কাঁদছে জলঢাকা

এস এ প্রিন্স নীলফামারী
 | প্রকাশিত : ২৫ জানুয়ারি ২০১৯, ২১:৪০

ঘুম ভেঙে প্রথম ফোনেই স্বজনের মৃত্যুর খবর। শুরু হয় কান্না। তা আর থামছিল না। গোটা গ্রাম কাঁদতে থাকায় তখন শান্তনা দেওয়ারও কেউ ছিল না।

কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম উপজেলার গোলপাশা ইউনিয়নের নারায়নপুরে ইটভাটায় কাজ করতে গিয়েছিলেন মানুষগুলো। রাতে ঘরে ঘুমিয়েছিলেন ১৩ জন মানুষ। সেই ঘুম আর ভাঙেনি। ট্রাক থেকে কয়লা নামানোর সময় উল্টে গিয়ে পড়ে ঘরের ওপর। আর দেয়াল ভেঙে তা চাপা দেয় শ্রমিকদের। থেমে যায় তাদের জীবনের চাকা।

যারা মারা গেছেন তাদের বাড়ি নীলফামারীর জলঢাকা উপজেলার মীরগঞ্জ ইউনিয়নের পাঠানপাড়া ও শিমুলবাড়ি ইউনিয়নের ঘুঘুমারী গ্রামের বাসিন্দা। এমন মৃত্যুর খবর আসার পর শোক আর কান্নায় ভারী হয়ে উঠেছিল পরিবেশ।

মীরগঞ্জ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান হুকুম আলী জানান, তার ইউনিয়নের পাঠানপাড়া গ্রামের নয় জন নিহত হয়েছেন। শিমুলবাড়ি ইউনিয়নে ইউপি চেয়ারম্যান হামিদুল ইসলাম জানান, তার ইউনিয়নের ঘুঘুমারী গ্রামের নিহত হয়েছেন চার জন। মীরগঞ্জ ইউনিয়নের নিজপাড়া কুড়ারপার গ্রামের নিহত শংকরের মা জনতা বালা ও নিহত প্রশান্ত রায় দিপুর মা গীতা রানী সন্তান হারিয়ে কাঁদছেন আর বিলাপ করছিলেন।

সেখানেই কথা বলছিলেন কুমিল্লা থেকে আসা নিহতদের সহকর্মী অনুকুল চন্দ্র রায়। জানান, এই শ্রমিকদের কিছু দিনের মধ্যে বাড়ি আসার কথা ছিল। দুইমাস আগে রোজগারের আশায় বাড়ি ছেড়েছিলেন অমিত চন্দ্র রায়। তার বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, তার মা সাবিত্রী উদাস দৃষ্টিতে তাকিয়ে বসে আছেন। কাঁদতে কাঁদতে বাবা কামিক্ষ্যা চন্দ্রের চোখের পানি শুকিয়ে গেছে।

একই গ্রামের নিহত রঞ্জিতের বাড়িতে গিয়ে দেখা গেল তার স্ত্রী সচি রানী ১০ বছরের প্রতিবন্ধী কন্যা সন্তান সাথী রানীকে নিয়ে বিলাপ করছেন। বলছেন, তার সন্তানের কী হবে?

সারাদিনে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, প্রশাসন ও পুলিশের কর্মকর্তারা নিহতদের বাড়িতে গিয়ে স্বজনদের শান্তনা দিয়েছেন। দিয়েছেন পাশে থাকার আশ্বাস। মীরগঞ্জ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান হুমায়ুন কবির খান হুকুম আলী বলেন, ‘ঘটনাটি জেনে সঙ্গে সঙ্গেই সমবেদনা জানাতে নিহতের বাড়িতে যাই। আমি প্রতিটি পরিবারের জন্য উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ দাবি করছি।’

জলঢাকা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুজাউদৌলা বলেন, ‘কুমিল্লা জেলা প্রশাসক ও চৌদ্দগ্রাম ইউএনওর সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। ময়নাতদন্ত শেষে লাশ জলঢাকা আসলে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সহায়তা প্রদান করা হবে।’

এই ঘটনায় শোক প্রকাশ করেছেন স্থানীয় সংসদ সদস্য রানা মোহাম্মদ সোহেলও। তিনি বলেন, ‘নিহতদের পরিবারের জন্য আমার ও সরকারের পক্ষ থেকে সহায়তা প্রদানের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।’

জলঢাকা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোস্তাফিজুর রহমান জানান, নিহতদের লাশ রবিবার সকাল নাগাদ নীলফামারী আসতে পারে। কুমিল্লায় নিহতদের ময়নাতদন্ত শেষে কফিনে করে লাশ পাঠানোর ব্যবস্থা করা হয়েছে।

ঢাকাটাইমস/২৫জানুয়ারি/ ডব্লিউবি

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :