বেশি ক্ষতিপূরণের আশায়...
প্রকাশ | ২৬ জানুয়ারি ২০১৯, ০৯:০২
ঢাকা-শরীয়তপুর সড়কের নাওডোবা এলাকার দুপাশে কৃষিজমি। হঠাৎ করে সেই জমিতে নির্মিত হচ্ছে ঘর-বাড়িসহ বিভিন্ন স্থাপনা। মুরগির খামার, মৎস্য খামার, করাতকল স্থাপন ছাড়াও লাগানো হচ্ছে গাছও।
প্রতিদিনই এই এলাকায় নির্মিত হচ্ছে অন্তত ২০-২৫টি নতুন স্থাপনা। অল্প কয়েক দিনে এভাবেই পাল্টে যাচ্ছে কৃষিজমির চিত্র।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নির্মাণাধীন পদ্মা সেতু এলাকার ওই জমিতে শেখ হাসিনা তাঁতপল্লি নির্মিত হবে। এ জন্য পদ্মা সেতুর টোলপ্লাজা থেকে এক কিলোমিটার দক্ষিণে শরীয়তপুরের জাজিরা উপজেলার নাওডোবা ও মাদারীপুরের শিবচর উপজেলার কুতুবপুরে ১২০ একর জমি অধিগ্রহণের প্রক্রিয়া চলছে। প্রশাসনিক অনুমোদনের পর জেলা প্রশাসন থেকে সংশ্লিষ্ট উপজেলা ভূমি অফিসে রেকর্ডভুক্ত ভূমির মালিকদের দাগভিত্তিক তথ্য চাওয়া হয়েছে।
এমন খবরেই বেশি ক্ষতিপূরণের আশায় নতুন নতুন স্থাপনা নির্মাণ করছে জমির মালিক ও দালালদের বেশ কয়েকটি চক্র। তাদের মাঝে রীতিমতো প্রতিযোগিতাও চলছে। হাতে সময় খুব কম, তাই রাত-দিন কাজ করছেন শ্রমিকেরা।
সরেজমিনে গেলে নাওডোবার ফজল বলেন, ‘৩০ শতাংশ কৃষিজমিতে ৫০০ আমের চারা লাগিয়েছি। শুনতেছি, এই জায়গা সরকার নিয়া যাইব। বাপ-দাদার ভিটা চলে যাবে! যদি একটিু বেশি টাকা পাওয়া যায়, তাহলে অন্যত্র জমি কিনতে পারব। এই আশায় আমাদের আত্মীয়স্বজনও গাছ লাগাচ্ছেন, ঘর তৈরি করছেন।’
কুতুবপুরের রাসেল মাদবর তার জমিতে ১০টি ঘর নির্মাণের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। শ্রমিকেরা নির্মাণসামগ্রী এনে জমিতে রাখছেন। কৃষিজমিতে কেন ঘর করছেন এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘আমার জমিতে ঘর করছি, তার জবাব আপনাদের কেন দেব? সামান্য ক্ষতিপূরণ দিয়ে সরকার জমি নিয়ে যাবে, আমরা কোথায় যাব?’
ঢাকা-শরীয়তপুর সড়ক ঘেঁষে করাতকল নির্মাণ করছেন শ্রমিকেরা। ওই জমির মালিক কুতুবপুর ইউপির ৮ নম্বর ওয়ার্ড সদস্য কাদির মাদবর আরও দুজনের সঙ্গে অংশিদারিত্বের ভিত্তিতে করাতকলটি তৈরি করছেন।
নাওডোবার হিরণ মাদবর নিজের কৃষিজমিতে দুটি ঘর নির্মাণ করেছেন। কাঠমিস্ত্রিরা আরও একটি ঘর তৈরি করছেন, যেটিতে মুরগির খামার দেখানো হবে।
তিনি বলেন, ‘এলাকার মানুষকে দেখে আমিও ঘর করছি। মুরগির খামারের ঘর করে রাখলাম। সরকার যদি জমি অধিগ্রহণ করে, তাহলে ক্ষতিপূরণ পাব, না হলে মুরগির খামারের ব্যবসা করব।’
হিরণ মাদবরের ঘর নির্মাণকারী গোপালগঞ্জের কাঠমিস্ত্রি সুজিৎ বাড়ৈ বলেন, এই এলাকায় এখন দুই শতাধিক শ্রমিক কাজ করছেন। প্রত্যেকের দৈনিক মজুরি ৬০০ টাকা। দিন-রাত কাজ করা হচ্ছে।
নাওডোবার একটি চক্রও জমি ভাড়া নিয়ে বিভিন্ন স্থাপনা নির্মাণ করছে, গাছ লাগাচ্ছে। তেমনি একজন নাওডোবা সামিক আলী মাদবরকান্দি গ্রামের লুৎফর রহমান। তিনি ১৬ শতাংশ জমি ভাড়া নিয়ে তিনটি ঘর করেছেন।
তিনি বলেন, কিছু মানুষ জমি ভাড়া নিয়ে স্থাপনা গড়ছেন। এখানে প্রতি বিঘা জমি বার্ষিক ৫০-৬০ হাজার টাকা ভাড়ায় পাওয়া যায়। অনেকে মালিকের সঙ্গে ৫০ শতাংশ দেওয়ার চুক্তিতেও জমি ভাড়া নিচ্ছেন।
শরীয়তপুরের জেলা প্রশাসক কাজী আবু তাহের ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর নামে শেখ হাসিনা তাঁতপল্লি নির্মিত হবে। পাট ও বস্ত্র মন্ত্রণালয় ১২০ একর জমি অধিগ্রহণের প্রশাসনিক অনুমোদন দিয়েছে। ওই জমির বিষয়ে খোঁজ-খবর নেওয়া হচ্ছে। সুযোগসন্ধানীরা সেখানে কেন স্থাপনা নির্মাণ করছেন, তা আমার জানা নেই। যৌথ তদন্তের পরে যদি কেউ সেখানে স্থাপনা নির্মাণ করে, তাহলে তাকে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে না।’