রূপগঞ্জে অনাবাদী ৭০০ হেক্টর জমি

আতাউর রহমান সানী, রূপগঞ্জ প্রতিবেদক
 | প্রকাশিত : ২৯ জানুয়ারি ২০১৯, ০৮:৫৪

চলতি ইরি-বোরো মৌসুমে নারায়ণগঞ্জ-নরসিংদী ইরিগেশন প্রকল্পের বানিয়াদি পাম্প হাউসের আওতাধীন প্রায় ৭০০ হেক্টর জমি অনাবাদি হয়ে পড়েছে। প্রকল্পের প্রধান খাল ও ক্যানেল সংস্কার করার কথা থাকলেও কাজ না করায় এসব জমি অনাবাদি হয়ে পড়েছে বলে অভিযোগ করেছেন অনেক কৃষক।

উপজেলা কৃষি অফিসের দেওয়া তথ্যমতে, নারায়ণগঞ্জ-নরসিংদী ইরিগেশন প্রকল্পের রূপগঞ্জের বানিয়াদী পাম্প হাউজের আওতাধীন ২০৪০ হেক্টর জমি রয়েছে। এর মধ্যে ১২০০ হেক্টর জমি সেচযোগ্য। কৃষকরা বলছেন, মৌসুম চলে যাচ্ছে। সেচের অভাবে এবার ধানের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হবে না।

স্থানীয় বেশ কয়েকজন কৃষক জানান, চলতি মৌসুমে ১২০০ হেক্টর জমির মধ্যে মাত্র ৪০০ হেক্টরের মতো জমি চাষাবাদ হয়েছে। কারণ হিসেবে কৃষকরা অভিযোগ করে বলেন, নভেম্বর-ডিসেম্বর মাসে সেচ পানি ছাড়ার উপযুক্ত সময় হলেও এবার পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা অনেক দেরি করে সেচ পানি ছেড়েছেন। তাও আবার একটু একটু করে। প্রধান সেচ ক্যানেলের অবস্থা খারাপ থাকায় পানি প্রবাহ ব্যাহত হচ্ছে। ক্যানেল পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করার জন্য ১০ লাখ টাকা বরাদ্দ দেয়া হলেও কোনো কাজ করা হয়নি বলে অভিযোগ করেন তারা।

সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, বানিয়াদী পাম্প হাউসের আওতাধীন মুড়াপাড়া, হাউলিপাড়া, বানিয়াদী, হাটাবো, এখনো শত শত হেক্টর জমি অনাবাদি পড়ে আছে। পানির অভাবে অনেক জমি ফেটে চৌচির হয়ে রয়েছে। প্রায় ৪০০ হেক্টর জমি চাষাবাদ হলেও এসব জমির মালিকরা দ্বিগুণ টাকা খরচ করে সেচ পানির ব্যবস্থা করেছে।

কথা হয় হাটাবো এলাকার কৃষক মকবুল মিয়ার সঙ্গে। তিনি এবার প্রায় পাঁচ বিঘা জমিতে বোরো চাষের প্রস্তুতি নিয়েছেন। কিন্তু সেচের পানির অভাবে তিনি এখনো চাষবাদ শুরু করতে পারেননি। ফলে এবার ধান ঘরে তুলতে পারবেন কিনা সেটা নিয়ে চিন্তিত তিনি।

মকবুল হোসেন বলেন, ‘বাজানরে এইবার বুঝি আর বাছুমনা (বাঁচবোনা)। পেরাই (প্রায়) বছর ঘরের ভাত খাই। পানির অভাবে এইবার অহনও ক্ষেত লাগাইবার পারলাম না। মনে অয় না এইবার ঘরে ধান পামু। পানি আহনের ডেরেনগুইলা (ক্যানেল) ভাঙ্গাচোরা। সুইচগেটের (পাউবো) লোকজন ঠিকমতোন পানি ছাড়েনা।’

মিয়াবাড়ি এলাকার নাঈম মিয়া প্রতি বছর তিন বিঘা জমি বর্গা চাষ করেন। এবার তিনি এক বিঘা জমিও চাষবাদ করতে পারেননি। নাঈম মিয়া বলেন, ‘ভাই কর্মকর্তারা আর ঠিকাদার মিল্লা সব গিল্লা খাইছে। যার কারণে ঠিকমতন পানি পাই না। ঘুইরা দেখেন হাজার হাজার বিঘা জমি চাষ করে নাই কৃষকরা।’

জানতে চাইলে পাউবোর ঠিকাদার মেসার্স আসিফ এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী আরিফ হাসানের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি।

বানিয়াদী ব্লকে দায়িত্বরত কৃষি বিভাগের উপ-সহকারী কর্মকর্তা খাইরুন নাহার বলেন, পানি যথাসময়ে না ছাড়ার কারণে জমি অনাবাদি রয়ে গেছে। তবে ঠিক কি পরিমাণ জমি অনাবাদি তা তাদের রেকর্ডে নেই। তিনি আরও বলেন, পানি প্রবাহের খালগুলো ব্লক হয়ে পড়েছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী নজরুল ইসলাম বলেন, নানা জটিলতার কারণে পানি ছাড়তে একটু সমস্যা দেখা দিয়েছে। তবে এতে কোনো সমস্যা নেই। ফলন কিছুটা কম হতে পারে। ক্যানেল বরাদ্দের টাকার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বিষয়টি অস্বীকার করেন।

উপজেলা কৃষি অফিসার তাজুল ইসলাম বলেন, কত বিঘা জমি অনাবাদি তা জানা নেই। তবে পানি দেরি করে ছাড়ার কারণে এবার ফসল উৎপাদন কম হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

বাংলাদেশ এর সর্বশেষ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :