উদ্বোধনের দুই বছরেও চালু হয়নি চিলমারী নদীবন্দর

মমিনুল ইসলাম বাবু, কুড়িগ্রাম
 | প্রকাশিত : ২৫ জানুয়ারি ২০১৯, ১০:১৩

কুড়িগ্রামের চিলমারী নদীবন্দর আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন হয়েছে দুই বছরের বেশি সময় আগে। বিআইডব্লিউটিএ এবং জেলা পরিষদের টানাপড়েনে আজও চালু হয়নি বন্দরটির কার্যক্রম। স্থানীয় ও জাতীয় অর্থনীতির জন্য সম্ভাবনাময় নদীবন্দটির সচল না হওয়ায় এখানকার জনমনে সৃষ্টি হয়েছে তীব্র ক্ষোভ। তবে কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, সব সমস্যা কাটিয়ে শিগগির বন্দরটি সচল হবে।

জানা যায়, ১৯৭২ সালে ভারত ও বাংলাদেশ সরকারের মধ্যে নৌপথে মালামাল পরিবহনের জন্য একটি নৌ-প্রটোকল চুক্তি সই হয়। ব্রিটিশ আমলে কলকাতা থেকে গৌহাটি এবং আসামের ধুবড়ি পর্যন্ত নৌ-যাতায়াত চালু ছিল। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে অব্যবস্থাপনা ও নৌপথের উন্নয়ন না হওয়ায় বন্দরটি অচল পড়ে। বর্তমান সরকার পুনরায় চিলমারী বন্দরটি সচল করার উদ্যোগ নেয়। সে অনুযায়ী ২০১৬ সালের ৭ সেপ্টেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চিলমারী সফরে এসে চিলমারীকে নৌবন্দর হিসেবে ঘোষণা দেন। কয়েক দিন পর ২৩ সেপ্টেম্বর চিলমারীর রমনাঘাট নামক স্থানে পল্টুন স্থাপন করে নদীবন্দর উদ্বোধন করেন তৎকালীন নৌপরিবহন মন্ত্রী শাজাহান খান। এছাড়া বন্দরের উন্নয়নে প্রকল্প নেয়া হয়।

তবে বাঁধ সাজে জেলা পরিষদ। বন্দরের শ্যালোঘাটসহ নদ-নদীর ঘাট পরিচালনা করে আসছে জেলা পরিষদ। বিআইডব্লিউটিএকে অবগত না করেই বন্দরের ইজারা দেয়া হয়। এ নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে সৃষ্টি হয় অন্তর্দ্বন্দ্বের। বিষয়টি নিয়ে আদালতে মামলা হলে জটিলতা আরও বাড়ে। সমস্যা সমাধানে সাবেক মন্ত্রী শাজাহান খান গত বছরের জুন মাসে চিলমারী সফরে আসেন। নদীবন্দর পরিদর্শনকালে সব সমস্যা ও দ্বন্দ্ব সমাধানের আশ্বাস দেন। কিন্তু আশ্বাসের ছয় মাস অতিবাহিত হলেও চিলমারী নৌবন্দরের কার্যক্রম চালু না হওয়ায় হতাশ এখানকার মানুষ।

নৌ-মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, চিলমারী এক সময় ঐতিহ্যবাহী ব্যবসাকেন্দ্র ছিল। এ স্থানটি অনেক আগে থেকেই ‘চিলমারী বন্দর’ হিসেবে পরিচিতি লাভ করে। এ বন্দর দিয়ে হাজার হাজার মণ পাট, ধান, চাল প্রভৃতি পণ্য নিয়ে বড় বড় জাহাজ চলাচল করত। ব্রিটিশ আমলে কলকাতা হতে গৌহাটি এবং আসামের ধুবড়ি পর্যন্ত নৌ-যাতায়াত ছিল। বন্দরটিকে ঘিরে চিলমারীতে গড়ে উঠেছিল পাট, সরিষা, ধান, গম, বাদাম, তিসির ও ভুট্টার গুদাম ঘর। দেশের নামিদামি পাট কোম্পানিগুলো চিলমারীতে এসে অফিস খুলে পাট কিনত। এছাড়া বিভিন্ন এলাকা থেকে ব্যবসায়ীরা এসে বিভিন্ন ধরনের মালামাল কিনতে দিনের পর দিন অবস্থান করতো। তাছাড়া বিআইডব্লিউটিএ সেখানে পাইলট বিট ও এসএসবি স্টেশন স্থাপন করে। তবে কালের বিবর্তনে নদী ভাঙন ও নাব্য সংকটের কারণে চিলমারী বন্দরটি বন্ধ হয়ে যায়। ফলে বন্দরকেন্দ্রিক অভ্যন্তরীণ ব্যবসা বাণিজ্যিক কার্যক্রমে বন্ধ হয়ে পড়ে।

চিলমারী নদীবন্দরটি পায়রাসমুদ্র বন্দর থেকে নৌপথে ভারত, ভুটান ও নেপালের মধ্যে আঞ্চলিক যোগাযোগের একমাত্র নৌরুট। ফলে চিলমারী নদীবন্দরের উন্নয়ন হলে অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক ব্যবসা বাণিজ্যের মাধ্যমে কুড়িগ্রাম অঞ্চলের উন্নয়নের পাশাপাশি জাতীয় অর্থনীতি সমৃদ্ধ হবে। এলাকাবাসী সব সংকট কাটিয়ে দ্রুত বন্দরটি চালুর দাবি জানিয়েছে।

এ ব্যাপারে বিআইডব্লিউটিএর পরিচালক সাইফুল ইসলামের সঙ্গে মোবাইলে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, ইতিমধ্যে বন্দরের উন্নয়নে প্রায় সাড়ে তিনশ কোটি টাকার প্রকল্প নেয়া হয়েছে। দ্রুত নদী ড্রেজিংয়ের কাজ শুরু হবে, পাশাপাশি নদীবন্দরের কার্যক্রমও শুরু হবে।

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :