ভালবাসার যে কান্না ছুঁয়ে গেল সবাইকে

প্রকাশ | ২৪ জানুয়ারি ২০১৯, ২০:০৯

দিনাজপুর প্রতিনিধি, ঢাকাটাইমস

তিনবারের সংসদ সদস্য হলেও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মন্ত্রিসভায় জায়গা পেয়েছেন প্রথমবার। দেশব্যাপী সুনাম-সুখ্যাতির পেছনে নিজের নির্বাচনী এলাকার লোহা বর্ণের এ মানুষগুলোর ভালবাসা লুকায়িত- তা ভুলেননি। এলাকার আপন সব মুখগুলোকে সামনে পেয়ে অশ্রু সংবরণ করতে পারেননি। স্মৃতিকাতর আর আবেগাপ্লুত এক পরিবেশে ক্ষণিকের জন্য হারিয়ে যায় মহা-উৎসবের আয়োজন।

নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী তার নির্বাচনী এলাকায় গণসংবর্ধনা অনুষ্ঠানে বক্তব্য  দেয়ার সময় এমন মুহূর্তের অবতারণা হয় বৃহস্পতিবার। প্রয়াত পিতা, সাবেক প্রতিমন্ত্রী ও জনগণের ভালবাসার কথা মনে করতে গিয়ে আবেগাপ্লুত হয়ে নিজে কাঁদলেন এবং সে কান্না ছুঁয়ে গেল উপস্থিত সবাইকে। মুহূর্তেই ছলছল হয়ে উঠে হাজারো চোখ।
আগের দিন জেলা আওয়ামী লীগের স্মরণীয় সংবর্ধনার পর বৃহস্পতিবার দিনাজপুরের সেতাবগঞ্জ বড় মাঠে বোচাগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগ আয়োজিত গণসংবর্ধনা অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী।
বাবার কথা মনে আসতেই থেমে যান খালিদ মাহমুদ চৌধুরী। বাকরুদ্ধ হয়ে চোখ মুছতে থাকেন।  আজকের এই দিনে বারবার মনে পড়ছে আমার পিতা প্রয়াত মন্ত্রী বলেই আবারো আবেগাপ্লুত হয়ে কেঁদে ফেলেন তিনি। প্রায় দুই মিনিট পর নিজেকে স্বাভাবিক করে আবারো কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, ‘আমার পিতা বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে ধারণ করে আপনাদের ভালোবেসে বারবার নির্যাতিত হয়েছেন, নিপীড়িত হয়েছেন। তার পরেও কখনো সততা ও আদর্শের প্রশ্নে আপস করেননি। বঙ্গবন্ধুর আদর্শ বাস্তবায়নের জন্য তার শরীরের রক্ত পর্যন্ত ঝড়িয়েছেন। কোনোদিন বঙ্গবন্ধুর প্রশ্নে ও শেখ হাসিনার প্রশ্নে আপস করেননি আমার পিতা।

অশ্রু সংবরণ করে খালিদ বলেন, ‘আপনারা আমার পিতা প্রয়াত মন্ত্রী আব্দুর রৌফ চৌধুরী ও আমাকে যে সম্মান দিয়েছেন, ভালোবাসা দিয়েছেন, সেই ঋণ আমি কিভাবে পরিশোধ করব- তা জানি না। তবে এতটুকু বলতে পারব, আমি অন্যায়ের সঙ্গে কোনো দিন আপস করিনি। কারো প্রতি অন্যায় করিনি। কারো মঙ্গল ছাড়া অমঙ্গলের কথা চিন্তা করিনি। মুক্তিযোদ্ধকে সব সময় লালন করেছি, বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে ধারণ করেছি। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আস্থা স্থাপন থেকে বিচ্যুত হইনি।’

নৌ-প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘আমি যেখানে আজ দাঁড়িয়েছি, সেখান থেকেই আমার স্কুল জীবন শুরু। আমার উপর দেশ পরিচালনার যে দায়িত্ব জননেত্রী শেখ হাসিনা অর্পণ করেছেন তা যেন সঠিকভাবে পালন করতে পারি। আমি আপনাদের সন্তান, আপনাদের ভাই, আপনাদের বন্ধু, আমি আপনাদের সঙ্গে  সেভাবেই থাকতে চাই। আপনারা বোচাগঞ্জ বিরলের মানুষ আমাকে যে সহায়তা ও সমর্থন দিয়েছেন আমি যেন কখনো তার অমর্যাদা না করি।’

প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের মানুষের মুখে হাসি ফোটানোর দায়িত্ব নিয়েছেন। তার প্রতি দেশের মানুষ বিশ্বাস ও আস্থা রেখেছেন।’

তিনি বলেন, ‘সোনার বাংলা বিনির্মাণের স্বপ্নে নিজেদের জীবন দিয়ে মুক্তিযোদ্ধারা এদেশ স্বাধীন করেছেন। কিন্তু তারা এই সোনার বাংলা দেখে  যেতে পারেনি। জাতি হিসেবে আমরা তাদের কাছে অনেক ঋণী। সোনার বাংলা বিনির্মাণের মাধ্যমে তাদের সেই ঋণ পরিশোধ করতে হবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার একটাই স্বপ্ন– এ  দেশের মানুষ মাথা উঁচু করে দাঁড়াবে। এ দেশ একটি স্বনির্ভর সোনার বাংলা হিসেবে গড়ে উঠবে। আমরা কথা দিতে চাই, তার এই স্বপ্নের বাস্তবায়নে তার পাশে আছি এবং থাকব। তার প্রতি আমরা সমর্থন দিয়েই যাব।’

তিনি বলেন, ‘আপনারা আমার জন্য দোয়া ও আশীর্বাদ করবেন বঙ্গবন্ধু ও শেখ হাসিনার আদর্শের পথচলা যেন বিচ্যুত না হয়। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এই দেশকে ভালোবেসে দেশের মানুষকে মুক্ত করার জন্য ২৩ বছর লড়াই সংগ্রাম করেছেন। ১৪ বছর তিনি কারাবরণ করেছেন। বঙ্গবন্ধুর প্রতি বাংলার মানুষ বিশ্বাস রেখেছিল বলেই মহান মুক্তিযুদ্ধে ৩০ লক্ষ মানুষ জীবন দিয়েছেন। বঙ্গবন্ধু তাদের স্বপ্ন বাস্তবায়ন করার জন্য দেশ পরিচালনার দায়িত্ব নিয়েছিলেন। মাত্র সাড়ে তিন বছরের মাথায় তাকেসহ দেশে থাকা পরিবারের সকল সদস্যকে হত্যা করা হয়েছে শুধু এইদেশকে সোনার বাংলা গড়ার পথ করে দিয়েছিলেন এই অপরাধে। জাতি হিসাবে, নাগরিক হিসেবে এই ঋণ আমাদেরকে শোধ করতে হবে ৩০ লক্ষ শহীদের সোনার বাংলা বিনির্মাণ করে।’

বোচাগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবু সৈয়দ হোসেনের সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আজিজুল ইমাম চৌধুরী, সহ-সভাপতি আবুল কালাম আজাদ, যুগ্ম-সম্পাদক ফারুকুজ্জামান চৌধুরী মাইকেল,  তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক বিধু ভূষণ, বোচাগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আফছার আলী, সেতাবগঞ্জ পৌর মেয়র আব্দুস সবুর, বিরল উপজেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আব্দুল লতিফ, সাধারণ সম্পাদক এ কে এম মোস্তাফিজুর রহমান বাবু।

উপস্থিত ছিলেন জেলা ও বিভিন্ন উপজেলার সর্বস্তরের আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী, ইউপি চেয়ারম্যানগণ, বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দসহ সর্বস্তরের মানুষ। এ সময় তারা নতুন প্রতিমন্ত্রীকে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানান।
এরপর নির্বাচনী এলাকার অপর উপজেলা বিরলে অনুরূপ গণসংবর্ধনা অনুষ্ঠানে যোগ দেন খালিদ মাহমুদ চৌধুরী। বক্তব্যে বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী আমাকে, দিনাজপুরবাসী তথা বিরল-বোচাগঞ্জের মানুষকে যে সম্মান দিয়েছেন তা ধরে রাখাতে সবার সহযোগিতা করতে হবে। কেউ আদর্শচ্যুত হলে, সুশাসনের অন্তরায় হলে তার দায় আমরা নেব না। বিরলের গণসংবর্ধনা অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন উপজেলা অওয়ামী লীগের সভাপতি এম এ লতিফ, সম্মাননাপত্র পাঠ করেন সাধারণ সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান বাবু।’

উপস্থিত ছিলেন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রমা কান্ত রায়, সাংগঠনিক সম্পাদক রবিউল ইসলাম, সাবেক মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার আবুল কাশেম অরু, পৌর মেয়র সবুজার সিদ্দিক সাগর প্রমুখ।

(ঢাকাটাইমস/২৪জানুয়ারি/টিএ/এলএ)