রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা বড় কারণ: টিআইবি
মুদ্রা পাচার বেড়েছে লজিক্যালি: পরিকল্পনামন্ত্রী
বাংলাদেশ থেকে মুদ্রা পাচার আগের চেয়ে বেড়েছে বলে তথ্য দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটনভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান গ্লোবাল ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেগ্রিটি (জিএফআই)। এর কারণ কী। পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান মনে করেন মুদ্রা পাচারের এই বৃদ্ধি আসলে ‘লজিক্যালি’। তবে এ বিষয়ে সরকারের নজর আছে।
আর ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামানের মতে, দেশের সাম্প্রতিক রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা ও অনিশ্চয়তা টাকা পাচারের অন্যতম কারণ।
যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটনভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান জিএফআইয়ের তথ্যমতে, ২০১৫ সালে বাংলাদেশ থেকে প্রায় ৫০ হাজার কোটি টাকা পাচার হয়েছে।
মঙ্গলবার একনেক বৈঠকের পরে পরিকল্পনামন্ত্রীর কাছে সাংবাদিকরা জানতে চান জিএফআইয়ের প্রতিবেদন নিয়ে সরকারের ভাবনা সম্পর্কে।
জবাবে পরিকল্পনামন্ত্রী সরকারের নয়, নিজের ভাবনা সম্পর্কে বক্তব্য দিয়ে বলেন, ‘আমি এটা (মুদ্রা পাচার) অ্যাপ্রিশিয়েট করি না। আবার টাকা পাচারের ঘটনা বিশ্বের সব দেশে হয়, এটাও বাস্তবতা।’
এম এ মান্নান বলেন, ‘যেহেতু আমাদের প্রবৃদ্ধি বেড়েছে, উৎপাদন বৃদ্ধি পেয়েছে, টাকা অনেক বেশি আগের তুলনায়, সুতরাং টাকা পাচার বৃদ্ধি পেয়েছে লজিক্যালি আমার মনে হয়।’
এ ব্যাপারে তাদের নজর আছে বলে জানান মন্ত্রী। কর্তৃপক্ষ এ বিষয় দেখছে। মন্ত্রী বলেন, ‘এ বিষয়ে ফিনান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্ট ইউনিট কাজ করছে। এ ব্যাপারে বিভিন্ন নির্দেশনা আছে। এটা নিয়ে আমরা চিন্তা করছি। নানাভাবে আমরা এটা নিয়ে কাজ করছি।’
মঙ্গলবারই আন্তর্জাতিক দুর্নীতিবিরোধী সংস্থা টিআইবি দুর্নীতিসংক্রান্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করে ধানমন্ডির মাইডাস সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে। সেখানে মুদ্রা পাচারের বিষয়টিও উঠে আসে সাংবাদিকদের কাছ থেকে।
টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামা সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা ও রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা টাকা পাচারের অন্যতম কারণ হিসেবে ধারণা করা হয়। আমরা মনে করি বাংলাদেশে এটি অন্যতম কারণ। তবে এটিই একমাত্র কারণ তা নয়। আরও অনেক কারণ আছে তার পেছনে।’
মুদ্রা পাচার যে অপরাধ সেটি প্রমাণ করার একটি ঘাটতি দেশে লক্ষ করা যায় বলে জানান ড. ইফতেখার। এই অপরাধ করলে শাস্তি পেতে হয়, এ বিষয়টিও জোরালো নয় দেশে। তিনি বলেন, ‘মুদ্রা পাচার নিয়ন্ত্রণের জন্য যে পদক্ষেপগুলো আছে, তার ঘাটতির কারণে এটা ক্রমবর্ধমান হারে বাড়তে দেখছি।’
টিআইবির নির্বাহী পরিচালক মনে করেন, ‘মুদ্রা পাচার নিয়ন্ত্রণ করতে সংশ্লিষ্ট আন্তর্জাতিক সহযোগিতা প্রয়োজন। জাতিসংঘের আন্তর্জাতিক দুর্নীতিবিরোধী কনভেনশনের মাধ্যমে যে সুযোগটি তৈরি হয়েছে, তার মাধ্যমে যদি সহযোগিতা গঠন করা হয় তাহলে অবশ্যই পাচারকৃত অর্থ ফেরত আনা ও মুদ্রা পাচার নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। যারা পাচারে জড়িত তাদেরও বিচারের আওতায় আনা সম্ভব।’
পাচারকৃত অর্থ ফেরত আনার নজির দেশে আছে। সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার ছেলে আরাফাত রহমান কোকোর সিঙ্গাপুরে পাচার করা অর্থ দেশে ফেরত আনে আওয়ামী লীগের গত আমলের সরকার।
ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘পাচারকৃত অর্থ ফেরত আনার দৃষ্টান্ত বাংলাদেশে শুধু একটি ক্ষেত্রে হয়েছে। একটি যেহেতু হয়েছে, প্রক্রিয়াটি পরিষ্কার ও সুপ্রতিষ্ঠিত। অন্য ক্ষেত্রে কেন হবে না সেটা আমাদের কাছে বোধগম্য নয়।’
যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটনভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান জিএফআই গত সোমবার বৈশ্বিকভাবে ১৪৮টি দেশের অর্থ পাচারের তথ্য প্রকাশ করে। তাতে দেখা যায়, বাংলাদেশ থেকে ২০১৫ সালে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের মাধ্যমে ৫৯০ কোটি ডলারের সমপরিমাণ অর্থ পাচার হয়েছে। বর্তমান বাজারদরে (৮৪ টাকা প্রতি ডলার হিসাবে) এই অর্থের পরিমাণ ৪৯ হাজার ৫৬০ কোটি টাকা।
(ঢাকাটাইমস/২৯জানুয়ারি/জেআর/মোআ)