‘ঠিকাদারের পয়সায়’ ওয়াসাকর্মীদের প্রমোদ ভ্রমণ

রেজা করিম
 | প্রকাশিত : ২৪ জানুয়ারি ২০১৯, ১২:৫৩

চাঁদা ধরা হয়েছে ১০ হাজার টাকা। এই অর্থে বিমানে সপরিবারে কক্সবাজার আসা যাওয়া, পাঁচ তারকা মানের হোটেলে তিন দিন অবস্থান, খাওয়া-দাওয়া হয়েছে। কেউ কেউ আবার থেকেছেন পাঁচ দিন।

যে পরিমাণ খরচ হয়েছে, তা এই চাঁদার টাকায় কিছুই না, এটা নিশ্চিত। কারণ, এরা সবাই গেছেন বেসরকারি বিমান সংস্থা নভোএয়ারের ফ্লাইটে। একজনেরই ওয়ানওয়ে টিকিটের সর্বনিম্ন মূল্যই তিন হাজার ৯০০ টাকা। আর কেউ সঙ্গে নিয়েছেন স্ত্রীকে, কেউ নিয়েছেন সন্তান, নাতি-নাতনি।

তারা সবাই থেকেছেন কক্স টুডে ও নিস্বর্গ হোটেলে। এই দুটি হোটেলের কক্ষ ভাড়া প্রতি রাতে পড়েছে চার হাজার টাকা করে। আসা-যাওয়া আর থাকা-খাওয়াতেই খরচ পড়েছে ৫০ হাজারের বেশি।

বাড়তি এই ৪০ হাজার টাকা কে দিয়েছে, তা নিয়ে কোনো জবাব নেই। প্রশ্ন করলে চুপ থাকছেন কর্মকর্তারা। তবে এটা নিশ্চিত হওয়া গেছে যে বাড়তি এই টাকাটা ওয়াসার কোনো তহবিল থেকে আসেনি।

তথ্য মিলেছে, এক বা একাধিক ঠিকাদার এই বাড়তি অর্থের যোগান দিয়েছেন এবং তারা এর বিনিময়ে এরই মধ্যে কিছু আদায় করে নিয়েছেন অথবা আদায় করার প্রতিশ্রুতি পেয়েছেন।

গত ১৭ জানুয়ারি বৃহস্পতিবার ও শুক্রবার নভোএয়ারের পৃথক কয়েকটি ফ্লাইটে কক্সবাজার যান সংস্থার প্রায় ৫০ কর্মকর্তা-প্রকৌশলী। সঙ্গে ছিলেন স্বজনরাও। সব মিলে সদস্য সংখ্যা ছিল ১৪০ জনের মতো।

ঢাকা ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক তাকসিম এ খানও যোগ দেন এই আনন্দ ভ্রমণে। প্রকৌশলীদের জন্য থাকার ব্যবস্থা করা হয় কক্সবাজার মেরিন ড্রাইভের পাশের তারকা মানের হোটেল নিস্বর্গ ও পাঁচ তারকা মানের কক্স টুডে হোটেলে। নানা আয়োজনের মাঝে রাতের সৈকতে ক্যাম্প ফায়ারও করেছেন ভ্রমণকারীরা।

২০ জানুয়ারি রোববার সকালেই বেশির ভাগ প্রকৌশলী ঢাকায় ফেরেন। কয়েকজন থেকেও যান। পরে তারা ঢাকায় ফিরে আসেন। ঢাকা ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক তাকসিম এ খান, পরিচালক আবুল কাশেম ও এ কে এম শহিদ উদ্দিন, অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী আক্তারুজ্জামান আক্তার, তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মাহমুদ হোসেন, রফিকুল ইসলাম, মো. মহসীন, নির্বাহী প্রকৌশলী ওয়াজ উদ্দিন, এরশাদুল হক, ইকবাল আহমেদ, মোঃ. হুমায়ুন, জুনায়েদ আহমেদ, বদরুল আনাম, আনোয়ার সাত্তার সবুজ, রামেশ^র কুমার, মুস্তাফিজুর রহমানসহ আরও অনেকে এ ভ্রমণে অংশ নেন।

সঙ্গে ছিলেন ঢাকা ওয়াসার সিবিএ নেতা মো. জাবের ও আনিসুর রহমান। প্রশাসন শাখারও কয়েকজন কর্মকর্তা ছিলেন সেই ভ্রমণে। ভ্রমণে পরিবার-পরিজনকেও সঙ্গে নেন তারা।

ঢাকা টাইমসের অনুসন্ধান বলছে, ঢাকা ওয়াসার দুটি চলমান বড় প্রকল্প গন্ধর্বপুর শোধনাগার প্রকল্প ও পাইপলাইন পুনস্থাপন প্রকল্পের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানসহ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান এই আয়োজনে অর্থায়ন করে। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাদের পাশাপাশি প্রকল্পের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারাও আয়োজনে অংশ নেন। তারা সবাই কক্সবাজার ঘুরে আসার কথা স্বীকার করেছেন।

তবে আনন্দ আয়োজনের বিশাল অংকের অর্থের উৎস বিষয়ে মুখ খুলতে চাননি কেউই। নাম প্রকাশ না করার শর্তে কক্সবাজার ভ্রমণে যাওয়া ঢাকা ওয়াসার এক কর্মকর্তা বলেন, ‘১০ হাজার টাকা একটি প্রতীকী চাঁদা ধরা হয়েছিল। তবে পুরো আয়োজনে একজনের পেছনেই খরচ হয়েছে প্রায় ৫০ হাজার টাকা। কারণ বিমানভাড়া পড়েছে জনপ্রতি ১১ হাজার টাকা। তিন রাতের জন্য প্রতি কক্ষের ভাড়া দিতে হয়েছে ১২ হাজার টাকা। খাবার-দাবার ও ঘোরাফেরার জন্যও বেশ মোটা অংকের অর্থ খরচ হয়েছে।’

এই টাকা কে দিয়েছেন- এমন প্রশ্নে ওই কর্মকর্তা বলেন, ‘এই আয়োজনকে সফল করতে বিভিন্ন প্রকল্পের ঠিকাদার ও প্রকল্প-সংশ্লিষ্টরা সহযোগিতা করেছেন। আর্থিক সহযোগিতা দেওয়ার পাশাপাশি তারাই মূলত পুরো আয়োজনটা ব্যবস্থাপনা করেছেন।’

ঢাকা ওয়াসার গন্ধর্বপুর শোধনাগার প্রকল্পের পরিচালক মাহমুদুল ইসলাম ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘আয়োজনটা ছিল ঢাকা ওয়াসার। তাদের আমন্ত্রণে আমরাও কক্সবাজার ভ্রমণ করে এসেছি। আয়োজনকে সফল করতে আমরা সবাই যে যার জায়গা থেকে সাধ্যমতো সহযোগিতা করেছি।’

কক্সবাজার ঘুরে আসার কথা স্বীকার করেছেন ঢাকা ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক তাকসিম এ খানও। তবে কারও টাকায় নয়, ব্যক্তিগতভাবে চাঁদা দিয়েই এ আয়োজন করা হয়েছিল বলে তার দাবি। এটাকে বনভোজন বা অন্য কিছু বলতেও নারাজ তিনি।

‘ঠিকাদারদের টাকায় এ আয়োজন করা হয়েছে’- এমন অভিযোগ প্রসঙ্গে তাকসিম বলেন, ‘আমি জানি না। এ রকম কিছু আমার জানা নেই।’

বিষয়টি জানতে পেরে ওয়াসা বোর্ডের সাবেক চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম ওয়াসা কর্মকর্তাদের সমালোচনা করেছেন। তিনি ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘ওয়াসার মতো দায়িত্বশীল একটি সংস্থাকে ন্যূনতম স্বচ্ছতা ও সততা নিয়ে চলতে হবে। সেখানে এ ধরনের ঘটনা কোনোমতেই কাক্সিক্ষত নয়। নানা প্রলোভন থাকবে। কিন্তু সেসবের কাছে আত্মসমর্পণ না করে এড়িয়ে যেতে হবে। ওয়াসার বিরুদ্ধে অভিযোগ যদি সত্য হলে ভবিষ্যতে অন্য প্রতিষ্ঠানও এ রকমটা করতে উৎসাহ পাবে।’

কর্মকর্তা-কর্মচারীদের প্রণোদনার জন্য ওয়াসার তহবিল আছে জানিয়ে এই নগর পরিকল্পনাবিদ বলেন, ‘কর্মচারীদের উৎসাহ জোগাতে বিশেষ তহবিলের টাকা খরচ করা যেতে পারে। তবে ভ্রমণ বা কোনো আনন্দ উদযাপনের জন্য ঠিকাদার বা অন্য কারও কাছে অর্থ নেওয়াটা একেবারেই অনুচিত। এটা আমি চিন্তাও করতে পারি না।’

সংবাদটি শেয়ার করুন

জাতীয় বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

জাতীয় এর সর্বশেষ

ঢাকায় গ্রিসের দূতাবাস স্থাপন ও জনশক্তি রপ্তানি বৃদ্ধির সম্ভাবনা

অনলাইন নিউজপোর্টালের বিজ্ঞাপন নীতিমালা বাস্তবায়ন হবে: তথ্য প্রতিমন্ত্রী

ঐতিহাসিক মুজিবনগর দিবস বুধবার

বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে কারিকুলাম যুগোপযোগী করার তাগিদ রাষ্ট্রপতির

দাবদাহের মধ্যে বৈশাখের প্রথম ঝড়ে সিক্ত রাজধানী

বাংলাদেশের সমৃদ্ধির সহায়তায় দৃঢ়ভাবে অঙ্গীকারবদ্ধ যুক্তরাষ্ট্র: পিটার হাস

ভোজ্যতেলে পূর্বের দামে ফিরে যাওয়ার সুযোগ নেই: বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী

সমৃদ্ধিতে ভারত ও পাকিস্তানের চেয়ে এগিয়ে বাংলাদেশ

সারাদেশে তাপপ্রবাহ, গরমের দাপট কমবে কবে? কী বলছে আবহাওয়া দপ্তর?

রহস্যে ঘেরা মুক্তিপণকাণ্ড!

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :