গোদাগাড়ী হাসপাতালে আগের অনিয়ম

রিমন রহমান, রাজশাহী
 | প্রকাশিত : ২৮ জানুয়ারি ২০১৯, ০৮:৫২

দুদকের অভিযানের পরদিন রাজশাহীর গোদাগাড়ী হাসপাতালের অনুপস্থিতি চিকিৎসকরা কাজে ফিরলেও এখন এক সপ্তাহ যেতে না যেতেই আবার আগের অবস্থায় ফিরে গেছে চিকিৎসালয়টি।

হাসপাতালটিতে রোগীদের সেবা নিশ্চিত করতে চিকিৎসকদের জন্য কোয়ার্টার তৈরি করে দিয়েছে সরকার। কিন্তু ভেতরে রঙ চটে গেছে- এই বিষয়টিকে অযুহাত দেখিয়ে চিকিৎসকরা সেখানে থাকতে চান না। ফলে বিকাল বা রাতে হাসপাতালটি চিকিৎসক শূন্য থাকছে।

রাজশাহী জেলা সদর থেকে প্রায় ৩০ কিলোমিটার পশ্চিমে গোদাগাড়ী উপজেলা সদরের বিশেষায়িত এই হাসপাতালটিতে গত ২১ জানুয়ারি অভিযান চালায় দুদক। সেদিন হাসপাতালের প্রধান কর্তা ওয়াহিদা খাতুনই হাসপাতালে ছিলেন না।

তবে অভিযানের পরদিন দৃশ্য পাল্টায়। অনুপস্থিত দুই চিকিৎসক কাজে ফেরেন। রাতে পালা করে একজন দায়িত্ব পালন করবেন বলে সিদ্ধান্ত হয়।

কিন্তু কথা রাখেননি ডাক্তাররা। তারা দিনে বহির্বিভাগে রোগী নিয়ে ব্যস্ত থাকলেও রাতে এখন চিকিৎসকের দেখা পান না রোগীরা। তখন রোগীদের ভরসা নার্স এবং উপ-সহকারী মেডিকেল অফিসাররা। নতুন রোগী ভর্তি হতে এলে তারাই প্রাথমিক চিকিৎসা দেন। আর রোগীর অবস্থার খুব বেশি অবনতি হলে পাঠিয়ে দেওয়া হয় রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে।

হাসপাতালটির স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ওয়াহিদা খাতুন ছাড়াও আবাসিক চিকিৎসক হিসেবে কর্মরত আছেন আরও তিনজন। তারা হলেন শওকত আলী, তৌফিক রেজা ও নাজমুল কবীর। এদের মধ্যে নাজমুলকে এই হাসপাতালে পাঠানো হয় অভিযানের পরদিন। তবে এই চারজন চিকিৎসকের একজনও কোয়ার্টারে থাকেন না।

শওকত আলীর বাড়ি গোদাগাড়ী উপজেলার সিঅ্যান্ডবি এলাকায়। সেখান থেকেই তিনি হাসপাতালে যাতায়াত করেন। অন্য তিনজন থাকেন রাজশাহী শহরে। তারা সবাই সকাল সাড়ে ৮টা থেকে দুপুর আড়াইটা পর্যন্ত হাসপাতালের বহির্বিভাগে রোগী দেখে বাড়ি চলে যান।

স্থানীয়রা জানান, দুদকের অভিযানের আগে হাসপাতালটিতে দিনেও চিকিৎসক পাওয়া যেত না। এখন দিনে পাওয়া যায়। কিন্তু রাতের অবস্থা আগের মতোই। তাই রোগীরাও তেমন ভর্তি থাকতে চান না।

গতকাল দুপুরে হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, নারী ও পুরুষের দুটি ওয়ার্ডে ৬-৭ জন রোগী। এদের একজন উপজেলার দ্বিগ্রামের বাসিন্দা মহিরুদ্দিন। তিনি জানান, চার দিন ধরে ভর্তি থাকলেও রাতে চিকিৎসকের দেখা পাননি। শুধু সকালে একজন চিকিৎসক গিয়ে তাকে দেখে আসেন।

হাসপাতালটির কোয়ার্টারের সামনে গিয়ে দেখা যায়, সেটি তালাবদ্ধ। তাই ভেতরের অবস্থা দেখা যায়নি। তবে হাসপাতালের একজন কর্মচারী জানান, ভেতরে সব ঠিকঠাক আছে। শুধু কিছু জায়গার রং চটেছে। এই অযুহাতেই চিকিৎসকরা এখানে থাকতে চান না।

বিকাল ৩টার সময় হাসপাতালের স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ওয়াহিদা খাতুনকে ফোন করা হয়। ডা. জানান, তিনি গাড়িতে। হাসপাতাল থেকে বাড়ি যাচ্ছেন।

বলেন, ‘কোয়ার্টার থাকার অনুপযোগী। সে জন্য কেউ থাকেন না। কিছু সংস্কার কাজ করা হলে কোয়ার্টারে থাকা যাবে।’

জানতে চাইলে রাজশাহীর সিভিল সার্জন সঞ্জিত কুমার সাহা বলেন, ‘বিষয়টি আমি শুনেছি। বেশি কিছু না, অল্প কিছু টাকা খরচ করে প্লাস্টার, রং করে দিলেই চিকিৎসকরা থাকতে পারবেন।’

‘এটি করে দেওয়ার জন্য আমি স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরকে জানিয়েছি। আর যতদিন এটা না হচ্ছে ততদিন প্রয়োজনে আশপাশে বাসাভাড়া করে থাকার জন্য চিকিৎসকদের নির্দেশ দিয়েছি। রাতে চিকিৎসক না থাকলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :