জালঘরে বিষমুক্ত সবজি

রফিকুল ইসলাম রফিক, চুয়াডাঙ্গা
 | প্রকাশিত : ২৮ জানুয়ারি ২০১৯, ০৯:০২

দূর থেকে দেখে মনে হবে সবুজ জমিতে বড়সড় একচালা ঘর করেছে কেউ। হয়তো সেখানে বসবাস করে কোনো পরিবার। কাছে গিয়ে ভুল ভাঙে। ওপরে ও চারপাশে জাল (নেট) দিয়ে ঘেরা জমি। স্থানীয় ব্যক্তিরা বলেন নেটঘর (জালঘর)। তার ভেতরে হচ্ছে বিষমুক্ত সবজিচাষ।

কোনো ধরনের রাসায়নিক ছাড়া বাজারে এখন সবজি পাওয়া দুষ্কর। চাষাবাদের সময় পোকার আক্রমণ ঠেকাতে জমিতে ব্যবহার করা হয় কীটনাশক, এরপর বাজারে সবজি সতেজ রাখতে ব্যবহৃত হয় নানা রাসায়নিক। তাই বিষমুক্ত সতেজ সবজি এখন বাজারে দুষ্প্রাপ্য।

এ থেকে মুক্তি দিতে এই জালঘরের উদ্যোগ। পুরোপুরি বিষমুক্ত সবজিচাষ শুরু হয়েছে সেখানে। বেগুন, বাঁধাকপি, টমেটো প্রভৃতি সবজির চাষ হচ্ছে কোনো ধরনের কীটনাশক প্রয়োগ ছাড়াই।

কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের সহযোগিতায় চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার সুবদিয়া ও বোয়ালিয়া এবং আলমডাঙ্গা উপজেলার রোয়াকুলি গ্রামে পরীক্ষামূলক এই চাষ করা হয়েছে। এতে সফলতাও এসেছে বলে জানান কৃষিবিদেরা।

কৃষকেরা জানান, বিষমুক্ত আবাদের জন্য পুরো খেত থাকছে জাল দিয়ে ঘেরা। পোকামাকড় যেতে পারছে না সেখানে। বিষ দেওয়ারও প্রয়োজন হচ্ছে না। চারা রোপণ থেকে শুরু করে ফলন তোলা পর্যন্ত নেট দিয়ে ঘিরে চাষাবাদের কাজ করা হয়।

সদর উপজেলার সুবদিয়া গ্রামের কৃষক আজিজুল হক এই প্রক্রিয়ায় পুরোপুরি বিষমুক্ত বেগুনের চাষ করেছেন। ফলনও হয়েছে ভালো। এতে উৎসাহিত হয়েছেন গ্রামের অন্য কৃষকেরা। তারা বলছেন, আগামী দিনে তারাও বিষমুক্ত বেগুনের আবাদ করবেন।

আন্তর্জাতিক সার উন্নয়ন কেন্দ্র (আইএফডিসি) ও ওয়ালমার্ট ফাউন্ডেশনের সবজি উৎপাদনশীলতা উন্নয়ন ত্বরান্বিতকরণ (এভিপিআই) প্রকল্পের আওতায় জালঘেরা ঘরে সবজি উৎপাদনের পদ্ধতি কৃষকদের শেখানো হয়েছে।

কৃষকদের জন্য মডেল প্রকল্প হিসেবে উপজেলার সুবদিয়া গ্রামের মাঠে জালঘেরা ও জাল ছাড়া দুটি খেত তৈরি করা হয়। একই সঙ্গে বেগুনের আবাদ করা হয়। দুটি খেত থেকে বেগুন তুলে দেখা যায়, জালঘেরা ঘরে বেগুন হয়েছে তরতাজা ও বড়। কোনো কীটনাশক দিতে হয়নি। সেচও কম লেগেছে। অন্যদিকে, জালবিহীন খেতে বিষ দিতে হয়েছে। তাতে সেচের খরচও হয় বেশি।

কিন্তু জালের খরচ যে বাড়তি? অনেকের এমন প্রশ্ন। কৃষক আজিজুল হক বলেন, ‘জালঘরে চাষে জাল কেনা বাড়তি খরচ, তা ঠিক নয়। একই জাল দুই-তিন বছর ব্যবহার করা যায়। আর যেহেতু জালঘেরা খেতে কীটনাশকের খরচ লাগে না, তাই তুলনামূলকভাবে খরচ কম হয়।’

একই পদ্ধতিতে সদর উপজেলার বোয়ালিয়া গ্রামে বাঁধাকপি এবং আলমডাঙ্গা উপজেলার রোয়াকুলি গ্রামে বেগুনের চাষ করা হয়েছে।

আয়োজকেরা জানান, এখন চুয়াডাঙ্গা জেলার মাঠে মাঠে শীতের সবজি। এই পদ্ধতিতে অন্যান্য সবজিও চাষাবাদ করা যাবে। বিষমুক্ত ও তরতাজা সবজি উৎপাদনের লক্ষ্যে নেট পদ্ধতি দুই-তিন বছর আগে থেকে কৃষকদের হাতে-কলমে দেখানো হয়েছে। ইতিমধ্যে এই উদ্যোগ কৃষকদের আকৃৃষ্ট করেছে।

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

বাংলাদেশ এর সর্বশেষ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :