২৯ বছর ছাত্র সংসদ নেই কারমাইকেলে

রফিকুল ইসলাম রফিক, রংপুর
 | প্রকাশিত : ২৮ জানুয়ারি ২০১৯, ০৮:৫৬

উত্তরবঙ্গে উচ্চশিক্ষার একসময়ের প্রাণকেন্দ্র ঐতিহ্যবাহী রংপুর কারমাইকেল কলেজে ছাত্র সংসদ নেই প্রায় ২৯ বছর ধরে। ফলে সঠিক নেতৃত্ব থেকে বঞ্চিত রাজনৈতিক দল আর শিক্ষার্থীরা বঞ্চিত হচ্ছেন তাদের অধিকার থেকে। তবে ছাত্র সংসদের নামে ফি দিয়ে যাচ্ছেন শিক্ষার্থীরা, যার দুই কোটি টাকা এখন কলেজ ফান্ডে আছে বলে দাবি কলেজ প্রশাসনের।

কর্তৃপক্ষ বলছে, উত্তরের অক্সফোর্ড খ্যাত কারমাইকেল কলেজে উচ্চমাধ্যমিক, সম্মান, পাসকোর্স ও স্নাতকোত্তর পর্যায়ে ২৫ হাজারের বেশি শিক্ষার্থী বিভিন্ন বিষয়ে অধ্যয়ন করছেন।

১৯৯০ সালে শেষবারের মতো ছাত্র সংসদ নির্বাচন হয়। মেয়াদ শেষে ভেঙে দেওয়ার পর আর নির্বাচন হয়নি। তবে কী কারণে নির্বাচন দেওয়া সম্ভব হয়নি, এর সঠিক কোনো কারণ কেউই বলতে পারেননি।

তবে অনেকের অভিযোগ, ছাত্র সংসদ হলে অনেক বিবাহিত ও অছাত্র নেতার দাপট ক্যাম্পাসে থাকবে না। তাই ছাত্র সংসদ কৌশলে হতে দেওয়া হয় না।

কলেজের বাংলা বিভাগের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র আবু রায়হান শাকিল বলেন, ‘ভর্তি থেকে শুরু করে ফরম পূরণ, কলেজের বিভিন্ন অকেশনে আমরা নানা হয়রানির মুখে পড়ছি। ছাত্র সংসদ থাকলে এটা হতো না। আমার নেতারা থাকতেন, সংসদ থাকত, সেখানেই সব সমস্যার সমাধান হতো।’

রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের চতুর্থ বর্ষের ছাত্রী মেহের নিগার চম্পা বলেন, ‘ছাত্র সংসদের মূল উদ্দেশ্য হলো নেতৃত্বের বিকাশ, ছাত্রদের অধিকার নিয়ে কথা বলা। কিন্তু এখন ছাত্রদের অধিকার নিয়ে ক্যাম্পাসে কথা বলা যায় না। কোনো না কোনো রাজনৈতিক দলের ছাত্র সংগঠনের নেতা-কর্মীরা সাধারণ ছাত্রদের ওপর চড়াও হন, মারধর করেন। এতে গুণী নেতৃত্বের বিকাশ পাওয়ার মতো শিক্ষিত নেতা তৈরি হচ্ছে না। আর ছাত্রদের অধিকার নিয়েও কথা বলার কেউ থাকছে না। আমরা চাই দ্রুত ছাত্র সংসদ নির্বাচন।’

দর্শন বিভাগের ছাত্র নাইম বলেন, ‘ছাত্র সংসদের মধ্য দিয়ে ছাত্র-শিক্ষকের মধ্যে সম্পর্ক উন্নয়ন এবং কলেজে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া বজায় রাখার ব্যবস্থা করা হোক। সেটা যেন দ্রুত হয়, আবার ঝুলে না যায়, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে বর্তমান ছাত্রনেতাদেরই।’

কারমাইকেল কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি সাইদুজ্জামান সিজার বলেন, ‘আমরা কলেজ প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলেছি, তারা ছাত্র সংসদ নির্বাচনের বিষয়ে পদক্ষেপ নেবেন বলে জানিয়েছেন। আমরা আশা করছি, দ্রুত যেন নির্বাচন দেওয়া হয়।’

কারমাইকেল কলেজ ছাত্রদলের সভাপতি মো. রবিউল ইসলাম বলেন, ‘এর আগে আমরা কলেজ প্রশাসনকে জানিয়েছি। তারা বলেছেন, জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর ছাত্র সংসদ নির্বাচন দেওয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত হবে। এখন অপেক্ষার পালা। আশা করছি নির্বাচন হবে এবং সব ছাত্র সংগঠনের সহাবস্থান নিশ্চিত হবে।’

১৯৯০ সালের শেষ ছাত্র সংসদের জিএস মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক শহীদুল ইসলাম মিজু বলেন, ‘কলেজ কর্তৃপক্ষকে ছাত্রসমাজের চাহিদার গুরুত্ব দিতে হবে। ছাত্র সংসদ না থাকায় নতুন নেতৃত্ব সৃষ্টি হচ্ছে না। দীর্ঘদিন ধরে কলেজ কর্তৃপক্ষ এ ব্যাপারে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ না করায় আমরা হতাশ।’

জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি মেহেদী হাসান সিদ্দিকী রনি বলেন, শিক্ষাঙ্গন থেকে জাতীয় পর্যায়ে নেতৃত্ব দেবেন এমন রাজনৈতিক নেতা উঠে আসেন ছাত্র সংসদ থেকেই। ছাত্ররাজনীতির সূতিকাগার হিসেবে পরিচিত কারমাইকেল কলেজে ছাত্র সংসদ নির্বাচন হওয়া জরুরি।’

কলেজের অধ্যক্ষ ড. শেখ আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘ছাত্র সংসদ নির্বাচন নিয়ে এখন পর্যন্ত লিখিত কোনো আবেদন আমার কাছে আসেনি। আবেদন পেলে সংশ্লিষ্ট সবার সঙ্গে কথা বলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :