরাদ্দকৃত টাকা অত্যন্ত অপ্রতুল। গত বছর মাত্র ছয় লাখ টাকা এসেছে খাদ্য খাতে। এক বছরের জন্য সরকার যা বরাদ্দ দেয়, তা দিয়ে তিন মাসেরও খাবার হয় না।

তিনি জানান, আগে এখানে শাপলা চাষের মাধ্যমে হরিণগুলোর খাবারের চাহিদা কিছুটা মেটানো হতো। কিন্তু এখন জেলা প্রশাসনের মাছ শিকার ও অবাধে ইঞ্জিনচালিত নৌকার চলাচলে সেই চাষও বন্ধ রয়েছে।

রামসাগরের ৬৮ দশমিক ৫৪ একরের পাড়ভূমি স্থলভাগ বন বিভাগ এবং ৭৭ দশমিক ৯০ একরের জলভাগ দিঘি নিয়ন্ত্রণ করছে জেলা প্রশাসন। দুই বিভাগের দ্বৈত নিয়ন্ত্রণে এই জাতীয় উদ্যানের কাক্সিক্ষত উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত হচ্ছে বলেও দাবি তত্ত্বাবধায়ক তুহিনের।

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :