জয়পুরহাটে কোথাও গুনগুন কোথাও শোডাউন

জয়পুরহাট প্রতিনিধি
 | প্রকাশিত : ২৬ জানুয়ারি ২০১৯, ১৮:১৫

নির্বাচনী রেশ কাটছে না জয়পুরহাটে। সংসদ নির্বাচন শেষে এখন চলছে উপজেলা নির্বাচনের গুনগুনানি। তফসিল ঘোষণা না হলেও মাঠে নেমে পড়েছেন সম্ভাব্য উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থীরা। জেলার পাঁচ উপজেলায় সম্ভাব্য প্রার্থীদের নানা কৌশলে দৃশ্যমান প্রচার-প্রচারণা চলছে সকাল-সন্ধ্যা। এর মধ্যে মাঠ বেশি সরগরম হয়ে উঠেছে ক্ষেতলাল উপজেলায়।

দলের মনোনয়ন পেতে প্রচারণার বড় মঞ্চ হয়ে দাঁড়িয়েছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক। প্রার্থী ও তার কর্মী-সমর্থকদের নানা চিত্র এখন শোভা পাচ্ছে ফেসবুক পেজে। একই সঙ্গে চলছে মাঠের গণসংযোগ, মোটরসাইকেল শোডাউন।

আগামী মার্চ মাসে উপজেলা নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার সংবাদ বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশের পর জেলার পাঁচটি উপজেলায় বিশেষ করে আওয়ামী লীগ ঘরানার সম্ভাব্য প্রার্থীরা মাঠে নেমেছেন। পোস্টার-বিলবোর্ড দিয়ে শুভেচ্ছা বিনিময়, হ্যান্ডবিল নিয়ে বাজারে বাজারে চলছে গণসংযোগ।

জয়পুরহাট সদর

সম্ভাব্য চেয়ারম্যান প্রার্থী হিসেবে গণসংযোগ করছেন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও জেলা পরিষদের সাবেক প্রশাসক এস এম সোলায়মান আলী, জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি প্রভাষক মাসুদ রেজা এবং জয়পুরহাট সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি গোলাম মোস্তফা। তাদের মধ্যে গণসংযোগে এগিয়ে আছেন মাসুদ রেজা। অনেক আগে থেকেই তিনি গ্রামে গ্রামে গণসংযোগ করছেন।

পাঁচবিবি

জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মনিরুল শহীদ মুন্না বেশ আগে থেকে মাঠের গণসংযোগে রয়েছেন। তিনি তার প্রয়াত বাবা কৃষক লীগের নেতা মির শহীদ মন্ডলের রাজনৈতিক সফল কর্মকা- তুলে ধরে ছাপানো হ্যান্ডবিল নিয়ে মানুষের দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন। এ ছাড়া মাঠে রয়েছেন পাঁচবিবি উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবু বকর সিদ্দিক এবং গত উপজেলা নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে পরাজিত প্রার্থী আবু সাঈদ আল মাহবুব চন্দন। তারা সম্প্রতি গণসংযোগ শুরু করেন।

আক্কেলপুর

চেয়ারম্যান প্রার্থী হিসেবে বিভিন্ন সভা-সমাবেশে ঘোষণা দিয়ে মাঠে গণসংযোগ করছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোকছেদ আলী মাস্টার। সাধারণ সম্পাদক ও আক্কেলপুর পৌর মেয়র অবসর চৌধুরী এরই মধ্যে মোকছেদ আলী মাস্টারকে দলীয় প্রার্থী ঘোষণা দিয়ে প্রচারণা চালাচ্ছেন। তবে দলের একটি অংশের দাবি, দল থেকে এ ধরনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি। উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা আব্দুস সালাম আকন্দও দলীয় মনোনয়ন পাওয়ার আশায় গণসংযোগ করছেন।

কালাই

পরপর দুবারের নির্বাচিত চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মিনফুজুর রহমান মিলন এবারও দলের মনোনয়ন চাইবেন। এ ছাড়া জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য ও মাত্রাই ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আ ন ম শওকত হাবিব লজিক, কালাই উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তৌফিকুল ইসলাম তালুকদারও চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন করার জন্য গণসংযোগ করছেন।

ক্ষেতলাল

জেলার অন্য চার উপজেলা থেকে ক্ষেতলালে একটু ভিন্ন চিত্র। সম্ভাব্য উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থী হিসেবে আওয়ামী লীগের চার নেতা মাঠে নেমেছেন বেশ জোরেশোরে। সাবেক চেয়ারম্যান তাইফুল ইসলাম তালুকদার, উপজেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আব্দুল মজিদ মোল্লা, ক্ষেতলাল উপজেলা যুবলীগের সভাপতি ও উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান মোস্তাকিম মন্ডল, পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি বিশিষ্ট ব্যবসায়ী দুলাল মিয়া মনোনয়ন পেতে মরিয়া। মোটরসাইকেল শোডাউন থেকে শুরু করে প্রতিদিন বিভিন্ন গ্রাম ও উপজেলার গুরুত্বপূর্ণ বাজারগুলো চষে বেড়াচ্ছেন তারা। পোস্টার আর বিলবোর্ডে ছেয়ে ফেলা হয়েছে উপজেলার লোকালয়। প্রার্থীদের মধ্যে দুলাল মিয়া প্রতিদিন ৫০-৬০টি মোটরসাইকেল নিয়ে গণসংযোগ করছেন উপজেলার বিভিন্ন বাজারে।

দলের প্রার্থী মনোনয়নের বিষয়ে জেলা আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক রতন কুমার খাঁ বলেন, ‘আওয়ামী লীগ নির্বাচনমুখী ও জনপ্রিয় একটি দল। টানা তৃতীয়বারের মতো সরকার গঠনের মধ্য দিয়ে সেটা প্রমাণিত হয়েছে। দলে নেতার সংখ্যাও অনেক বেশি। উপজেলা নির্বাচন ঘিরে দলের নেতাকর্মীরা বেশ উজ্জীবিত। প্রতিটি উপজেলায় একাধিক নেতা গণসংযোগ করছেন। দলীয় শৃঙ্খলা মেনে জনপ্রিয়তার মাপকাঠিতে যোগ্যরাই মনোনয়ন পাবেন।’

সংসদ নির্বাচনের পর এখন পর্যন্ত পাঁচ উপজেলায় বিএনপির কোনো নেতাকে মাঠে তেমন দেখা যাচ্ছে না। তারা সংসদ নির্বাচনের মতো উপজেলা নির্বাচন নিয়েও শঙ্কিত বলে জানান স্থানীয় নেতারা। তা ছাড়া বৃহস্পতিবার দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর জানিয়েছেন, দল উপজেলা নির্বাচনে অংশ না নেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিএনপির মাঠপর্যায়ের কয়েকজন নেতা বলেন, জেলায় বিএনপি তথা ২০ দলীয় জোট জনপ্রিয়।

গত উপজেলা নির্বাচনে জেলার পাঁচটি উপজেলার মধ্যে আওয়ামী লীগ মাত্র একটিতে জয়ী হয়। তাদের দাবি, সদ্য সমাপ্ত সংসদ নির্বাচনে ভোটের নামে প্রহসন করে গণতন্ত্রকে হত্যা করা হয়েছে। দলীয় সরকারের অধীনে যে নিরপেক্ষ নির্বাচন সম্ভব নয়, তার জ্বলন্ত উদাহরণ। এজন্য তারা শঙ্কিত আগামী উপজেলা নির্বাচন নিয়েও। দল অংশ নিলে আর নিরপেক্ষ নির্বাচন হলে জেলার ৫টি উপজেলায় বিএনপির প্রার্থী জয়ী হতো বলে তারা মনে করেন।

জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট নাফিজুর রহমান পলাশ বলেন, ‘সংসদ নির্বাচনে প্রকাশ্যে ভোট কেটে বাক্স ভরা হয়েছে। দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন যে নিরপেক্ষ হয় না, সেটা প্রমাণিত হলো। তাতে উপজেলা নির্বাচনে অংশ নেব কীভাবে!’

(ঢাকাটাইমস/২৬জানুয়ারি/মোআ)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :