অপরিকল্পিত বালু উত্তোলনে হুমকিতে সীতাকুণ্ড উপকূল

হাশেম তালুকদার, চট্টগ্রাম
 | প্রকাশিত : ২৪ জানুয়ারি ২০১৯, ০৯:৩৪

দীর্ঘদিন ধরে সমুদ্র উপকূলবর্তী এলাকায় অপরিকল্পিত বালু উত্তোলনে হুমকির মুখে প্রাকৃতিক পরিবেশ ও জনবসতি। সমুদ্রগর্ভে বিলীন হয়েছে শত বছরের চরবাঁশবাড়িয়া, ধ্বংস হচ্ছে পরিবেশ, বিলীনের আশঙ্কার মুখে বিস্তীর্ণ জনপদ-কৃষিজমি।

এদিকে গুলিয়াখালীতে প্রস্তাবিত ইকোপার্কের জমির বালিও উত্তোলন হতে থাকায় লোকজনের আশঙ্কা, চরবাঁশবাড়িয়ার মতোই সমুদ্রগর্ভে হারাবে এ এলাকাও। ফলে ইকোপার্ক প্রকল্পটি ভেস্তে যেতে পারে।

তারপরও থেমে নেই সীতাকুণ্ড-সন্দীপ চ্যানেলে অপরিকল্পিত বালি উত্তোলন। সমুদ্রে ড্রেজার বসিয়ে তীরবর্তী এলাকা থেকে জনসম্মুখে দিনদুপুরে বালি উত্তোলন করছেন স্বার্থান্বেষীরা। এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া দূরের কথা, কিছুই জানে না বলে দাবি করছে উপজেলা প্রশাসন।

গত দুই বছরে সীতাকু--সন্দীপ চ্যানেলের বুক থেকে অপরিকল্পিত এই বালি উত্তোলনে সমুদ্রতীরের পানিরক্ষা বাঁধের পশ্চিম পাশে শত বছর আগে জেগে ওঠা চরবাঁশবাড়িয়া বিলীন হয়ে সমুদ্রের বুকে মিশে গেছে।

চট্টগ্রামের সীতাকু- উপজেলার মুরাদপুর ইউনিয়নের সমুদ্র উপকূলে গিয়ে দেখা গেছে, বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে নৌকায় ড্রেজার বসিয়ে বালি উত্তোলন চলছে। সীতাকু--সন্দ্বীপ চ্যানেলের তীরবর্তী অংশ ভেঙে বসতবাড়ি ও কৃষিজমি সমুদ্রগর্ভে বিলীনের আশঙ্কা তৈরি হয়েছে বলে জানান স্থানীয় লোকজন।

মুরাদপুরের গুলিয়াখালী গ্রামবাসী বলেন, ‘গত কয়েকদিন ধরে এই এলাকায় দিনদুপুরে উপকূল এমনকি সমুদ্রের তলদেশ থেকেও বালি তুলে অন্যত্র নিয়ে যাচ্ছেন কিছু লোক। ফলে যেকোনো সময় ভেঙে পড়বে সমুদ্র তীরবর্তী অংশ। ফলে উপকূলীয় বনাঞ্চলের পাশাপাশি ক্ষতি হবে বসতবাড়ি ও কৃষিজমিরও।’

প্রকৃতির নিজস্ব সৌন্দর্যে সেজে সৌন্দর্যপিপাসুদের বিনোদন স্থানে পরিণত হয়েছে গুলিয়াখালীর উপকূলীয় অঞ্চলটি। আর সে স্থানটিকে ঘিরেও বালু উত্তোলিত হওয়ায় ঘুরতে এসে আতঙ্কিত বিভিন্ন উপজেলার পর্যটকরাও।

পর্যটকরা বলেন, ‘গুলিয়াখালীর মতই বিনোদনের স্থান ছিল চারবাঁশবাড়িয়া। কিন্তু স্বার্থান্বেষীরা সমুদ্র থেকে বালি তুলে ধ্বংস করেছেন সৌন্দর্যম-িত স্থানটি। এখন একই কায়দায় সমুদ্রগর্ভ থেকে বালি তুলে গুলিয়াখালীকেও বানানো হচ্ছে মৃত্যুকূপ। এখানকার উপকূলীয় বনভূমিও ধ্বংসের মুখে।

ফলে গুলিয়াখালী বিনোদন পার্কের বরাদ্দ বাতিল হয়ে যাবে বলে আশঙ্কা করছেন উপকূলীয় বন কর্মকর্তারাও। সীতাকু- উপকূলীয় বন কর্মকর্তা মো. কামাল উদ্দিন বলেন, ‘গুলিয়াখালীকে ঘিরে ইকোপার্ক তৈরি শুরু হবে চলতি বছরেই। কিন্তু যে হারে বালু উত্তোলিত হচ্ছে, তাতে পরিবেশ ধ্বংস হয়ে মারাত্মক ঝুঁকির মুখে পড়বে উপকূলীয় বন ও ইকোপার্ক।’

আইনের তোয়াক্কা না করে বালি উত্তোলন হলেও প্রভাবশালীদের ভয়ে প্রতিবাদেরও সাহস পাচ্ছেন না সাধারণ মানুষ ও জনপ্রতিনিধিরা।

মুরাদপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জাহেদ হোসেন নিজামী বাবু বলেন, ‘পরিবেশ ধ্বংস করে সমুদ্রগর্ভ থেকে কারা বালি তুলছেন, তা জানা নেই। তবে প্রভাবশালী ছাড়া আইন অমান্য করে এ সাহস কারও নেই। এরপরও প্রশাসনকে বিষয়টি অবহিত করা হবে।’

তবে দীর্ঘদিন ধরে সমুদ্র থেকে বালি উত্তোলনের প্রতিবাদ করে আসছেন বিচ সংরক্ষণ পরিচালনা কমিটির সদস্যরা।

গুলিয়াখালী বিচ সংরক্ষণ পরিচালনা কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক তোফাজ্জল হোসেন বলেন, ‘প্রাকৃতিক সৌন্দর্যকে ঘিরে সমুদ্র উপকূলে ভিড় জমেছে পর্যটকদের। তাদের সুবিধা ও সৌন্দর্য রক্ষায় গঠিত হয়েছে বিচ রক্ষা কমিটি। এ কমিটির মাধ্যমে পয়ঃনিষ্কাশনসহ হাতে নেওয়া হয়েছে নানা পরিকল্পনা। এর মধ্যে সমুদ্রগর্ভে যেভাবে খোঁড়াখুঁড়ি শুরু হয়েছে, তাতে অল্প সময়ের মধ্যে বিচের পাশাপাশি ধ্বংসের কবলে পড়বে ঘরবাড়ি, কৃষিজমি ও বনভূমি।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মিল্টন রায় জানান, বালি উত্তোলনের বিষয়ে এখনো কিছু জানা নেই। খুব দ্রুত খোঁজখবর নিয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

সংবাদটি শেয়ার করুন

বন্দর নগরী বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :