দূষণ-দখলে বিপন্নপ্রায় প্রমত্তা বানার

প্রকাশ | ২৬ জানুয়ারি ২০১৯, ০৯:১৪

তারিকুল ইসলাম, ময়মনসিংহ

অসচেতনতা-অবহেলায় পলি পড়ে ভরাট আর অবৈধ দখলে মরতে বসেছে ময়মনসিংহের বানার নদী। একসময়ের ¯্রােতঃস্বিনী প্রমত্তা নদীটি এখন মরা খালে পরিণত হয়ে বিপন্ন হওয়ার পথে। শুকনো মৌসুমে পানি না থাকায় নদীর পারঘেঁষা জনপদের চাষিরা সেচের সংকটে ফসল আবাদ নিয়ে বিপাকে পড়েন।

একসময়কার প্রমত্তা এই নদীতে এখন আর সারা বছর পানির প্রবাহ থাকে না উল্লেখ করে এর পুনর্খননের দাবি জানিছেন তীরবর্তী কৃষিজীবী মানুষ।

দেশের উত্তরকেন্দ্রীয় অঞ্চল জামালপুর ও ময়মনসিংহ জেলার নদী বানার (পাউবোর পরিচিতি নম্বর-৪৪)। ৯৬ কিলোমিটার দীর্ঘ এবং ৪৩ মিটার গড় প্রস্থের নদীটির প্রকৃতি সর্পিলাকার। জামালপুর সদর উপজেলার শরিফপুর ইউনিয়নের কাছে প্রবহমান পুরাতন ব্রহ্মপুত্র নদ থেকে উৎপত্তি হয়ে এই নদী জামালপুর, ময়মনসিংহ জেলার মুক্তাগাছা ও ফুলবাড়িয়া হয়ে ত্রিশাল উপজেলার আমিরবাড়ী ইউনিয়নের কাছে খিরো নদীতে পতিত হয়েছে। ফুলবাড়িয়া উপজেলায় কলমদারী নাম ধারণ করা নদীটি কোথাও কোথাও বানার আপার নামেও পরিচিত।

সরেজমিনে দেখা গেছে, একসময় উত্তাল ঢেউখেলা যে নদীর বুক চিড়ে তরতর করে বয়ে চলত নানা বর্ণের নৌকা-বজরা, সেই নদীর বুকে এখন ফসলের মাঠ। বর্ষাকালে পানির মৃদু প্রবাহ থাকলেও এখন শুকনো মৌসুমে বহু স্থানে নদীর বুক দখল করে ফসল ফলানো হচ্ছে। মুক্তাগাছার ইছাখালী, দুল্লা, চানপুর, বানারপাড়, রাজাবাড়ী, কাটবওলা এলাকায় বেদখল হয়ে গেছে মাঝনদী পর্যন্ত। সেখানকার বিস্তীর্ণ নদীপথ এখন ফসলের মাঠ। আবার কোথাও কোথাও এমনিতেই শুকিয়ে পরিণত হয়েছে শুকনো খেতে।

স্থানীয় লোকজন জানান, ব্রহ্মপুত্রের পানির প্রবাহ কমে আসায় সন্তান নদী বানারেরও শুকনোদশা। পলি জমে নদীর তলদেশ ক্রমেই ভরাট হয়ে গভীরতা হ্রাস পাচ্ছে। প্রভাবশালী ব্যক্তিরা দুই পাশ ভরাট করায় সংকুচিত হচ্ছে এর প্রশস্ততাও। জামালপুর অংশে কিছুটা প্রশস্ত হলেও ময়মনসিংহ, বিশেষ করে মুক্তাগাছা-ফুলবাড়িয়া অংশে নদীটির অবস্থা খুবই করুণ। অনেক এলাকায় নদী দখল করে নানা স্থাপনাও গড়ে তোলা হয়েছে। 

দাওগাঁও ইউপি চেয়ারম্যান মজনু সরকার বলেন, একসময় এই অঞ্চলের প্রধান নদী বানার ছিল খুবই ¯্রােতঃস্বিনী। কিন্তু দখল-ভরাটে এখন তা মরা খাল হয়ে গেছে।

রাজাবাড়ী এলাকার কৃষক সুলতান বলেন, বানার নদীর অনেক ¯্রােত ছিল। ব্রহ্মপুত্র নদ মরতে থাকায় বানারের অবস্থাও খারাপ হয়ে গেছে। অনেক জায়গায় প্রভাবশালী ব্যক্তিরা দখল করে ফেলেছেন। আগে অনেক মাছ পাওয়া যেত, এই নদীর হিরণপুটি আর জাইতবাইন মাছের খুব সুনাম ছিল। কিন্তু এখন আর কিছুই পাওয়া যায় না।

ফুলবাড়িয়ার পুটিজানা এলাকার সাইদুল বলেন, বানার নদী তো এখন প্রায় মরেই গেছে। এইভাবে চলতে থাকলে কিছুদিন পরে হয়তো এর অস্তিত্বই দেখা যাবে না। নদীর পানি দিয়ে সবাই ফসল করতেন। কিন্তু এখন নদীতেই পানি নেই, সেচ দিবে কী করে?’

ময়মনসিংহের পরিবেশবাদী আন্দোলনের নেতা অ্যাডভোকেট এমদাদুল হক মিল্লাত বলেন, দেশ ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে ভালো রাখার স্বার্থেই এই নদীগুলো রক্ষায় দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া উচিত।

মুক্তাগাছা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুবর্ণা সরকার ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘দেশের স্বার্থেই নদী রক্ষা করা উচিত। সরকার সারা দেশে নদীগুলোর নাব্যতা রক্ষায় যথাযথ পদক্ষেপ নিচ্ছে। আমরাও খোঁজ নিচ্ছি, কোথায় কোথায় নদীগুলো এ অবস্থায় আছে। বানার নদীর নামে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয় থেকে খননের প্রকল্প দেওয়া হয়েছে। এই নদী দখলমুক্ত করতেও আমরা খুবই আন্তরিক।’