যে হাসপাতাল নিজেই ‘রোগী’

জাহাঙ্গীর আলম ভূঁইয়া, সুনামগঞ্জ
 | প্রকাশিত : ৩১ জানুয়ারি ২০১৯, ০৮:৩৫

হাওরবেষ্টিত জেলা সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি ধুঁকছে নানা সমস্যায়। জনবল, অবকাঠামো, যন্ত্রপাতি এবং ব্যবস্থাপনাগত ত্রুটির কারণে হাসপাতালটি এখন নিজেই যেন রোগী হয়ে পড়েছে। প্রায় চার লাখ লোকের চিকিৎসার একমাত্র অবলম্বন স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি সচল করার দাবি হাওরপারের মানুষের।

হাসপাতাল-সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটিতে দীর্ঘদিন ধরেই বিশেষজ্ঞ ডাক্তারসহ বিভিন্ন পদের কর্মকর্তা-কর্মচারীর পদ শূন্য। ফলে চিকিৎসাসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে উপজেলার সাতটি ইউনিয়নের ২৫২টি গ্রামের চার লক্ষাধিক মানুষ। কর্মকর্তা ও ডাক্তাররা এখানে যোগদানের পর থেকেই বদলি হয়ে যাওয়ার তদবির শুরু করেন। এতে শূন্যতা পিছু ছাড়ে না হাসপাতালটির।

এখানে তিনটি জেনারেটর ১০ বছর ধরে নষ্ট হয়ে পড়ে আছে। বিদ্যুৎ চলে গেলে হাসপাতালের ওয়ার্ডে ভর্তি থাকা রোগীরা গরমে ছটফট করে। পাঁচ বছরের বেশি সময় ধরে ডেন্টাল, ল্যাব টেকনোলজিস্ট, রেডিওগ্রাফার পদগুলো শূন্য। ফলে কোনো পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা সম্ভব হয় না। এর জন্য যেতে হচ্ছে বাহিরে কোথাও। তিন বছরের বেশি সময় ধরে এক্সরে মেশিন অকেজো। একটি নৌ-অ্যাম্বুলেন্স থাকলেও চালক না থাকায় কোনো কাজে আসছে না। চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীর প্রতিটি পদ শূন্য। ফলে পরিষ্কার, পরিচ্ছন্ন ও প্রশাসনিক কাজে দীর্ঘদিন ধরেই ব্যাঘাত সৃষ্টি হচ্ছে।

চতুর্থ শ্রেণি ও নার্স কোয়াটারগুলোর দরজা, জানালা, দেয়াল, পানির ট্যাংকি নষ্ট হয়ে পড়ে আছে দীর্ঘদিন ধরে। এদিকে নজর নেই কারও। এখানে যারা থাকেন তারা বারবার এ ব্যাপারে জানালেও কোনো প্রতিকার হচ্ছে না। এ ছাড়া হাসপাতালের মূল ভবনের কিছু অংশে ভাঙন দেখা দিয়েছে। অফিস কক্ষগুলো ব্যবহারের অযোগ্য হয়ে পড়েছে।

চিকিৎসা নিতে আসা রোগীরা জানান, হাসপাতালে ভালো কোনো বিশেষজ্ঞ ডাক্তার নেই। গাইনি বিশেষজ্ঞ নেই হাসপাতালটির শুরু থেকে। এতে নারী রোগীরা পড়েন বিপাকে। এ ছাড়া দাঁতের ডাক্তার, এক্সরেসহ বিভিন্ন পদে শূন্যতার কারণে বাইরে গিয়ে তাদের চিকিৎসা করাতে হয়।

উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স কর্মকর্তা ইকবাল হোসেন ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘আমরা রোগীদের সর্বোচ্চ সেবা দেওয়ার চেষ্টা করি। শূন্যপদগুলো পূরণের জন্য কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন। জনবল নিয়োগ হলে কোনো সমস্যাই থাকবে না। এ ব্যাপারে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জানানো হয়েছে।’

কর্মকর্তা আরও জানান, চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী নিয়োগ সরকারিভাবে না দিয়ে আউট সোর্সিংয়ের মাধ্যমে নেওয়া হবে। এ ছাড়া অন্য পদে নিয়োগের কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। হাসপাতালে জটিল কোনো রোগী এলে জরুরি প্রয়োজনে জেলা সদরে পাঠাতে একটি অ্যাম্বুলেন্সের প্রয়োজন বলে জানান তিনি।

তাহিরপুর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান কামরুজ্জামান কামরুল ঢাকা টাইমসকে জানান, হাসপাতালের চিকিৎসার মান বাড়ানোর ব্যাপারে তিনিও চেষ্টা করছেন। এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিতে তিনি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানান।

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :